ছবি: পিটিআই।
‘আজ শিবরাত্রি। অভিশাপ দিলেও আশীর্বাদ হয়ে যায়।’
‘দিল কা রাস্তা খোলিয়ে, দিমাগ কা রাস্তা খুলেগা’।
৬৯ দিন ধরে জমতে থাকা শাহিন বাগের ক্ষোভটাই সঞ্জয় হেগড়ে বোধহয় বার করে দিতে চাইছিলেন।
কিন্তু অভিযোগ যে সরাসরি অমিত শাহের নামে উঠবে, তা বোধহয় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী হেগড়েও বুঝতে পারেননি। এক প্রতিবাদী মহিলা সটান বললেন, ‘‘অমিত শাহ কেন আমাদের জন্য মনে শত্রুতা নিয়ে বসে রয়েছেন? ওঁর নির্দেশে কেন উত্তরপ্রদেশের পুলিশ, দিল্লির পুলিশ শাহিন বাগের বদনাম করছে? আমরা যে রাস্তা আটকাইনি, সে রাস্তা পুলিশ কেন আটকে রেখে আমাদের বদনাম করছে?’’
৬৯ দিন ধরে শাহিন বাগের আশেপাশের সব রাস্তাই বন্ধ। উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থেকে হরিয়ানার ফরিদাবাদ পর্যন্ত সড়কে যানজট নিয়ে দিল্লির ক্ষোভ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিজেপি নেতারা। সেই অবরোধ তোলার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হওয়ায় শীর্ষ আদালত মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করেছে।
আরও পড়ুন: ওয়াইসির মঞ্চে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানে বিতর্ক
আজ সকালে নয়ডার মহামায়া ফ্লাইওভার থেকে ফরিদাবাদ পর্যন্ত সেই রাস্তা ৪৫ মিনিটের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এ নিয়ে খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রশ্ন ওঠে, এত দিন এই রাস্তা বন্ধ ছিল কেন? পুলিশ পরে জানায়, নয়ডা ফিল্ম সিটির দিকে যানজট হওয়ায় বাইক ও ছোট গাড়ির জন্য অল্প সময়ের জন্য রাস্তা খোলা হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এত দিন রাস্তা বন্ধ ছিল কেন?
সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত দুই মধ্যস্থতাকারী হেগড়ে ও সাধনা রামচন্দ্রন শাহিন বাগে পৌঁছন। এই নিয়ে তৃতীয় দিন। সেখানেও এক মহিলা বলেন, ‘‘শাহিন বাগের আশেপাশে সমান্তরাল সব রাস্তা আটকে রেখে আমাদের বদনাম করা হচ্ছে। নয়ডা থেকে ফরিদাবাদ যাওয়ার রাস্তায় গিয়ে দেখলাম, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সাদা পোশাকে ব্যারিকেডের সামনে গাড়ি আটকাচ্ছে। বলছে, শাহিন বাগের লোকেরা রাস্তা অবরোধ করছে, যাওয়া যাবে না। অথচ আমরা ওই রাস্তা আটকাইনি। ওঁরা কেন বলছেন না যে অমিত শাহের নির্দেশে এই কাজ করছেন?’’ তার পরেই একজোটে ধ্বনি, ‘‘আমরা সবাই ভারতীয়। এটা মিনি পাকিস্তান নয়।’’
ডাকা হয় পুলিশ অফিসারদের। শাহিন বাগ থানার এসএইচও ব্যাখ্যা দেন, বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সমান্তরাল রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু রাস্তা শাহিন বাগের লোকেরা বন্ধ রেখেছেন। শাহিন বাগের মহিলারা আপত্তি তুলে জানান, সে সব রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স, স্কুলবাস যেতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই সব রাস্তা খুলে দিলে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবেন? এক মহিলা মাইক হাতে প্রশ্ন করেন, ‘‘জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার পড়ুয়ারা এসে আমাদের সিএএ, এনআরসি-র বিষয়ে বুঝিয়েছে। পুলিশ তাদের পেটাল। যে ওদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল, পুলিশ তাকে আটকাতে পারল না। তা হলে আমাদের নিরাপত্তা কী করে দেবে?’’ পুলিশ অফিসার নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে মহিলারা দাবি তোলেন, লিখিত ভাবে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। স্লোগান ওঠে, ‘দিল্লি পুলিশ পর ভরোসা নেহি।’
মধ্যস্থতাকারীরা আজ চেষ্টা করেছিলেন, বিক্ষোভকারীদের ছোট ছোট দলের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকে বসতে। কিন্তু শাহিন বাগের দাদিরা সাফ জানিয়ে দেন, সব কথাই প্রকাশ্যে হবে। আজ হেগড়ে, সাধনা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, প্রতিবাদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাস্তা অবরোধ চলতে পারে না। এক মহিলা তাঁকে পাল্টা বলেন, ‘‘রাস্তার কথা ভুলে যান। মুসলিমরা সিএএ-এনআরসি-র পরে কোথায় যাবে? মুসলিমরা কি নাগরিক নন? অসমে এনআরসি হয়ে কী হল? কত লোক ডিটেনশন ক্যাম্পে মারা যাচ্ছে? সরকার সুপ্রিম কোর্টে লিখিত জানাক, সিএএ-এনআরসি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আমরা উঠে যাব।’’
আগামী সোমবারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। হেগড়ে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে আপনাদের কথা জানিয়ে দেব। আমি সরকারে নেই। তাই আমি কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy