বারাণসীতে পৌঁছে পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হবে আসা করেছিলাম। কিন্তু প্রয়াগেরাজে কুম্ভের চাপে অনেকেই থাকার জায়গা না পেয়ে কিংবা হোটেল এবং তাঁবুগুলির অতিরিক্ত খরচের হাত থেকে বাঁচতে বারাণসীতে ভিড় জমিয়েছেন। ফলে বারাণসীর রাস্তাঘাটেও মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে।
শুক্রবার ফেরার তাড়াহুড়ো থাকবে এই ভেবে, গতকাল রাতে বারাণসীতে পৌঁছে, তখনই একবার বিশ্বনাথ মন্দির দর্শনের কথা ভেবেছিলাম। স্থানীয়দের থেকে খবর নিয়ে জানলাম, ৭-৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরেই মন্দির দর্শন সম্ভব। অগত্যা পিছিয়ে এলাম।
আমরা উত্তরপ্রদেশ ট্যুরিজ়মের আওতাধীন একটি হোটেলে রয়েছি। এটি বারাণসী ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের খুবই কাছে। সেখানে কলকাতার পাটুলি থেকে আসা রুবি দেবীর সঙ্গে পরিচয় হল। তিনি এসেছেন তাঁর স্বামীর সঙ্গে। হাওড়া থেকে বিভূতি এক্সপ্রেস ধরে রওনা দিয়েছিলেন প্রয়াগরাজের উদ্দেশে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কুম্ভে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পরে তাঁরা ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি নেমে পড়েন বারাণসী ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাঁরা আমাদেরই হোটেলে এসে ওঠেন। আপাতত কুম্ভ যাওয়ার আশা ত্যাগ করেছেন ওই দম্পতি। ভিড়ের কারণে বিশ্বনাথ মন্দিরেও যেতে পারেননি।
স্ত্রী ও দুই শিশুকে নিয়ে রাস্তায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল মহারাষ্ট্রের সাতারা থেকে আসা এক ভদ্রলোককে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের কাছে সাতারা ফিরে যাওয়ার ‘কনফার্মড’ টিকিট ছিল। কিন্তু ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই। ফলে টিকিট হাতে তাঁদের প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, ট্রেনে বেরিয়ে গিয়েছে। পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলেও, কোনও রকমের সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।
শুক্রবার সকালে দশাশ্বমেধ ঘাট, কাশী বিশ্বনাথের মতো ঘাটগুলির ঘুরে দেখার উদ্দেশে বেরিয়েছিলাম। অন্তত দেড় থেকে দু’কিলোমিটার আগে থেকে গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। এ দিনও বিশ্বনাথ মন্দির দর্শনের চেষ্টা করে জানতে পারলাম, কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরেই মন্দির দর্শন সম্ভব। তাই সে পথে না গিয়ে এক অটোচালকের সাহায্যে শেষ পর্যন্ত নতুন নমোঘাট ঘাটের উদ্দেশেই পা বাড়ালাম। নৌকাবিহারের সময় দেখলাম, নতুন বানানো বিশ্বনাথ করিডর ঘাটে লোকজন তেমন নেই। তবে মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে পুণ্যার্থীদের লাইন যে কোথায় গিয়ে থেমেছে, তা ঠাহর করা গেল না।
মাঘী পুর্ণিমার দিনে কুম্ভে অমৃত স্নান করতে আসার পরিকল্পনা ছিল অনেকেরই। কিন্তু মঙ্গলবার কুম্ভের বিপর্যয়ের পরে অনেকের মনেই আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে।
এ দিকে গাড়ি এবং অটো লাগামছাড়া ভাড়া চাইছে পর্যটকদের কাছে। আমাদের হোটেল থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য হাজার টাকা চাইলেন এক অটোচালক। কোথাও যাওয়ার জন্য যেখানে সকালে ভাড়া ছিল ৪০০ টাকা, বেলা বাড়তেই ভাড়া বেড়ে হাজার টাকা হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের তরফে বারাণসী, প্রয়াগরাজ শহরগুলিতে ঢোকা এবং বেরোনোর রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র পর্যটকেরাই যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এমনটা নয়, স্থানীয় লোকজনকেও শহরের বাইরে থেকে সেখানে পৌঁছতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। একই কারণে অনেক অটোচালকেরাও শহরের বাইরে যেতে চাইছেন না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)