দলীয় বৈঠকে একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটারের বিষয়টি নিয়ে দলকে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ দেখা গেল, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের একাধিক বিরোধী দল।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আজ কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালেন সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথম তৃণমূলের তোলা বিষয়টি কার্যত লুফে নিতে দেখা গেল কংগ্রেস নেতৃত্বকে। দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, এর ফলে এই অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্য ইন্ডিয়া মঞ্চের সমঝোতা ও কক্ষ সমন্বয় অত্যন্ত মসৃণ থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
অন্য দিকে, তৃণমূলের আনা সংসদীয় নোটিসে কংগ্রেসকে সঙ্গে পাওয়ার বিষয়টি আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকল। এর পাশাপাশি, বিজেডি-র রাজ্যসভার নেতা সস্মিত পাত্র তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার পরে আজ সংসদে বিষয়টি নিয়ে সব কাজ বন্ধ রেখে আলোচনার জন্য নোটিস জমা দিয়েছেন। কাল নির্বাচন কমিশনের দফতরে বিজেডি যাবে বিকেল সাড়ে ৩টেয়। ৫টায় যাবে তৃণমূল। এর মাঝে ৪টেয় কমিশনের কাছে যাবে বিজেপি।
লোকসভায় সোমবার ভুয়ো ভোটার তালিকা নিয়ে প্রথম সুর চড়ান তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত রায়। তাঁরা দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় ইচ্ছাকৃত ভাবে ভোটার তালিকায় গরমিল করা হচ্ছে। সৌগত কংগ্রেসকে বিষয়টির মধ্যে জড়িয়ে নিতে চেয়ে বলেন, “শুধুমাত্র বাংলা নয়, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রেও এই ঘটনা ঘটছে। আগামী বছর অসমে ভোট রয়েছে। আমাদের দাবি, গোটা তালিকা খতিয়ে দেখা হোক।” এর পরে তিনি একধাপ এগিয়ে বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাদের জানিয়েছে, তারা তিন মাসের মধ্যে তালিকা সংশোধন করবে। নতুন কমিশনার যিনি হয়েছেন, তিনি আবার অমিত শাহের সমবায় মন্ত্রকের সচিব ছিলেন। আমরা আশা করছি, তিনি ন্যায্য ভাবেই সব
উত্তর দেবেন!”
এই সময়ে কিছুটা হালকা চালে স্পিকার বলেন, “ভোটার তালিকা বানানো কি সরকারের কাজ?” রাহুল গান্ধী তখন উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও চিন্তা বা উদ্বেগ নেই। কিন্তু দেশ জুড়ে এই নিয়ে উদ্বেগ এবং প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্র এবং সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষার জন্য এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তাঁকে এ-ও বলতে শোনা যায়, “আমরা স্বীকার করি যে, ভোটার তালিকা সরকার তৈরি করে না। তবে এটি নিয়ে আলোচনা করা উচিত।” রাহুল পরে জানান, “আমার মনে হয় না স্পিকার এই নিয়ে কোনও আলোচনায় অনুমতি দেবেন।” রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে নিজের চেম্বারে ডেকে স্পিকার ওম বিড়লা আজ প্রায় চল্লিশ মিনিট একান্তে আলোচনা করেছেন।
রাজ্যসভাতেও মল্লিকার্জুন খড়্গে বিষয়টি নিয়ে সরব হতে চাইলে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁর আসনের কাছে চলে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। এর পর একমাত্র বাম দল বাদে সমস্ত বিরোধী সাংসদ কক্ষত্যাগ করেন। সে দলে ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীও।
অন্য দিকে, একটি পাল্টা ভাষ্য তুলে ধরতে চেয়ে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খান লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের জনচরিত্র বদলানোর অভিযোগে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁর কথায়, “সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল রাজনৈতিকবিষয় হারিয়ে, ভুয়ো ভোটারের চিহ্নিতকরণের কথা বলছে। অথচ গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া সীমান্ত এলাকাগুলিতে কী ভাবে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, কী ভাবে তাদের ভারতের ভোটার বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য, তা নিয়ে তৃণমূল তথা পশ্চিমবঙ্গসরকার নীরব!”
লোকসভায় কল্যাণ আবার বলেন, ‘‘আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটত না। গত কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ এই ভোটারেরা বাংলায় কোথা থেকে এলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)