লাগাতার বৃষ্টিতে জলের তলায় অর্ধেক অসম। এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। বিপন্ন প্রায় ৪৩ লক্ষ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে রেড অ্যালার্ট জারি করল আবহাওয়া দফতর। তবে এখনই পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা নেই , বরং আগামী ২৪ ঘণ্টায় অবিরাম বৃষ্টি চলবে এবং তাতে জলস্তর আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহেই ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়েছিল। উজান বাজারে জল উঠে এসেছে রাস্তার উপরেও। এই মুহূর্তে গুয়াহাটিতে নদীর জলস্তর ২-৩ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জল কমিশনের সাদিকুল হক।
বর্ষার সময় প্রতিবছরই জল ঢুকে পড়ে কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। বন্যার জলে চাপা পড়েছে অভয়ারণ্যের ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার নব্বই শতাংশই। প্রাণে বাঁচতে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার দিকে রওনা দিচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পশুরা। কিন্তু অভয়ারণ্য লাগোয়া ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক পেরোতে গিয়ে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, তাই ওই রাস্তায় মোটর যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। নগাঁওয়ের জাখালাবান্ধা এবং গোলাঘাটের বোকাখাট থেকে সমস্ত গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পশুরা যাতে নিরাপদে রাস্তা পারাপার করে এবং চোরাশিকারিদের নজর থেকে তাদের বাঁচানো যায়, তার জন্য ওই এলাকায় ১০০ বন দফতরের কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এত সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও শনিবার থেকে কাজিরাঙায় ২৩টি পশুর মৃত্যু হয়েছে।
বন্যাপরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় এখনও পর্যন্ত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন অসমে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪৩ লক্ষ মানুষ। অসম রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের ৩৩টি জেলাই বন্যা কবলিত। জলের নীচে চলে গিয়েছে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫৯২ একর চাষযোগ্য জমি। জলের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শোণিতপুর, গোলাঘাট, যোরহাট, বাকসা, ডিব্রুগড়, নলবাড়ি, হোজাই, মরিগাঁও, লখিমপুর, দারাং, নগাঁও, কামরূপ, বরপেটা, ধুবরি, মাজুলি, করিমগঞ্জ, শিবসাগর, হেইলাকান্দি এবং দক্ষিণ সালমারা জেলার একাধিক বাঁধ, সড়ক, সেতু এবং সাঁকো। ধস নেমেছে ধস নেমেছে বরপেটা, শোণিতপুর জেলার একাধিক জায়গায়।

জল ঢুকে পড়েছে কাজিরাঙাতেও। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে ভেঙে পড়ল বহুতল, মৃত ২, উদ্ধার ৫, আরও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা
এই পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ চালাতে অসমে একযোগে কাজ করছে জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৫টি দল কাজ করছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৫টি দল কাজ করছে। ৩৮ জন ডুবুরি, ৪৮টি নৌকো নিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। গত ১১ জুলাই থেকে বানভাসি বাকসা, মরিগাঁও, গোলাঘাট, বরপেটা এবং কামরূপ থেকে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে তারা। তবে বেকি নদীর উপচে পড়া জল বালিরপুর চর গ্রামে ঢুকে পড়ায়, সেখানে উদ্ধারকাজ চালাতে সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছে বাকসা জেলা প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সেখান থেকে ১৫০ জন গ্রামবাসীকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। তাঁদের ওদালগুড়ি গ্রামের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘আগামিকালের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেব’, সুপ্রিম কোর্টে বললেন কর্নাটকের স্পিকার
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবারই নলবাড়ি থেকে পরিদর্শনে যান সর্বানন্দ সোনোয়াল। সোলমারা ত্রাণ শিবিরও ঘুরে দেখেন তিনি। গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। অসম সরকারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।