কর্নাটকে বিজেপির প্রচারে হিজাব, টিপু সুলতান, ‘সার্বভৌমত্ব’, বজরং দল বিতর্কের মতো প্রসঙ্গগুলি উঠে এসেছিল। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
হারের পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের একমাত্র বিজেপি শাসিত রাজ্যে পদ্মশিবির যে এ ভাবে পর্যুদস্ত হবে, অধিকাংশ জনমত সমীক্ষাতেই তার আঁচ মেলেনি। বোঝা যায়নি, কংগ্রেসের ‘সুশাসন’ আর ‘দুর্নীতিমুক্ত’ কর্নাটক স্লোগানের সামনে এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে বিজেপির মেরুকরণের প্রচার।
অথচ, গত দু’বছরে কর্নাটকে বিজেপির ‘মেরুকরণের রাজনীতির’ অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একাধিক বার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বিতর্ক, ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের শহিদ টিপু সুলতানের ধর্মীয় পরিচিতি, ওবিসি মুসলিমদের সংরক্ষণ বাতিল, কংগ্রেসের ইস্তাহারে বজরং দল নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতির মতো বিষয়কে হাতিয়ার করে মেরুকরণের চেষ্টা করেছে বিজেপি। এমনকি, ভোটের প্রচারে এসেছে ‘হালাল মাংস’ এবং বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র প্রসঙ্গও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো বিজেপির তারকা প্রচারকদের সেই মেরুকরণের স্রোতে গা ভাসাতে দেখা গিয়েছে। কর্নাটকে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে এ বার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা ছিল প্রবল। লাগামছাড়া দুর্নীতি, সরকারি কাজে কমিশন নেওয়া-সহ বহু অভিযোগ ওই বিরোধিতায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছে। ওই সব অভিযোগের কোনও জবাব ছিল না মোদী-শাহদের কাছে। তাই ভোট প্রচারে তার ধারকাছ দিয়েও তেমন হাঁটেননি বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে গেরুয়া শিবিরের ভরসা ছিল হিন্দুত্ব, মেরুকরণ।
‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান থেকে ‘কেরালা স্টোরি’, ‘ভারত থেকে কংগ্রেস কর্নাটককে বিচ্ছিন্ন করতে চায়’, তাঁকে ‘৯১ বার কংগ্রেস অপমান করেছে’— সব তাসই এ বার খেলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এমনকি, ভোটের আবহে বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র সমর্থনে মুখ খুলে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আসলে সন্ত্রাসবাদকে মদত দিতে চাইছে। সেই কারণে এই ছবিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে। তারা আদতে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে।’’ অন্য দিকে, ভোটের আগে কর্নাটকে ওবিসি মুসলিমদের ৪ শতাংশ কোটা বাতিল করে রাজ্যের দুই প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী লিঙ্গায়েত এবং ভোক্কালিগাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার যে পদক্ষেপ কর্নাটকের বিজেপি সরকার করেছিল, প্রকাশ্যে তা সমর্থন করেছিলেন শাহ।
কর্নাটকে কংগ্রেসের ভোটের প্রচারে আগাগোড়া প্রাধান্য পেয়েছিল, বিজেপি সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন এবং জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ৪০ শতাংশ কমিশনের অভিযোগের পাশাপাশি, তুলে ধরা হয়েছিল কর্নাটক সরকারের দুগ্ধপ্রকল্প ‘নন্দিনী’কে পিছনে ঠেলে মোদীর রাজ্যের ‘আমূল’কে নিয়ে আসার প্রসঙ্গ। রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়ঙ্কাও ধারাবাহিক ভাবে প্রচার চালিয়েছেন রাজ্য জুড়ে। কিন্তু সন্তর্পণে মেরুকরণের ‘ফাঁদ’ এড়িয়েছেন তাঁরা। মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেননি। তার প্রতিফলন বলছে, হিন্দুত্বের হাওয়ায় ভর করে ‘স্পর্শকাতর এলাকা’ হিসাবে চিহ্নিত মেঙ্গালুরু, দক্ষিণ কন্নড়, উত্তর কন্নড়ের মতো উপকূলবর্তী কর্নাটকে ভাল ফল করলেও রাজ্যের অন্য এলাকায় ধরাশায়ী হয়েছে পদ্ম শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy