প্রতীকী ছবি।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের নয়া কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির হাড়কাঁপানো ঠান্ডা অগ্রাহ্য করে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন কৃষকেরা। তাঁদের অনেকেই ঠান্ডায় মারা গিয়েছেন। কয়েক জন আবার আত্মঘাতী হয়ে অস্বস্তি বাড়িয়েছেন মোদী সরকারের। তার মধ্যেই বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে ‘বিদ্যুৎ সংস্থার’ হেনস্থার শিকার হয়ে এক কৃষকের আত্মহত্যা শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারের পাশাপাশি অস্বস্তিতে ফেলল মোদী সরকারকেও। আত্মহত্যার আগে মোদীকে উদ্দেশ করে এক চিঠিতে ওই কৃষক লিখেছেন, ‘শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো বেচে ঋণ মিটিয়ে দেবেন।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের ছতরপুরের মাটগুভান গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় কৃষক ৩৫ বছর বয়সী মুনেন্দ্র রাজপুত বকেয়া বিদ্যুতের বিল মেটাতে না পেরে বিদ্যুৎ সংস্থার হেনস্থার শিকার হচ্ছিলেন। মুনেন্দ্রর নিজস্ব একটি আটাকলও ছিল। তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, করোনা রুখতে জারি হওয়া লকডাউনের জন্য বছরের গোড়ার দিক থেকেই সমস্যায় পড়েন মুনেন্দ্র। লকডাউন উঠলেও নিজের জমির ফসল সে ভাবে বাজারে বিক্রি করতে পারছিলেন না তিনি। ফলে তিন মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো টানাটানির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছিল তাঁকে। এর মধ্যেই বকেয়া বিদ্যুতের দাম মেটানোর জন্য তাঁকে প্রায় ৮৭ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেয় স্থানীয় বিদ্যুৎ সংস্থা। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে ওই বিপুল পরিমাণ বিল মেটাতে পারেননি মুনেন্দ্র। সে কারণে স্থানীয় বিদ্যুৎ সংস্থা প্রথমে আইনি নোটিস পাঠানো এবং পরে নানা ভাবে চাপ দেওয়া শুরু করেন। এমনকি তাঁর মোটর সাইকেলের চাবিও কেড়ে নেয় সংস্থার কর্মীরা। চাবি দিয়ে দেওয়া হয় তাঁর আটাকলেও। মুনেন্দ্রর এক ভাই নিজেও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর অভিযোগ, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীদের হেনস্থার জন্যই মুনেন্দ্র চরম পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্তাদের কাছে বকেয়া মেটানোর জন্য কিছুটা সময় চেয়েছিলেন দাদা। লকডাউন উঠলেও তখনও অবধি লাভের মুখে দেখেননি দাদা। সে কারণেই তিনি সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর পাওয়া গেল না।’ এর পরেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন মুনেন্দ্র এবং বুধবার আত্মহত্যা করেন। তার আগে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘ঋণ শোধের জন্য আমার দেহ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হোক, যাতে আমার দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করে বিদ্যুৎ বিলের ৮৭ হাজার টাকা শোধ করা যায়।’
স্থানীয় পুলিশের কর্তা কলমজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, মুনেন্দ্রর মৃত্যু আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের স্থানীয় বিধায়ক রাজেশ কুমার শুক্ল মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের কাছে চিঠি লিখে এই ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, যাদের জন্য কৃষকেরা এ ভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বিদ্যুৎ সংস্থার যে কর্মীরা তাঁর মোটর সাইকেলের চাবি কেড়ে আটাকলে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্তের দাবি তুলেছেন মুনেন্দ্রর পরিবার এবং স্থানীয়রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy