গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রথম দফায় ৫৯, তার পর সেগুলির ক্লোন হিসেবে আরও ৪৭টি। কিন্তু শুধু এই ৯৬টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা নয়, চিনের বিরুদ্ধে সরকারকে আরও কড়া মনোভাব নেওয়ার আর্জি জানাল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের একাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে চিনের পাশাপাশি আমেরিকাও ভারতের বাজারের সিংহভাগ দখল করে রেখেছে। এই দুই দেশের একচেটিয়া আধিপত্য রুখে দেশীয় সংস্থাগুলির স্বার্থরক্ষার আর্জি জানিয়েছে দুই ভারতীয় সংস্থা পলিসিবাজার ও মোবিকুইক।
জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকারক— এই অভিযোগে গত ২৯ জুন প্রথম দফায় টিকটক-সহ ৫৯টি চিনা অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। তা নিয়ে বেজিং প্রতিবাদ করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি নয়াদিল্লি। উপরন্তু ২৭ জুলাই ফের আরও ৪৭টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে মোদী সরকার। এই অ্যাপগুলি মূলত আগে নিষিদ্ধ করা ৫৯টি অ্যাপের ক্লোন হিসেবে কাজ করে। সেই কারণেই সেগুলিকেও ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ চিনা অ্যাপের উপর নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। ফলে আরও অ্যাপ বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু পলিসিবাজারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইয়াশিস দাহিয়ার মতে, এটাই যথেষ্ট নয়। অ্যাপ ছাড়াও ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে চিনের প্রবেশাধিকারে আরও কড়া ব্যবস্থা চান তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কৌশলগত ভাবে দেশের বাজারে বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির প্রবেশে আরও লাগাম পরানো উচিত ভারত সরকারের। এখন সেটা না হলে আর কখনওই সম্ভব নয়।’’ তাঁর মতে, ‘‘চিন বরাবরই সেই দুষ্টু ছেলের মতো, যে নিজের খাবার কাউকে দেবে না, অথচ অন্যের খাবার কেড়ে খাবে।’’ চিনের পাশাপাশি আমেরিকার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ন্ত্রণ আনার পক্ষপাতী দাহিয়া।
আরও পড়ুন: প্রতীক্ষার শেষ, পাঁচ রাফাল ফাইটার ছুঁয়ে ফেলল ভারতের মাটি
করোনাভাইরাস এবং লকডাউনের জেরে অর্থনীতির ক্ষত মেরামতিতে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ‘ভোকাল ফর লোকাল’। কার্যত সেই স্লোগানের সুরেই কথা বলেছেন মোবিকুইকের অন্যতম কর্ণধার বিপিন প্রীত সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘দেশের ১৩০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটায় শুধু বিদেশি সংস্থাগুলি। সেটা মোটেই ভাল নয়। এখনও পর্যন্ত ভারতে একটাও বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা নেই। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে দেশের বাজারে ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে বিদেশি সংস্থাগুলি।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যকে বকেয়া জিএসটি দিতে পারবে না কেন্দ্র: কেন্দ্রীয় অর্থসচিব
তবে তিনি যে চিনের মতো বিদেশি সংস্থা বা পুঁজিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছেন না, সেটাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মোবিকুইক কর্ণধার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চিনের মতো সংরক্ষণশীল অর্থনীতির পক্ষে সওয়াল করছি না, কিন্তু ভারতের দরকার দেশীয় সংস্থা এবং তাদের সুরক্ষা।’’ তাঁর মতে, ‘‘প্রতিযোগিতা থাকা দরকার। গ্রাহকদেরও বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া যায় না, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং, পেমেন্ট বা ই-কমার্স ক্ষেত্রে কোনও ভারতীয় সংস্থাই না থাকে।’’
গত ৫-৬ বছরে চিনা লগ্নির জোয়ার এসেছে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। বহু সংস্থাতেই রয়েছে আলিবাবা, টেনসেন্টের মতো সংস্থার বিনিয়োগ। এমনকী, যে পলিসিবাজার চিনা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণের গণ্ডিতে বেঁধে রাখার পক্,এ সওয়াল করছে, সেই সংস্থাতেও চিনের টেনসেন্ট হোল্ডিংসের বিনিয়োগ রয়েছে। তবে গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষে ভারতীয় এক কর্নেল-সহ ২০ জন সেনার মৃত্যুর পর থেকে ভারতীয় এই সব সংস্থাগুলির মনোভাবও পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই চাইছেন চিনা লগ্নি থেকে মুক্ত হতে। সেই ধারাতেই দুই সংস্থার এই সওয়াল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy