দু’বছর আগের ঘটনা। মুম্বইয়ের ওয়াডালায় নিজের ফ্ল্যাটেই নৃশংস ভাবে খুন হয়ে যান বছর পঁচিশের তরুণী পল্লবী পুরকায়স্থ। তখনই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল আবাসনের নিরাপত্তা রক্ষীর দিকে। আজ সেই অভিযোগেই সিলমোহর দিল মুম্বই আদালত। অনুপ্রবেশ, শ্লীলতাহানি ও খুনের মতো অপরাধে মুম্বই আদালত দোষী সাব্যস্ত করল অভিযুক্ত সাজ্জাদ আহমেদ মোগলকেই। দায়রা বিচারক ব্রুশালি জোশী বললেন, “সব তথ্যপ্রমাণই সাজ্জাদের বিরুদ্ধে।”
লিভ-ইন পার্টনার অভীক সেনগুপ্তের সঙ্গে ওয়াডালার একটি বহুতলের ষোলো তলায় থাকতেন আইএএস দম্পতি অতনু ও সুমিতা পুরকায়স্থর মেয়ে পল্লবী। তিনি ও অভীক দু’জনেই পেশায় আইনজীবী। পুণের ল কলেজেই আলাপ-প্রেম। অভিনেতা ফারহান আখতারের বিনোদন সংস্থায় কাজ করতেন পল্লবী। প্রায়শই তাঁর রাত হত বাড়ি ফিরতে। ৯ অগস্টও বাড়ি ফিরতে ১১টা বেজে গিয়েছিল। ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখেন আলো জ্বলছে না। অথচ অ্যাপার্টমেন্ট সবার ফ্ল্যাটে আলো রয়েছে। অভীককে ব্ল্যাকবেরি মেসেঞ্জার থেকে টেক্সট করে জানান সে কথা। খবর পাঠান স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ানকে। তাঁর সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষী সাজ্জাদও আসে পল্লবীর ফ্ল্যাটে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই চলে আসে আলো। সাজ্জাদ ও ইলেকট্রিশিয়ানকে বিদায় দিয়ে সাড়ে বারোট নাগাদ শুতে যান পল্লবী। এক ঘণ্টা পর ফের আলো চলে যায়। ফের খবর যায় মিস্ত্রির কাছে। অভীককেও জানান পল্লবী। সেটাই শেষ মেসেজ। সাজ্জাদকে নিয়ে ফের ইলেকট্রিশিয়ান আসেন। সারিয়ে দিয়ে চলেও যান।
ভোর বেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অভীক দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে করিডর। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন মেঝেয় লুটিয়ে পড়ে পল্লবীর রক্তে ভিজে যাওয়া শরীর!
মুম্বইয়ের মতো শহরে নিজের ফ্ল্যাটে পল্লবীর এ ভাবে খুন হয়ে যাওয়া নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। দ্রুত নড়েচড়ে বসে মুম্বই পুলিশ। ঘটনার দিন দুয়েকের মাথাতেই তারা দাবি করে, আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী সাজ্জাদই হত্যাকারী। গ্রেফতার করা হয় তাকে। সে বছরই অর্থাৎ ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর মুম্বই পুলিশের অপরাধ-দমন শাখা সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ৪৩৪ পাতার চার্জশিট জমা দেয়। সরকারি আইনজীবীও সাজ্জাদের বিরুদ্ধে খসড়া চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন। যদিও সে বারবারই সব অভিযোগ অস্বীকার করে। উল্টে বলে, পল্লবীর প্রেমিক অভীকই খুনি।
আজ যখন আদালত সাজ্জাদকে দোষী ঘোষণা করে, রা কাটেনি সে। স্রেফ সামান্য ঘাড় নাড়ে।
সরকার পক্ষের আইনজীবী আজ জানান, মাঝেমধ্যেই আপত্তিকর ভাবে পল্লবীর দিকে তাকাতেন সাজ্জাদ। তরুণী এক দিন প্রতিবাদ করেন। সেই থেকেই রাগ চেপে যায় সাজ্জাদের মাথায়। ঘটনার দিন সে বার বার পল্লবীর ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সে জানত তরুণীর সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে। সেই মতো ইলেকট্রিশিয়ানের সঙ্গে সে-ও চলে যায় পল্লবীর ফ্ল্যাটে এবং সুযোগ মতো চুরি করে নেয় ফ্ল্যাটের চাবি।
এর পর পল্লবী ঘুমিয়ে পড়লে সাজ্জাদ নিশ্চুপে ঢুকে পড়ে তরুণীর ঘরে। ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর। তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু পল্লবীও সাঁতারে জাতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়ন। তাঁর গায়ের জোরও কম নয়। ডাকাবুকো পল্লবীকে সামলাতে শেষমেশ কোমরে গুঁজে রাখা ছোরাটা বের করে ফেলেন সাজ্জাদ। কোপাতে শুরু করেন বেপরোয়া ভাবে। ওই অবস্থাতেই তরুণী কোনও মতে ছুটে গিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে বেল বাজান। কিন্তু তাঁকে টেনে হিঁচড়ে ফ্ল্যাটের ভিতরে নিয়ে যায় সাজ্জাদ। আর তার পর ছোরা দিয়ে কেটে দেয় গলা।
“এই ভাবে আমাদের মেয়েটাকে খুন করা হয়েছিল”, কাঁপতে কাঁপতে বললেন পল্লবীর মা সুমিতা। তরুণীর বাবা-মা দু’জনেই আজ হাজির ছিলেন মুম্বই আদালতে। তবে অভীক নেই। পল্লবীর মৃত্যুর এক বছর পরে রোগে ভুগে তিনিও চলে গিয়েছেন। অতনুবাবু বললেন, “দু’দু’টো পরিবার ভেসে গেল। আমরা ওর ফাঁসি চাই।”
বিশেষ সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম আদালতের কাছে পরবর্তী শুনানির দিন জানতে চাইলে, বিচারক ৩ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি রাখেন। ওই দিনই শাস্তি ঘোষণা হতে পারে। কলকাতার হেতাল পারেখ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ফাঁসি হয়েছিল নিরাপত্তা রক্ষী ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের। সাজ্জাদের কী হবে, সে দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy