উন্মত্ত জনতাকে লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে সেনা। ছবি: সংগৃহীত।
হিংসা যেন থামতেই চাইছে না মণিপুরে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আবার নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল। ইম্ফলের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হওয়া ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল সেনা। সেনা সূত্রে খবর, মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় গুলির আঘাতে নিহত এক প্রাক্তন নৌসেনা কর্তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ইম্ফলে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়েছিলেন। জমায়েতের নেতৃত্ব ছিলেন মহিলারা। প্রথমে ওই অফিসারের দেহ ইম্ফলের জনবহুল খোয়াইরামবন্দ বাজারে আনা হয়। পরে মৃতদেহটি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের বাসভবনের সামনে দিয়ে মিছিল করে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় উন্মত্ত জনতা। পুলিশ যাতে তাদের গ্রেফতার করতে না পারে, তাই রাস্তার মাঝে টায়ারও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এর পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সেনা এবং পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ওই নৌসেনা কর্তার দেহ ‘জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স’-এর মর্গে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে সেনার তরফে জানানো হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকালেও উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যের একটি গ্রামে বিনা উস্কানিতে সেনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী। পাল্টা গুলি ছোড়ে সেনাও। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও সেনার তরফে অসমর্থিত সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, গুলির যুদ্ধে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনার টুইটার হ্যান্ডল ‘স্পিয়ার কর্পস’-এর তরফে জানানো হয়, মণিপুরের হারাওথেল গ্রামে টহল দেওয়ার সময়ে হঠাৎই ভোরের দিকে সেনা আধিকারিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, ‘পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি’ এড়াতে পাল্টা গুলি চালায় তারাও। সেনার তরফে এ-ও জানানো হয়, বিপুল সংখ্যক উন্মত্ত জনতা ওই এলাকায় জড়ো হয়েছিল। পরে সন্ধ্যার দিকে উন্মত্ত জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণে আনে সেনা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই হিংসাবিধ্বস্ত মণিপুরে গিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে সে রাজ্যের চূড়াচাঁদপুর জেলার বিষ্ণুপুর এলাকায় তাঁর কনভয় আটকায় পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, হামলার আশঙ্কাতেই আটকানো হয় কংগ্রেস নেতার কনভয়। তবে পরে তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায় যান। কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করেন। শরণার্থী শিবিরে শিশুদের সঙ্গে বসে মধ্যাহ্নভোজও করেন রাহুল।
প্রসঙ্গত, মণিপুরে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ধারাবাহিক হিংসায় নিহতের সংখ্যা অনেক আগেই একশো পার করেছে। ঘরছাড়া রয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক করলেও পরিস্থিতিতে বদল আসেনি। গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর বিক্ষোভ-মিছিল ঘিরে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই থেকেই মণিপুরে সংঘাতের সূত্রপাত।
মণিপুরে মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে। এমনকি পৃথক রাজ্যের দাবিও তুলেছে কুকিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy