Advertisement
E-Paper

১৩ বছর বয়সে মুস্কানের সঙ্গে আলাপ, পরে প্রেম! তিন বার বাড়ি ছেড়েও পালান দু’জনে, কেন পথের কাঁটা হলেন সৌরভ?

স্থানীয় সূত্রের দাবি, মুস্কানদের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে যেতেন সৌরভ। আর সেখান থেকেই মুস্কানের সঙ্গে পরিচয় তাঁর। তার পর তাঁদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মুস্কানের রূপে মুগ্ধ ছিলেন সৌরভ।

মুস্কান এবং সৌরভ। ছবি: সংগৃহীত।

মুস্কান এবং সৌরভ। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ১৫:২৯
Share
Save

সাল ২০১১। সৌরভের তখন ১৩ বছর বয়স। সেই সময়ে মুস্কানের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় তার। দু’জনের পরিচয়ের সূত্রটাও বেশ নাটকীয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, মুস্কানের ঠাকুরদা জ্যোতিষী ছিলেন। সৌরভের মা রেণু রাজপুত জ্যোতিষে বিশ্বাস করতেন। যে হেতু ওই এলাকায় মুস্কানের ঠাকুরদার জ্যোতিষে নামডাক ছিল, তাই রেণু মাঝেমধ্যেই মুস্কানদের বাড়িতে যেতেন। সৌরভদের বাড়ি থেকে মুস্কানদের বাড়ি তিন কিলোমিটার দূরে।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, মুস্কানদের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে যেতেন সৌরভ। আর সেখান থেকেই মুস্কানের সঙ্গে পরিচয় তাঁর। তার পর তাঁদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মুস্কানের রূপে মুগ্ধ ছিলেন সৌরভ। পরিচয়ের পর পাঁচ বছর ধরে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। মুস্কানকে তাঁর ভাল লাগে, তাঁকে বিয়ে করতে চান। বাড়িতে এ কথা জানিয়েছিলেন সৌরভ। কিন্তু বাড়ি থেকে সৌরভের সেই প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়নি। কারণ, সে সময় দু’জনেই নাবালক ছিলেন। তা ছাড়া সৌরভের বাড়ির লোকের পছন্দ ছিল না মুস্কানকে।

দ্বাদশ পাশ করে সৌরভ মার্চেন্ট নেভির পরীক্ষা দেন। তাতে পাশও করেন। মুস্কানের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ ছিল তাঁর। তার পর এক দিন খবর আসে, লন্ডনের একটি সংস্থায় মার্চেন্ট নেভি অফিসারের চাকরি হয়েছে সৌরভের। তাঁর মা রেণু এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিদেশে সৌরভের চাকরি হয়ে যাওয়ায় ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। সৌরভ চাকরিতে যোগ দেয়। ২০১৬ সালের শেষের দিকে আচমকা বাড়িতে ফিরে আসে সৌরভ। কিন্তু বাড়িতে ফিরে কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যায়।’’ রেণুর আরও দাবি, সৌরভকে খুঁজে না পেয়ে মুস্কানের বাড়িতে যান তাঁরা। গিয়ে দেখেন মুস্কানও বাড়ি ছেড়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন। তার পর মেরঠ পুলিশ দু’জনকে খুঁজে নিয়ে আসে। সৌরভকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, মুস্কান তাঁর যোগ্য নন। তাঁকে ভুলে যাওয়া উচিত। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। তিন মাস পর বাড়ি ফিরে আসেন সৌরভ। আবারও মুস্কানের সঙ্গে পালিয়ে যান। তিন দিন পর বাড়িতে ফিরে আসেন দু’জন।

আবার কয়েক মাস পর হঠাৎ দু’জনে উধাও হয়ে যান। তবে এ বার দু’জনে বিয়ে করেই বাড়িতে ফেরেন। রেণু বলেন, ‘‘সৌরভ যখন বিয়েই করে ফেলেছিল, মুস্কানকে পুত্রবধূ হিসাবে মেনে নিয়েছিলাম। ছ’মাস আমাদের বাড়িতেই ছিল মুস্কান। কিন্তু ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অশান্তি শুরু করে। কয়েক মাস পর সৌরভ বাড়িতে ফিরলে ওকে সব বলি। কিন্তু সৌরভ আমাদের ছেড়ে মুস্কানকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে ওঠে। আর এই ঘটনায় সৌরভের বাবা খুব কষ্ট পেয়েছিল। সৌরভের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সৌরভ আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত।’’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সাহিলের সঙ্গে মুস্কানের যোগাযোগ হয় ছোটবেলাতেই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একসঙ্গে পড়াশোনা, খেলাধূলা। তার পর স্কুল বদলে যাওয়ায় দু’জন দু’দিকে ছিটকে গিয়েছিলেন। তার পর থেকে আর যোগাযোগ ছিল না তাঁদের। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর সমাজমাধ্যমে আবার দু’জনের সাক্ষাৎ হয়। তত দিনে সৌরভের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মুস্কানের। পুরনো স্কুলের বন্ধুরা একটি হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ বানায়। সেখানেই আবার সাহিলের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে মুস্কানের। তার পর গ্রুপ চ্যাট থেকে ব্যক্তিগত হোয়াট্‌সঅ্যাপে দু’জনের কথা শুরু হয়। মুস্কান ভাড়াবাড়িতে একাই থাকতেন। সৌরভ কর্মসূত্রে লন্ডনে থাকতেন। আর সেই সুযোগে সাহিলের সঙ্গে মুস্কানের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে ওঠে। বাজারে, দোকানে যাওয়া, একসঙ্গে ঘুরতে যেতেও শুরু করেন সাহিল-মুস্কান। তার পর সেই বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দু’জনের মধ্যে। পাশাপাশি সৌরভের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে মুস্কানের। নিত্য দিন যাতায়াত শুরু হয় সাহিলের। বাড়ির মালিক তাতে আপত্তিও জনিয়েছিলেন। সৌরভকেও বিষয়টি জানান তিনি। বাড়ি ফিরে মুস্কানকে বোঝান সৌরভ। সাহিলের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেন। কিন্তু সৌরভকে পাল্টা বুঝিয়ে শান্ত করেন মুস্কান। কথা দেন, আর সাহিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন না। মুস্কানের কথা বিশ্বাস করেন সৌরভ। আবার নিজের কাজে ফিরে যান। কিন্তু সাহিল-মুস্কানের যোগাযোগ নষ্ট হয়নি। বরং আরও বেড়েছিল। দু’জনে মিলে নেশা করতেন।

ধীরে ধীরে সাহিলকেই নিজের জীবনের সব ভেবে নেন মুস্কান। আর এখান থেকেই পথের কাঁটা হয়ে ওঠেন সৌরভ। মুস্কান এবং সাহিল যে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেছেন, সেই খবর আবার যায় সৌরভের কাছে। তত দিনে সৌরভের একটি কন্যাসন্তানও হয়েছিল। বাড়ি ফিরে সৌরভ বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সন্তানের কথা ভেবে তাঁর বাড়ির লোক মুস্কানের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে পরামর্শ দেন। তখনকার মতো অশান্তি মিটলেও তা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। সৌরভ আবার লন্ডনে ফিরে যান। মুস্কানের জন্মদিন ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। তাঁকে চমকে দেওয়ার জন্য না জানিয়েই লন্ডন থেকে চলে আসেন সৌরভ।

ওই দিন মুস্কানের সঙ্গে জন্মদিন পালন করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল কন্যার জন্মদিন। সে দিনও তিন জন মিলে উদ্‌যাপন করেন। ওই দিন সৌরভকে মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচৈতন্য করে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু সৌরভ মদ্যপান না করায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল। তবে তক্কে তক্কে ছিলেন মুস্কান। ৩ মার্চ নিজের বাড়িতে যান সৌরভ। ৪ মার্চ রাতে বাড়ি থেকে লাউয়ের কোফতা নিয়ে ভাড়াবাড়িতে আসেন সৌরভ। এই তরকারি সৌরভের প্রিয়, সেটা জানতেন মুস্কান। তাই তরকারি গরম করার বাহানায় ওই তরকারির সঙ্গে কড়া মাত্রার ঘুমের ওষুধ এবং মাদক মিশিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তার পর খাবার খেতে দেন সৌরভকে। সেই খাবার খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েন সৌরভ। বাজার থেকে কিনে আনা ছুরি দিয়ে হৃদ্‌পিণ্ড ফালা ফালা করে দেন মুস্কান। তার পর সাহিলকে ফোন করে ডেকে আনেন। সাহিল এসে সৌরভের মাথা কেটে নেন বলে অভিযোগ। তার পর সারা রাত ধরে সৌরভের দেহ টুকরো করেন। বাজার থেকে কিনে আনা ড্রামে সেই টুকরো ভরেন। তার পর সিমেন্ট ভরে সেই ড্রামের মুখ আটকে দেন।

Navy Officer Murder

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}