Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

পালিয়ে বাঁচা সাঁওতাল পরগনার মানুষ চান কাজ

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের ধাঁচে এ রাজ্যেও ‘স্বচ্ছগ্রাম’ প্রকল্প তৈরি করেছিল রঘুবর দাস সরকার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
দুমকা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

কথায় বলে ‘পালিয়ে বাঁচা’। এখানে সত্যিই মানুষকে পালিয়ে বাঁচতে হয়। শিক্ষিত যুবক চাকরির সন্ধানে ছোটেন ভিন্ রাজ্যে। আর গ্রামের নিরক্ষর শক্তপোক্ত চেহারার তরুণও ‘পলায়ন’ করেন অন্য রাজ্যে। ধান কাটতে, নয়তো ইটভাটার শ্রমিকের কাজে। স্থানীয় মানুষজন এই পরিযায়ী জীবনকে ‘পলায়ন’-ই বলেন।

সাঁওতাল পরগনার সারঠ বিধানসভা এলাকার বাসাহা গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে সারঠ-দুমকা রোড। ঘুপচি চায়ের দোকানে বাঁশের বেঞ্চে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন অনগড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন মুখিয়া (প্রধান) কাশীনাথ ভোক্তা। ‘পত্রকার’ শুনে হাসলেন। পরে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ উগরে দিলেন ক্ষোভ। কাশীনাথের কথায়, ‘‘সরকারের দাবি, কাজ হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে কাজ কোথায়! জলের সমস্যা মেটেনি। আজও বিহার, পশ্চিমবঙ্গে ধান কাটতে ছোটেন রোজগারের জন্য। কখনও কখনও গোটা পরিবারটাই বাড়ি বন্ধ করে চলে যায়। শহরের দিকেও তো একই অবস্থা। লেখাপড়া শিখেও ছেলেরা বাইরে চলে যাচ্ছে!’’

বাসাহা-র বাসিন্দা জনজাতি পরেশ মৃধা, আশু মৃধাদের জীবন চলে ‘পলায়ন’ করেই। প্রাক্তন মুখিয়া, তায় আবার ‘ব্রাহ্মণ’ কাশীনাথের সামনে দাঁড়ানোর কথা ভাবেনই না তাঁরা। তবুও গ্রামের মানুষ কী ভাবছেন, জানতে চাওয়ায় পরেশরাই দেখিয়ে দিয়েছিলেন কাশীনাথকে। আনগারার বাসিন্দা আশু মৃধার কথায়, ‘‘সরকার পরিবার পিছু পাঁচ কিলো চাল দেয়। কিন্তু ভাত কি শুধু খাওয়া যায়। ডাল-তরকারিও লাগে। বাইরে চাষ করে ফেরার সময়ে সঙ্গে তেল, নুন, আনাজ আর নগদ টাকা নিয়ে মানুষ গ্রামে ফেরে। বাইরে না গেলে যে আমাদের পেট চলবে না।’’ পরেশের কথায়, ‘‘আজ পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে জল পৌঁছয়নি। এক বারের বেশি চাষ করা যায় না। গ্রামে শৌচাগার তৈরি করেছে সরকার। কিন্তু সেখানেও জল নেই।’’

আরও পড়ুন: মহিলাদের ভয় কাটাতে দেশ জুড়ে ‘প্রাইড ওয়াক’-এর আয়োজন করবে মহিলা কমিশন

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের ধাঁচে এ রাজ্যেও ‘স্বচ্ছগ্রাম’ প্রকল্প তৈরি করেছিল রঘুবর দাস সরকার। অভিযোগ, মাত্র এক মানুষ সমান সে সব শৌচাগারে একটি জলের বালতি রাখার জায়গাও নেই। শিকারীপাড়া বিধানসভার আসানবনি, ধানকুট্টার মতো গ্রামে গিয়েও শোনা গেল ব্যবহারের অযোগ্য শৌচাগার ও জলের অভাব নিয়ে ক্ষোভ। ধানকুট্টার বাসিন্দা মনোহর রাইয়ের আক্ষেপ, ‘‘মাসাঞ্জোরে বাঁধ তৈরি হল। অথচ এখানে জল এল না।’’

এ সব নিয়েই সরব ঝাড়খণ্ডের বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, বেকারি বিজেপি সরকারকে প্যাঁচে ফেলেছে। শহরের ভোটে যেখানে বিজেপির প্রাধান্য থাকে, গত চার দফায় সেখানে ভোট কম পড়েছে। নতুন প্রজন্ম না কি শহরাঞ্চলে বুথমুখো হতে চায়নি। ভোট বেশি পড়েছে গ্রামাঞ্চলে। প্রধান বিরোধী জেএমএম-এর অভিযোগ, ‘‘গোড্ডা, বরকাগাঁওয়ের মতো জায়গায় কারখানা তৈরির কথা বলছে সরকার। কিন্তু সেখানে চাকরির যোগ্যতা এ রাজ্যের কত জন জনজাতি যুবকদের রয়েছে। আর কারখানার পাশে দোকানপাট তৈরি করে কত জনের পেট চলবে। উল্টে চাষের জমি হাতছাড়া হবে।’’

পাকুড়ের বণিকসভার সভাপতি রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মালপাহাড়ি অঞ্চলের পাথর খাদানগুলি দেখুন। এখানকার অর্থনীতি ওই সব খাদানের উপরেই নির্ভরশীল ছিল। এখন প্রায় দু’শো খাদান বিভিন্ন কারণে বন্ধ। খাদানমালিকদের দোষ রয়েছে। পাশাপাশি, খাদানের কাগজ তৈরির নামে সরকারি স্তরের দুর্নীতিও অনেকাংশে দায়ী।’’

ভোটে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার সঙ্গেই রয়েছে বিজেপির অন্তর্কলহ। টিকিট বণ্টন নিয়ে দলের মধ্যেই বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার অনুগামীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে বলেও দল সূত্রে খবর। যদিও দলের রাজ্য সভাপতি লক্ষ্মণ গিলুয়ার কথায়, ‘‘স্থায়ী সরকার মাত্র পাঁচ বছর কাজ করতে পেরেছে। যাঁরা তার আগে এত বছর সরকার চালিয়েছে তারা কেন জলের সমস্যা, বেকারত্বের সমস্যা দূর করতে পারেনি? বাবা-ছেলের সরকার শুধু লুট করেছে।’’ তাঁর আশা, ‘‘ঝাড়খণ্ডের মানুষ এ বারেও স্থায়ী সরকারই চাইবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jharkhand Santhal Employment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy