যোগী আদিত্যনাথ এবং অখিলেশ যাদব। —ফাইল ছবি।
বিজেপির ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ (বিভাজনে মৃত্যু) স্লোগানের মোকাবিলায় ‘জুড়েঙ্গে তো জিতেঙ্গে’ (ঐক্যেই জয়) স্লোগান নিয়ে প্রচারে নামল অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি)।
চলতি মাসেই উত্তরপ্রদেশের ন’টি বিধানসভায় উপনির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে যখন এই লড়াই উত্তরপ্রদেশে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখার, তখন লোকসভায় ভাল ফল ধরে রাখা অখিলেশের কাছে চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে এ বারের লড়াই অখিলেশের একার লড়াই। কারণ, লোকসভা নির্বাচনে থাকলেও, এ লড়াইয়ে তাঁর পাশে নেই রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস। আবার যোগী খুব ভাল করেই জানেন, ন’টি উপনির্বাচনে জিততে পারলে, তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। ২০২৭ সালে তাঁর নেতৃত্বেই যে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইতে নামবে তা অনেকাংশেই নিশ্চিত হবে। রাজনীতিকদের অনেকের মতে, ২০২৭ সালে তৃতীয় বার বিজেপিকে উত্তরপ্রদেশে জিতিয়ে আনতে পারলে, ২০২৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন যোগী।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের ৮০টির মধ্যে ৪৩টি আসনে জয়লাভ করে এসপি-কংগ্রেস জোট। সেখানে গেরুয়া শিবির মাত্র ৩৬টি আসনে জয়লাভ করে। মূলত উত্তরপ্রদেশের খারাপ ফলের কারণে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্নে ম্যাজিক সংখ্যা পেরোতে ব্যর্থ হয় বিজেপি। ফলাফলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওবিসি, দলিত সমাজ বিজেপির পাশ থেকে সরে গিয়ে অখিলেশ-রাহুল জুটিকে সমর্থন করেছে।
এ বারও হিন্দু সমাজের ভোট ভাগাভাগি সামগ্রিক ভাবে চিন্তায় ফেলেছে গেরুয়া শিবিরকে। সেই কারণে হরিয়ানার ভোট প্রচারে গিয়ে হিন্দু সমাজের বিভাজন আসলে হিন্দুদের মৃত্যুদের কারণ হবে বলে ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’-এর স্লোগান দেন যোগী আদিত্যনাথ। যাকে সম্প্রতি সমর্থনও করেছে আরএসএস। আরএসএস নেতা দত্তাত্রেয় হোসাবলের ব্যাখ্যা, হিন্দু সমাজে একতার লক্ষ্যে ওই মন্তব্য করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, হিন্দু সমাজকে ভাঙার উদ্দেশ্যে একাধিক শক্তি সক্রিয়। যাদের লক্ষ্য জাতি ও ধর্মের নামে দেশকে বিভাজন করা। হোসাবলের দাবি, সেই শক্তিগুলির বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজকে এক হতে বলেছেন যোগী। তাই ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ স্লোগানে ভর করে প্রচারে নেমেছেন যোগী ও তাঁর দল। লক্ষ্য হিন্দু ভোটের মেরুকরণ।
পাল্টা প্রচারে এসপি শিবিরের বক্তব্য, বিজেপিতে হানাহানিতে বিশ্বাস করে। আর সমাজবাদী পার্টি বিশ্বাস করে ভ্রাতৃত্বে। সেই কারণে বিজেপি-বিরোধী সব শক্তিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে নতুন স্লোগান দেওয়া হয়েছে। উপনির্বাচনে ভাল ফল হলে প্রমাণ হবে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি। যারা একক ক্ষমতায় আসন জিততে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী নেতৃত্বের অন্যতম মুখ হিসেবে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে পারবেন মুলায়ম-পুত্র। পাশাপাশি যাদব-মুসলিমদের ভোট ছাড়াও ওবিসি সমাজের অন্যান্য শ্রেণি এবং দলিতদের ভোট উপনির্বাচনেও টানতে পারলে স্পষ্ট হবে,
বিজেপির নিচুতলার ভোট ব্যাঙ্কে ধস অব্যাহত। আর সেই প্রবণতা বজায় থাকলে ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরার প্রশ্নে সুবিধেজনক অবস্থানে থাকতে পারবেন অখিলেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy