বিবিসি নিয়ে ব্রিটেনকে জবাব দিলেন জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বিবিসির দফতরে আয়কর হানার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি। বিষয়টিকে ব্রিটিশ সরকার যে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওই একটি সিদ্ধান্তেই। বিবিসি নিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে পাল্টা দিলেন জয়শঙ্করও। বৈঠকের মধ্যেই তিনি ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, সব প্রতিষ্ঠানকেই দেশের আইন মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, দেশের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। বিদেশমন্ত্রকের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রত্যুত্তরের কথা স্বীকার না করা হলেও, মন্ত্রকের একটি সূত্র মারফত এই খবর জানা গিয়েছে।
কিছু দিন আগে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)-এর দিল্লি এবং মুম্বইয়ের বিবিসির দফতরে দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় আয়কর দফতর। ‘সমীক্ষা’র ব্যাখ্যা দিয়ে আয়কর দফতর দাবি করে যে, ম্যারাথন ‘সমীক্ষা’য় ব্রিটেনের সংবাদ সংস্থাটির কর দেওয়ার নথিপত্রে বেশ কিছু গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। আয়কর দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতে বিবিসির বিভিন্ন ইউনিট দ্বারা প্রকাশিত আয় এবং মুনাফার সঙ্গে ওই সংবাদ সংস্থার ‘ভারতে ব্যবসায়িক কার্যকলাপের মাত্রা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’’
আগেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির দিল্লি এবং মুম্বইয়ের দফতরে ‘আয়কর সমীক্ষা’ নিয়ে মুখ খুলেছিল ব্রিটিশ সরকার। বিবিসির পাশে দাঁড়িয়ে, ব্রিটিশ সংসদে বিবৃতি দিয়ে সুনক সরকার জানিয়েছিল, সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে সম্পাদকীয় স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তা খর্ব হয় এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়। ইংল্যান্ড তার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গর্বিত। তার পর ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রীর তরফে আবারও বিবিসির প্রসঙ্গ তোলাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার পটভূমিতে ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আবহে কূটনৈতিক আলোচনায় বার বার বিবিসি প্রসঙ্গ ওঠায় ভারতের অস্বস্তি বাড়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জি২০-র বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতে এসেছেন ব্রিটেন-সহ এই গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন দেশের বিদেশমন্ত্রীরা। মূল বৈঠকের পাশাপাশি, বুধবার পার্শ্ববৈঠকে বসেছিলেন ভারত এবং ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রীরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। সম্প্রতি তা নিয়ে দু’টি পর্বের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে বিবিসি। যার প্রথম পর্বটি দেশে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে মোদী সরকার। তা নিয়ে ব্যাপক চাপান-উতোর শুরু হয় দেশে। আঁচ পড়ে বহির্বিশ্বেও। ঘটনার এক সপ্তাহ পর তা নিয়েই আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে ব্রিটেনের আইনসভা। ইংল্যান্ডের প্রথম পাগড়ি পরিহিত শিখ সাংসদ তনমনজিৎ সিংহ ঢেসির বক্তব্যেও উঠে আসে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে ৫৯ ঘণ্টা তল্লাশির প্রসঙ্গ। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে আমরা অত্যন্ত গর্ব অনুভব করি আমাদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে। যে ভাবে বিবিসি বা অন্যান্য নামী সংবাদমাধ্যম ইংল্যান্ডের সরকার, তার প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদের সমালোচনা করে তার পরেও আমরা এই পথ থেকে সরে আসার কথা ভাবিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। কারণ, একটি তথ্যচিত্র তৈরির পরই এই ‘আয়কর সমীক্ষা’ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy