এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
আগামী মাসে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে নয়াদিল্লিতে, নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে বাগ্যুদ্ধে অবতীর্ণ হল ভারত এবং পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ তাঁর বক্তৃতায়, কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে প্যালেস্টাইনের পরিস্থিতির সঙ্গে তার তুলনা করলেন। মোদী সরকারের ‘মুসলিম বিদ্বেষের’ সমালোচনা করে উপত্যকায় দ্রুত ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হলেন। জবাবে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানালেন, পাকিস্তানের সীমান্তপারের সন্ত্রাসে মদতের নীতি কখনওই সফল হবে না। তাদের সব কাজের ফল ভুগতে হবে।
আগেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে (রাইট টু রিপ্লাই) রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ভাবিকা মঙ্গলানন্দন চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন পাকিস্তানকে। তাঁর শ্লেষ, ইসলামাবাদের ‘ভণ্ডামি’ সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভাবিকার বক্তব্য, যে দেশের গোটা বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসবাদ, মাদক এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ চালানোর জন্য কুখ্যাতি রয়েছে, যে দেশ আসলে সামরিক শাসনের অধীন, তারা কি না বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে আক্রমণ করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। বিষয়টি ‘হাস্যকর’। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে সতর্ক করে ভাবিকা জানান, ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালালে তার অনিবার্য পরিণতির জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে ইসলামাবাদকে।
এর পরে সাধারণ সভায় বক্তৃতায় আরও সুর চড়ান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, “বিশ্বের সব নীতির বিরোধী হল সন্ত্রাসবাদ। কিছু দেশ এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। কিন্তু কিছু দেশ এমন নীতি গ্রহণ করে যার ফল ভয়াবহ। তার অন্যতম উদাহরণ হল আমাদের প্রতিবেশী পাকিস্তান।” বিদেশমন্ত্রীর কথায়, “তাদের কুকাজের ফল অন্যদের, বিশেষত প্রতিবেশীদের ভুগতে হয়। পাকিস্তানের নীতির ফলে তাদের সমাজে ধর্মান্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে তাদের জিডিপি মাপা যায় মৌলবাদ দিয়ে। আর তাদের রফতানির পরিমাপ হয় সন্ত্রাসে। এখন দেখা যাচ্ছে ওই মৌলবাদ তাদের সমাজকেই গ্রাস করেছে। বিশ্বকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এটা তাদের কর্মেরই ফল।” জয়শঙ্করের কথায়, “আমরা এই সভায় কিছু অদ্ভূত কথা শুনেছি। আমি আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করছি। পাকিস্তানের সীমান্তপারের সন্ত্রাসে মদতের নীতি কখনওই সফল হবে না। তাদের কাজের ফল ভুগতে হবে না, এমন আশা পাকিস্তানের থাকা উচিত নয়। সব পদক্ষেপেরই ফল ভুগতে হবে।” বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, “আমাদের এখন পাকিস্তানের সঙ্গে দু’টি সমস্যা মেটাতে হবে। ভারতের বেআইনি ভাবে দখল করে রাখা ভূখণ্ড খালি করতে হবে পাকিস্তানকে। পাশাপাশি ছাড়তে হবে সন্ত্রাসের নীতি।”
২০১৯ সালের অগস্টে মোদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক অধিবেশনের মঞ্চ থেকে ধারাবাহিক ভাবে পাকিস্তান আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছে ভারতকে। ইমরান খান থেকে শাহবাজ় শরিফ—সেই ঐতিহ্য সমানে চলেছে। শুক্রবার তাঁর কুড়ি মিনিটের বক্তৃতায় লাগাতার ভারতকে আক্রমণ করেছেন শাহবাজ়। তিনি বলেন, প্যালেস্টাইনের মানুষের মতোই জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষও এক শতক ধরে স্বাধীনতা এবং নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করে চলেছেন।
পাক প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, ভারতে মুসলমানদের নিশানা করা হচ্ছে, গোটা বিশ্বেই বাড়ছে ইসলাম বিরোধিতা। কিন্তু মুসলমান-বিরোধী প্রবণতার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হল ভারতে। ভারতে হিন্দুত্ববাদের নেতৃত্ব তৈরি করার কর্মসূচি চলছে। তারা ভারতের কুড়ি কোটি মুসলমানের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া এবং ভারতের ইসলামি ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে উদ্যত।
জবাবে ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, “আফশোসের বিষয় যে সকাল সকালই এই অধিবেশনে মিথ্যাচারের সাক্ষী হতে হল। বিশ্ব জানে, দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসকে তাদের অস্ত্র বানিয়ে রেখেছে। তারা আমাদের সংসদ, আমাদের বাণিজ্য রাজধানী মুম্বই, বাজার, তীর্থস্থানগুলিকে আক্রমণ করেছে। এই তালিকা দীর্ঘ। সেই দেশ যখন অন্য কোনও রাষ্ট্রের হিংসা নিয়ে কথা বলে, তাকে
ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু বলা চলে না। যারা ঐতিহাসিক ভাবে নির্বাচনে কারচুপি করে, তাদের মুখে রাজনৈতিক পথের সন্ধান করার মতো উপদেশ মানায় না।”
এখানেই না থেমে ভাবিকার বক্তব্য, “পাকিস্তান আমাদের ভূখণ্ড দখল করতে চায়। জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচন বানচাল করার জন্য ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার করে যাচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।”
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর সে রাষ্ট্রে ইসলামি মৌলবাদের দাপট বাড়ছে বলে আশঙ্কায় নয়াদিল্লি। সেইসঙ্গে ভারতের কাছে খবর, ১৯৭১-এর গণহত্যার স্মৃতি ভুলে পাকিস্তানের দিকে মৈত্রীর হাত বাড়িয়েছে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। আজ তাঁর বক্তৃতায় একাত্তরের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে দেখা গিয়েছে ভারতীয় কূটনীতিবিদকে। তিনি বলেন, “যে রাষ্ট্র ১৯৭১ সালে গণহত্যা করেছে, এখনও যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পীড়ন করছে, তাদের এতটাই সাহস যে আজ অসহিষ্ণুতা এবং শান্তি নিয়ে মুখ খুলছে। আমরা এমন একটি দেশের কথা বলছি, যারা দীর্ঘ দিন ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল। আমরা এমন একটি দেশের কথা বলছি, যাদের হাতের ছাপ বিশ্বের বহু সন্ত্রাসবাদী হামলায় রয়েছে।” কাশ্মীর নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে আদৌ মেনে নেওয়া যায় না, বলেছেন ভাবিকা। তাঁর কথায়, “একই কথা বারবার বললে পরিস্থিতি বদলায় না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট এবং তাকে বারবার খোঁচানোর প্রয়োজন নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy