Advertisement
১৬ অক্টোবর ২০২৪
S. Jaishankar

পাকিস্তানে জয়শঙ্কর, তবে তৈরি ‘গোয়া পরিস্থিতি’র জন্যও

সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় জয়শঙ্কর পাকিস্তানে থাকবেন ঠিকই। কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইসলামাবাদ সফরের সিদ্ধান্ত পরোক্ষে ভারতের থেকে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বার্তাই দেওয়া হল বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।

এস জয়শঙ্কর।

এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০৩
Share: Save:

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিমান ইসলামাবাদের নুর খান এয়ারবেস-এর টারম্যাক ছুঁল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। করমর্দন করলেন এয়ারবেসে উপস্থিত পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিক,ফুল হাতে দুই বালক-বালিকা। উপলক্ষ্য, এসসিও সরকারি প্রধানদের সম্মেলনে যোগদান।

কিন্তু কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দীর্ঘ ন’বছর পরে পাকিস্তানের মাটিতে কোনও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীরএই সফর কূটনীতির স্থায়ীক্যালেন্ডারে ঢুকে পড়ল। আজ রাতে এসসিওভুক্ত অন্যান্য রাষ্ট্রেরনেতাদের পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের আয়োজিত নৈশভোজে যোগদিয়েছেন জয়শঙ্কর।

সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় জয়শঙ্কর পাকিস্তানে থাকবেন ঠিকই। কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইসলামাবাদ সফরের সিদ্ধান্ত পরোক্ষে ভারতের থেকে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বার্তাই দেওয়া হল বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। এমনকি, এক পা এগিয়ে বিষয়টিকে তারা ‘আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ’ হিসেবেও দেখাতে চাইছেন। বক্তব্য, বল এখন পাকিস্তানের কোর্টে। জয়শঙ্করের এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য, ‘ইসলামাবাদের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক— দু’ধরনের আচরণের পাল্টা দেওয়ার জন্য সাউথ ব্লক প্রস্তুত।’

এ কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সুষমা স্বরাজ আফগানিস্তান বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে২০১৫ সালে যে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন, আজ সে দেশের হাল তার থেকে অনেকটাই খারাপ।দশকের পর দশক বিদেশি ঋণের উপর নির্ভর করে দেশ চালিয়ে এবং আর্থিক সংস্কার না করে আজ দৃশ্যতই কোণঠাসা পাকিস্তান। চিন ব্যবহার করে গিয়েছে পাকিস্তানকে নিজেদের ভূকৌশলগত স্বার্থে। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসকেই প্রধান রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে কাজে লাগাতে গিয়ে পাকিস্তানের নিজের ভাঁড়ারে যে টান পড়েছে, তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ করেনি সে দেশের কোনও সরকারই। এই অবস্থায় গত মার্চ মাসে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার খুবই আলগা ভাবে ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য সম্পর্কে এগোনোর ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্পর্ক যেখানে এতটাই তিক্ত, সেখানেএ ভাবে হাওয়ায় ছোড়া কথারকোনও মূল্য নেই বলেই মনে করেছে বিদেশ মন্ত্রক।

তবুও শরিফের ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলামাবাদ পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টিকে কেন অল্প সময়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম বলে মনে করা হচ্ছে? তার কারণ ঠিক দেড় বছর আগে গোয়ায় এই এসসিও বিদেশমন্ত্রী সম্মেলনেই পাকিস্তানের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টোর সঙ্গে তিক্তবাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন জয়শঙ্কর। ভারত-পাকিস্তানসাম্প্রতিক কূটনৈতিক আদানপ্রদানে সেটাই ছিল সর্বনিম্ন বিন্দু।ভুট্টো সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসসিও-র কর্মসূচি ছেড়ে ভারত-নিন্দায় উঠে পড়ে লেগেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে দুষেছিলেন মোদী সরকারকে।

জয়শঙ্করও সে বার ছেড়ে কথা বলেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘উনি (ভুট্টো) সন্ত্রাসবাদী কারখানার মুখপাত্র এবং সংগঠকও বটে। এটাই এখন পাকিস্তানের মূল স্রোত। সন্ত্রাসবাদের শিকার কখনওই এক টেবিলে বসে সন্ত্রাসবাদের কারিগরের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ নিয়েই আলোচনা করে না।’ শ্লেষাত্মক স্বরে তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ের থেকেও দ্রুত গতিতে পড়ছে সেই দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা।’

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আপাতত খোলা মনেই ইসলামাবাদে গিয়েছেন জয়শঙ্কর। কিন্তু কাশ্মীরবা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কোনও উস্কানিমূলক মন্তব্য যদি এসসিও সম্মেলনের আগে, পরে বা চলাকালীন উঠে আসে, ভারত চুপ করে শুনবে না। এ বারে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে বা গত বছরগোয়ার এসসিও সম্মেলনে যে ভাবে ভারত এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, তার থেকেই এইইঙ্গিত স্পষ্ট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE