Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine war: ‘সরকার দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক, দেরির মূল্য পরিবারকে যেন না চোকাতে হয়’

গুজরাটের ভারুচে আমার বাড়ি। সেখানে মা-বাবা আর দুই ভাইবোন আছেন। আমিই বড়। হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে আর ভয়েস কলে যোগাযোগ রেখেছি বাড়ির সঙ্গে। ভিডিয়ো কল করতে চাই না। আমাকে এত কষ্ট পেতে দেখলে ওঁরা আরও কষ্ট পাবেন।

বেকেটোভার ব্যাঙ্কারে আশ্রয়ে পড়ুয়ারা।

বেকেটোভার ব্যাঙ্কারে আশ্রয়ে পড়ুয়ারা। ছবি: দীপশিখা দাসের সৌজন্যে।

পটেল সীমা সফিক মহম্মদ
কিভ শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:০২
Share: Save:

ইউক্রেনের সময় এখন সকাল ১১টা ৩০ মিনিট। শেষ বার খেয়েছিলাম, কাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ। আপেল আর কিছু বিস্কুট। ব্যস। তার পর থেকে বাঙ্কারে। সারা রাত ছিলাম সেখানে। মাইনাস তাপমাত্রায়। চকোলিভস্কি বুলেভার্ডের সাত নম্বর হস্টেলের ঘরে ফিরেছি সকালে। গত কয়েক দিন ধরে এটাই আমাদের রুটিন। কিভের একটি মেডিক্যাল কলেজে আমি চতুর্থ বর্ষের ডাক্তারির ছাত্রী।

এয়ার বা গান স্ট্রাইক সাধারণত রাতেই হয়। তাই মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের বম্ব শেল্টারে আমাদের রাতে চলে যাওয়ার কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে গতকাল রাতেও বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পেরেছি। আতঙ্ক আর ঠান্ডায় রাতে দু’চোখ এক করতে পারি না। আমরা বন্ধুরা একে অপরকে আঁকড়ে লড়াই করছি। জানি না আর কত দিন পারব।

খাবার ফুরিয়ে আসছে। তাই কম করে খাচ্ছি। বন্ধুরা পালা করে এক বেলা রান্না করছি। জল প্রায় শেষ। এর পরে কী হবে! জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বাড়ছে। জীবনেও কল্পনা করিনি যে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, যেখানে জল রেশন করে পান করতে হবে। রাতে তাপমাত্রা অনেকটা নেমে যায়। সেখানে বেসমেন্টের বাঙ্কারের পুরনো স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তাপমাত্রা আরও নীচে চলে যায়। একাধিক গরম কোট গায়ে চড়িয়ে শোয়া যায় না। আধশোয়া হয়ে বসেই অর্ধেক সময় কেটে যাচ্ছে। রাতগুলো মহাসমুদ্রের মতো। শেষ হতে চায় না।

চোখের পাতা জুড়িয়ে এলেও বোমা বা গুলির শব্দে ঘুম ছুটে যায়। আতঙ্ক গিলে খাচ্ছে। যত দূর জানি, প্রায় আটশো ভারতীয় শুধু আমাদের এই হস্টেলেই আটকে আছি। সকলের এখন একটাই প্রার্থনা, যত দ্রুত সম্ভব নিজের দেশে ফেরা। এ জন্য ভারতীয় দূতাবাস থেকে অনেক বেশি সাহায্যের দরকার ছিল। হয়তো তারা করছে, কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক আটকে থাকা ছাত্রছাত্রীদের কাছে সেটা পৌঁছচ্ছে না।

পশ্চিম ইউক্রেনের সীমান্তে পৌঁছনো এই মুহূর্তে যদি একটা চ্যালেঞ্জ হয়, অন্য চ্যালেঞ্জ শীতের রাতের মাইনাস তাপমাত্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখনও দিন পার করে অভুক্ত
অবস্থায় সীমানা পারাপারের অপেক্ষা করা। ওখানে পৌঁছে ৩০-৪০ কিমি হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিতে হচ্ছে। এ দিকে বর্ডারের আশপাশে খাবার বা পানীয়ের কোনও দোকান বা থাকার ব্যবস্থাও নেই বলেই শুনছি। হস্টেলে থেকে এই লড়াইয়েই শক্তি ক্ষয়ে যাচ্ছে। সীমানা পারাপারের ওই কষ্ট কী ভাবে সহ্য করতে পারব জানি না। সর্বশক্তিমানের কাছে শুধুই প্রার্থনা করে চলেছি।

হস্টেলের একটা ঘরে তিন বন্ধু থাকতাম। কাল ছ’জন একসঙ্গে ছিলাম। বাঙ্কারে থাকছি ১০-১৫ জন বন্ধু জোট বেঁধে। অদিতি, সকেতা, হামজ়া, অনুরাগ, অখিল, খুশিকা, অনুরুতি এবং অন্যান্যরা একে অন্যের মনের জোর বাড়িয়ে চলেছি। সেটাই একমাত্র ভরসার কথা।

গুজরাটের ভারুচে আমার বাড়ি। সেখানে মা-বাবা আর দুই ভাইবোন আছেন। আমিই বড়। হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে আর ভয়েস কলে যোগাযোগ রেখেছি বাড়ির সঙ্গে। ভিডিয়ো কল করতে চাই না। আমাকে এত কষ্ট পেতে দেখলে ওঁরা আরও কষ্ট পাবেন। আমাদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করে চলেছেন মা-বাবা।

দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রার্থনা, ভারত সরকার দ্রুত দেশে ফেরানোর চেষ্টা করুক। এই দেরির মূল্য আমাদের পরিবারকে যেন না-চোকাতে হয়।

লেখক ডাক্তারি পড়ুয়া

অনুলিখন: জয়তী রাহা

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Medical Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy