আপাতত থমকালেও সব রাজ্যের পাঠ্যক্রমে হিন্দি চালু করার দাবিতে আগামী দিনে সরকারের উপরে চাপ বাড়ানোর প্রশ্নে পিছু হটছে না সঙ্ঘ পরিবার।
গত বিজয়া দশমীর দিন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত বলেছিলেন, নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। সঙ্ঘ পরিবারের সুপারিশ ছিল, নতুন শিক্ষানীতিতে যেন ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে। বিদেশি ভাষা নয়, উচ্চশিক্ষা যেন অর্জন করা যায় হিন্দি বা সংস্কৃতে। ভাগবতের ওই বক্তব্যের তিন মাসের মধ্যে গত জানুয়ারিতেই নতুন শিক্ষানীতির খসড়া চূড়ান্ত হয়ে যায়। যদিও ভোটের কথা ভেবে তা নিয়ে এগোনোর ঝুঁকি নেননি মোদী।
দ্বিতীয় বার জিতে এসে শপথ গ্রহণের পরের দিনই খসড়া শিক্ষানীতি সামনে আনে মোদী সরকার। সেখানে মূলত অ-হিন্দিভাষী আটটি রাজ্যে হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসাবে বাধ্যতামূলক করা হবে বলে সুপারিশ ছিল। দক্ষিণ থেকে পূর্ব, একাধিক রাজ্য প্রতিবাদে সরব হয়।
বিতর্ক থামাতে খসড়া নীতিতে পরিবর্তন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সরকার। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, গোটা দেশের জন্য অভিন্ন ভাষা হিসেবে হিন্দিকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই জারি থাকবে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, জল মাপতেই বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। যাতে বিরোধিতার ধার আঁচ করে নিয়ে আগামী দিনে প্রয়োজনীয় রণকৌশল নেওয়া যায়। বিরোধীদের মতে, শিক্ষাব্যবস্থায় সঙ্ঘের নীতি রূপায়ণ করতেই সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ককে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরেই সঙ্ঘ পরিবার গোটা দেশে ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’ নীতি প্রণয়নের পক্ষে। যে নীতির দীর্ঘমেয়াদি
লক্ষ্য হল দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা। তার জন্য হিন্দির মতো একটি ভাষাকে গোটা দেশে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলা প্রয়োজন। বিজেপি খুব ভাল করেই জানে, এ ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হলে তাতে বিরোধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। তাই সাংস্কৃতিক ভাবে তথা সরকারি কাজে হিন্দিকে আরও বেশি করে ব্যবহার করে হিন্দির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে সরকার।
প্রচেষ্টাটা শুরু হয়েছে গত সরকারের আমল থেকেই। দিল্লিতে একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা এক আমলার পর্যবেক্ষণ, গত পাঁচ বছরের মোদী শাসনে সরকারি কাজে প্রচ্ছন্ন ভাবে হিন্দির ব্যবহার অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। সরকারি ফাইলের মন্তব্যেও অনেক ক্ষেত্রে হিন্দির
ব্যবহার চোখে পড়ছে। যা ইউপিএ আমলে ভাবা যেত না। ১৪ সেপ্টেম্বর হিন্দি দিবস উপলক্ষে সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে ‘হিন্দি পাখওয়াড়া’ অনুষ্ঠান করা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের শাখাগুলিতেও ওই অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি অটলবিহারী বাজপেয়ীর পথে হেঁটে রাষ্ট্রপুঞ্জেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে একাধিক বার দেখা গিয়েছে হিন্দিতে বক্তব্য রাখতে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে স্বাভাবিক কারণেই বিদেশ মন্ত্রকের কাজকর্মে ইংরেজির প্রাধান্য বেশি ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে লক্ষণীয় ভাবে জায়গা করে নিয়েছে হিন্দিও। তা সে সাংবাদিকদের
দেওয়া বিবৃতিই হোক বা মন্ত্রকের সরকারি বক্তব্য।
১৯৮৬ সালে এ দেশে তৈরি হয়েছিল জাতীয় শিক্ষা নীতি। পরে সেটি সংশোধিত হয় ১৯৯২ সালে। তার পরে এ যাবৎ সে ভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি হয়নি। বাজপেয়ীর আমলে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মুরলীমনোহর জোশীর বিরুদ্ধে
শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগ এনেছিলেন বিরোধীরা। পরে অর্জুন সিংহ শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়ে তা বাতিল করেন। এখন ফের
মোদীর দ্বিতীয় কার্যকালে জাতীয় শিক্ষানীতি এনে শিক্ষার খোলনলচে বদলে ফেলা হবে আশঙ্কা বিরোধীদের। হিন্দিকে অভিন্ন ভাষা হিসাবে তুলে ধরা তারই অংশ বলে মনে করছেন বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy