বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দুদের এ দেশে আশ্রয় দেওয়ার চিন্তাভাবনার বদলে তাঁদের ভিটেমাটিতেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে আরএসএস মনে করছে। আজ বেঙ্গালুরুতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভায় বাংলাদেশের হিন্দুদের উপরে হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আরএসএসের বক্তব্য, বাংলাদেশে হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ নতুন কিছু নয়। সেই কারণেই বাংলাদেশের জনসংখ্যায় হিন্দুদের হার ১৯৫১ সালের ২২.৫ শতাংশ থেকে এখন ৭.৯৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এখন হিন্দুদেরউপরে হামলায় সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক মদত রয়েছে। তার ফলে বাংলাদেশে হিন্দুদের এখন অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সে ক্ষেত্রে কি বাংলাদেশের হিন্দুদের শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার কথা ভাবা উচিত? আরএসএসের সহ-সরকার্যবাহ বা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার বলেন, ‘‘দেশভাগের পরে নেহরু-লিয়াকত চুক্তিতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল। যাঁরা যেখানকার বাসিন্দা, তাঁদের সেখানেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং বর্তমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদের বিদেশ মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, জয়শঙ্কর বৈঠকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে ইউনূস সরকারকে বারবার ভারতের উদ্বেগের বার্তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ কথাও তিনি বলেছেন যে এই সরকার যেহেতু জনতার ভোটে জিতে আসা গণতান্ত্রিক সরকার নয়, নেহাতই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা, তাই তাদের সঙ্গে কোনও পাকাপোক্ত কূটনৈতিক বৈঠক করা বা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। জানা গিয়েছে, বিরোধী সাংসদদের পক্ষ থেকে মোদী সরকারের বাংলাদেশ নীতি নিয়ে সমালোচনা করা হয়নি। কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল, মণীশ তিওয়ারি, শিবসেবা (উদ্ধব)-এর প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীরা বৈঠকেহাজির ছিলেন।
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে আক্রমণের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবস্থান নিয়ে আরএসএসের অরুণ কুমার বলেন, “আমরা ভারত সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। ভারত সরকার এ বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিদেশসচিবকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারত এ বিষয়টি তুলে ধরছে। লাগাতার চাপ বজায় রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিকেও বাংলাদেশের উপরে চাপ তৈরি করতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, এর পিছনে ইসলামি শক্তির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শক্তিরও ভূমিকা রয়েছে। পাকিস্তান এবং আমেরিকার ‘ডিপ স্টেট’ ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি করতে অবিশ্বাস ও সংঘাতের আবহতৈরি করছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)