আরএসএসে প্রথম প্রকাশ্য বিদ্রোহের আঁচ যাতে অন্যত্র ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বারে যৌথ ভাবে আসরে নামছেন বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
কোঙ্কণি ও মরাঠা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে গোয়ার আরএসএস প্রধান সুভাষ ভেলিঙ্গর প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আরএসএস তাঁকে বের করে দিতে প্রতিবাদে আরও শ’চারেক সঙ্ঘ কর্মী ইস্তফার হুমকি দিয়েছেন। সঙ্ঘ সূত্রের মতে, কম-বেশি অনেক রাজ্যেই আরএসএস কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করলেও সঙ্ঘের কর্মীদের অসন্তোষ ধামাচাপা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে উভয়ের সমন্বয় বাড়াতে আগামী সপ্তাহে দিল্লির উপকন্ঠে বৈঠকে বসছেন সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতারা।
বিজেপি সূত্রের মতে, সেপ্টেম্বরের ১০ থেকে ১২ তারিখ দিল্লির পাশেই হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে বিজেপি ও সঙ্ঘের সাংগঠনিক সচিবদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেখানে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নিয়ে আলোচনা হবে। সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সঙ্ঘের ক্ষোভ বারুদের স্তূপের আকার নিয়েছে। এটিকে প্রশমন করার রাস্তাই হল উভয়ের সমন্বয় আরও বাড়ানো।’’ সঙ্ঘ সূত্রের মতে, বিহারের ভোটের সময়ও সঙ্ঘের ভিতরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। সঙ্ঘের মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’-তেও লেখা হয়েছিল, এনডিএতে সব কিছু ঠিক নেই। মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি সরকারি পদোন্নতিতে সংরক্ষণ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে আরএসএসের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের মতে, এর ফলে সাধারণ শ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। সঙ্ঘের শীর্ষনেতা ভাইয়াজি জোশী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বকে বার্তা দিতেই রোমে মোদীর দল
আর যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন, তাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তো উঠতে বসতেই প্রকাশ্যে সরব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সঙ্ঘের মধ্যে থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে এমন জিহাদ রুখতে আসরে নেমেছেন খোদ মোহন ভাগবত। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে সঙ্ঘের সব শাখাকে নিয়ে বৈঠকে তিনি বলেছেন, কোনও ভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করা যাবে না। এই বৈঠকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের নেতারাও ছিলেন। তা সত্ত্বেও ক্ষোভ ঠেকানো যায়নি। সদ্য কালই মোদী-বিরোধী বলে পরিচিত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া ফের তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
শুধুমাত্র বিজেপির বিরুদ্ধেই সঙ্ঘের ক্ষোভ আছে এমন নয়, বিভিন্ন রাজ্যে এর উল্টোটাও দেখা যাচ্ছে। যেমন, কেরলে সঙ্ঘের হস্তক্ষেপ নিয়েও বিজেপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। দলের প্রবীণদের অগ্রাহ্য করে সঙ্ঘের ‘দাদাগিরি’ আরও বাড়ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। সেখানে বিজেপি নেতারাই দল ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতারা মনে করছেন, উপরের স্তরে মোটের উপর ‘বোঝাপড়া’ থাকলেও নিচুতলায় তা পৌঁছে দিতে হবে। গোয়ার বিদ্রোহকারী আরএসএস নেতাকে বের করে দিয়ে মোহন ভাগবত স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও বিদ্রোহ বরদাস্ত করা হবে না। বিজেপি গোয়ায় সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের কাছে টানতে যদি বাকি ভাষার সঙ্গে ইংরেজি ভাষাকেও গুরুত্ব দেয়, সঙ্ঘের তাতে আপত্তি নেই। বড়জোর সেই বিষয়টি নিয়ে আরও বিতর্ক তোলা যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে প্রকাশ্য বিদ্রোহ? নৈব নৈব চ।
সঙ্ঘের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘আজ এত বড় ধর্মঘট হল। কিন্তু সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন এই বনধের পক্ষে থাকলেও তাদের বুঝিয়ে নিরস্ত করা গিয়েছে। যাতে এমন বার্তা না যায়, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সঙ্ঘের সংগঠন বনধ করছে। বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার পরেও স্বদেশি জাগরণ মঞ্চকে নিরস্ত্র করা হয়েছে প্রকাশ্য আন্দোলন থেকে। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আরও বেশি করে সমন্বয় প্রয়োজন, যাতে লোকসভা ও পরের বিধানসভা ভোটগুলির হাতে একজোট হয়ে কাজ করতে পারে সঙ্ঘ ও বিজেপি। আর যা যা আপত্তি থাকবে, সেটি দল ও সঙ্ঘের ভিতরে আলোচনার মাধ্যমেও সমাধান করা যাতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy