যোগী আদিত্যনাথ (বাঁ দিকে) এবং মোহন ভাগবত (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের গেরুয়া শিবিরের খারাপ ফলের কারণ খুঁজতে শনিবার অবশেষে বৈঠকে বসলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লোকসভার ফলকে মাথায় রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন ভাগবত। সূত্রের মতে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে তৈরি বিভাজন রেখাকে মুছে দেওয়ার লক্ষ্যেই গত কাল যোগীর সঙ্গে বৈঠক করেন ভাগবত।
গত বুধবার থেকে গোরক্ষপুরে রয়েছেন ভাগবত। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে শনিবারই গোরক্ষপুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন আদিত্যনাথ। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, একই শহরে থাকলেও দুই নেতার মধ্যে দেখাই হয়নি। পরে অবশ্য জানা যায়, শনিবার সারা দিনে দু’বার যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। সূত্রের মতে, শনিবার দুপুরে ক্যাম্পিয়ারগঞ্জে আরএসএসের একটি অনুষ্ঠানে প্রথমে দু’জনের দেখা হয়। সেখানে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় দু’নেতার। তার পরে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পাক্কিবাগ এলাকায় সরস্বতী শিশু মন্দির স্কুলে ফের দেখা হয় দু’জনের। সেখানেও রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দু’জনে।
প্রশ্ন হল, এমন কী হল যাতে দিনে দু’বার যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করে বৈঠক করলেন ভাগবত? বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্ব উভয়েই এ প্রশ্নে চুপ। দুই শিবির একে রুটিন বৈঠক বললেও সূত্রের মতে, প্রথম বৈঠকের পরে যোগীকে নির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য জানিয়েছিলেন ভাগবত। লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের প্রেক্ষিতে রাজ্যের সাংগঠনিক স্তরে কিছু রদবদলের নিয়েও আলোচনা হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে সেই সম্ভাব্য রদবদল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় দু’পক্ষের।
চলতি লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ শিবিরের সঙ্গে যোগী শিবিরের আড়াআড়ি বিভাজন কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিজেপি শিবিরের অনেকের মতে, উত্তরপ্রদেশের যোগীর পছন্দের প্রার্থীদের টিকিট না দেওয়া, তাঁকে প্রচারে গুরুত্বহীন করে রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে দেখে কার্যত বসে যায় যোগী শিবির। যা প্রভাব ফেলে লোকসভা নির্বাচনে। মাত্র ৩৩টি আসনে জেতে বিজেপি। ২০১৯ সালের চেয়ে ২৯টি আসন কমে যায় বিজেপির। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই ফলে অশনি সঙ্কেত দেখছে গেরুয়া শিবির। তাই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দলীয় স্বার্থে একজোট হয়ে কাজ করার পক্ষে সওয়াল করেন ভাগবত। আড়াই বছর পরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তাই রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে এখন থেকেই শক্ত হাতে রাশ টানার জন্য যোগীকে পরামর্শ দেন ভাগবত।
হিন্দুত্বকে সামনে রেখে আরএসএসের যে বৃহত্তর ভারতীয় হিন্দু সমাজকে একজোট করার নীতি রয়েছে, তা এবারে ধাক্কা খেয়েছে অযোধ্যা ও বারাণসীর মতো তথাকথিত হিন্দুত্বের দুই কেন্দ্রে। বারাণসীতে মোদী কোনও ভাবে জিতলেও অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের বছরে দু’বারের জয়ী বিজেপি প্রার্থী হেরে গিয়েছেন। জিতেছেন সমাজবাদী পার্টির টিকিটে লড়া দলিত সমাজের প্রার্থী। বিজেপি নেতারা মানছেন, অযোধ্যা ও বারাণসীতে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হিন্দুত্বের ‘কর্পোরেট’ সংস্কৃতি যে স্থানীয় জনতা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, তা তা বুঝিয়ে দিয়েছে এ বারের ফলাফল। সূত্রের মতে, এই আবহে বিকল্প রণনীতি কী হতে পারে, তা নিয়েও বিস্তারিত কথা হয়েছে দুই নেতার। আগামী বছর সঙ্ঘের একশো বছর পূর্তি হতে চলেছে। তার আগে কী ভাবে নতুন করে উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্বের হাওয়া তোলা সম্ভব, কী ভাবে দূরত্ব মুছে দিয়ে বিজেপি ও আরএসএস কর্মীরা এক সঙ্গে এগোবেন, তা নিয়েও গত কালের বৈঠকে আলোচনা হয় দুই নেতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy