ফাইল চিত্র।
বিজেপি বনাম নীতীশ কুমারের ঠান্ডা যুদ্ধে নতুন মোড়। পটনায় ফের পালাবদলের জল্পনা!
এক দিকে রবিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ ঘোষণা করে দিল, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তাদের দলের কোনও প্রতিনিধি থাকবেন না। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরও বড় চমক দিয়ে নীতীশ কুমার ফোন করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে। তাঁর সঙ্গে দেখা করার সময়ও চেয়েছেন। রাজনৈতিক সূত্রের ইঙ্গিত, বিহারে ফের রাজনৈতিক পালাবদলের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামিকালই দলের সব বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন নীতীশ। একই ভাবে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লালু প্রসাদের আরজেডি এবং কংগ্রেসও আলাদা ভাবে তাদের বিধায়কদের বৈঠকে ডেকেছে। সনিয়া গান্ধীকে নীতীশের ফোন এবং তার পরেই তিন দলের এই বৈঠক রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের জল্পনাকে উস্কে দিল।
এমনিতেই ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির তুলনায় কম আসন পেয়েও নীতীশের ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ইস্তক বিজেপি-জেডিইউ জোটে সমস্যা বাড়ছিল প্রতিদিন। তার মধ্যেই নীতীশের আপত্তি সত্ত্বেও তাঁর একদা অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জেডিইউ-এর প্রাক্তন জাতীয় সভাপতি আরসিপি সিংহের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া নিয়ে জটিলতা বাড়ে। অসন্তুষ্ট নীতীশ আরসিপি সিংহকে ফের রাজ্যসভা থেকে মনোনীত করেননি। তাঁর সম্পত্তির হিসেব নিয়েও তদন্তের পথে হাঁটার ইঙ্গিত দেন তিনি। এই অবস্থায় শনিবার দল ছেড়ে নীতীশকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলে আক্রমণ শানান আরসিপি। জেডিইউ নেতাদের একাংশের বক্তব্য, বিজেপি নেতাদের উস্কানিতেই এমন মন্তব্য করেছেন আরসিপি। ঘটনাচক্রে আরসিপি সিংহের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠকডেকে জেডিইউ-এর জাতীয় সভাপতি তথা দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা রাজীব রঞ্জন সিংহ ওরফে ললন বলেন, ‘‘২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমরা
কেন্দ্রের সরকারে যোগ দেব না। আমরা সেই সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকারের যোগ না দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমাদের দলের নেতা নীতীশ কুমার, যিনি সেই সময় দলের সভাপতি ছিলেন।’’
বিজেপির শরিক হয়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিহারের শিক্ষামন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা বিজয় কুমার চৌধরি বলেন, ‘‘আমরা নরেন্দ্র মোদীর সরকারে যোগ দিচ্ছি না। জেডিইউ-এর যে সম্মান বিজেপির কাছে পাওয়ার, তা তারা পাচ্ছে না। সে কারণেই আমরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
মোদীর মন্ত্রিসভায় না থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও জোট ছেড়ে বেরনোর কোনও ইঙ্গিত তখন দেননি রাজীব রঞ্জন সিংহ। উল্টে তিনি জানান, রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে সরকার চালাতে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। সেখানে ‘অল ইজ় ওয়েল’!কিন্তু তার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ইঙ্গিত মিলল অন্য রকম। খবর এল, নীতীশ কুমার সরাসরি ফোন করে কথা বলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। পাশাপাশি নিজের দলের বিধায়কদেরও কাল জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন।
এই পরিস্থিতিতে কী হতে পারে, এখন তা নিয়েই জল্পনা চলছে। ২০১৫ সালে বিজেপির জোট ভেঙে লালু প্রসাদের দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। লালুর দলের আসন বেশি থাকলেও ‘পুরনো বন্ধু’ নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব দিয়েছিলেন লালু। সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে জুড়েছিলেন নিজের দুই ছেলে তেজস্বী ও তেজপ্রতাপকে। সেই সরকারের আড়াই বছরের মাথায় ফের বিজেপির হাত ধরেন নীতীশ। মুখ্যমন্ত্রীও হন। তখনই নীতীশকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে দেগেছিলেন আরজেডি নেতারা। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটের ফলে দেখা গেল, দলের বিপুল সংখ্যক আসন হারিয়ে সংখ্যার বিচারে তিন নম্বরে নেমে গিয়েছেন নীতীশ! এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভায় সবচেয়ে বড় দল লালুর আরজেডি। যার নেতা তেজস্বী যাদব। আসন সংখ্যার হিসেব ধরলে লালু-নীতীশ ও কংগ্রেস একজোট হল অনায়াসেই গড়া যাবে সরকার। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে হিন্দি বলয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ক্ষমতা থেকে সরতে হবে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দলকে। প্রশ্ন উঠছে, আগের বারের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আরজেডি কি হাত মেলাবে নীতীশের সঙ্গে?
পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা কি এটা মেনে নেবেন? রাজ্যের বিজেপি নেতারা বহু দিন ধরেই নীতীশের উপরে ‘অসন্তুষ্ট’। নীতীশের দলের নেতাদের অভিযোগ, জাতীয় রাজনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ তকমা পাওয়া নীতীশের সরকারে সঙ্ঘের মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। তা ছাড়া, বেশি আসন এবং মন্ত্রিসভায় বেশি সদস্য থাকার সুযোগ নিয়ে রাজ্য প্রশাসনে রীতিমতো ‘দাদাগিরি’ করছে বিজেপি। সে কারণেই বিজেপিকে বার্তা দিতে একদিকে গত কয়েক মাসে নীতীশকে যেমন লালুর ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে দেখা গিয়েছে, তেমনই মোদীর দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। সাম্প্রতিক অতীতে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে অনুপস্থিত ছিলেন নীতীশ। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে তিনি আসেননি। দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতি পদে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও নীতীশ অনুপস্থিত ছিলেন। তার আগে জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকলেও তাতে নিজে না এসে উপমুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়ে ছিলেন নীতীশ। রবিবার নীতি আয়োগের বৈঠকেও তিনিযোগ দেননি।
এ বার কী হবে? সব নজর এখন সোমবার পটনায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy