Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বহিষ্কৃত রেহানা, বন্ধেও বিতর্ক সঙ্গী শবরীমালার

এ মাসের মতো শবরীমালা মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল আজ।

ঢোকা হল না মন্দিরে। রবিবার শবরীমালায়। ছবি: পিটিআই।

ঢোকা হল না মন্দিরে। রবিবার শবরীমালায়। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শবরীমালা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

এ মাসের মতো শবরীমালা মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল আজ। কিন্তু ছবিটা বদলাল না। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পরে প্রথামতো গত বুধবার থেকে মন্দির পাঁচ দিনের জন্য খুললেও ঋতুমতী কিশোরী ও মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে তেতেই রইল কেরল।

পুঞ্চম দিন অর্থাৎ রবিবারও মোট চার জন তেলুগু মহিলাকে মন্দিরে প্রবেশ থেকে আটকে দেন আয়াপ্পা ভক্তরা। গত শুক্রবার মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন আন্দোলনকারী রেহানা ফতিমা। লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্তদের ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ এনে রেহানাকে সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করেছে ‘কেরালা মুসলিম জামাত বোর্ড।’

আজ আয়াপ্পার মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতেই ভক্তরা পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উপরে মূল বিগ্রহের দিকে আগুয়ান মহিলাদের রুখতে এগিয়ে যান। পাম্বা বেস ক্যাম্প থেকে ২০০ মিটার দূরে আটকে দেওয়া হয় দুই মহিলাকে। তাঁদের বয়স ৪০-এর কোঠায়। এ দিনই ভক্তদের তাণ্ডবের জেরে আতঙ্কে আর এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। তাঁকে শবরীমালার কাছেই একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তা ছাড়া, আর এক মহিলার পরিচয়পত্রে জন্মসাল ১৯৭১ লেখা রয়েছে দেখেই ভক্তরা তাঁকেও ঢুকতে বাধা দেন।

বাসন্তী এবং আধিশেষি নামে প্রথম দুই মহিলার দাবি, তাঁরা এগোনোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভক্তরা ঘিরে ধরে পথ আটকান। জোর করে ফিরে যেতে বলেন। দ্রুত পুলিশ এসে দুই মহিলাকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়। পুলিশের দাবি, ওই মহিলারা তাঁদের জানিয়েছিলেন যে প্রথা না জেনেই চলে এসেছেন তাঁরা। কেরলের মন্দির প্রদর্শনে বেরনো তীর্থযাত্রীদের দলের সঙ্গে এসেছিলেন বাসন্তী এবং আধিশেষি। ওঁদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও নিয়ম মেনে দলের পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের বাধা দেয়নি কেউ। মন্দিরের শতাব্দী-প্রাচীন প্রথা ভাঙতে চান না— আয়াপ্পা ভক্তদের সামনে লিখিত ভাবে পুলিশকে এ কথা জানাতে বাধ্য হয়েছেন বাসন্তী এবং আধিশেষি।

তৃতীয় মহিলা অর্থাৎ বালাম্মার বয়স ৪৭। অসুস্থ হয়ে এখন হাসপাতালে। পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়াই তিনি এ দিন পাহাড়ে উঠে ৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়েছিলেন। কারও নজরে পড়েননি। মূল বিগ্রহের বেশ কিছুটা কাছে চলে যেতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন ভক্তরা। পুলিশ আটকায়নি বলে অভিযোগ। ভক্তদের হেনস্থা চলাকালীন মহিলা অচেতন হয়ে পড়েন। চতুর্থ মহিলার পরিচয়পত্র দেখে তাঁকে আগেই থামিয়ে
দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরে ৫০-এর নীচে বয়স এমন মাত্র ন’জন মহিলা গত বুধবার থেকে শবরীমালায় ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কেউই পারেননি। মাসের পুজো শেষে সোমবার থেকে মন্দির বন্ধ। কেরলের আইজি এস শ্রীজিত বলেছেন, ‘‘আমরা মহিলাদের সব রকম নিরাপত্তা দিচ্ছি, কিন্তু পুরোহিতের সম্মতি ছাড়া দর্শন করা যায় না।’’ গত শুক্রবার এই শ্রীজিতই নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে দুই মহিলাকে মন্দিরে ঢুকতে সাহায্য করেছিলেন। সফল হননি। রাজ্যের পুলিশ প্রধান লোকনাথ বহেরা জানান, শবরীমালা নিয়ে কোথায় পুলিশের গাফিলতি রয়েছে, তা দেখতে আলোচনা হবে। কারণ আগামী মাসে ফের মন্দির খুললে তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

এর মধ্যে শবরীমালা কর্মসমিতি আবার রাজ্যে সিপিএম শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করার দিকে জোর দিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত রাজ্য বেশি দ্রুত কার্যকর করার চেষ্টা করছে বলে আপত্তি কর্মসমিতির। আয়াপ্পা মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে ভক্তদের নিয়ে বিভিন্ন থানার উদ্দেশে প্রতিবাদ মিছিল করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। রাজ্যের অন্যতম ধর্মীয় স্থান এরুমেলিতে কয়েকশো মহিলাকে নিয়েই আর একটি মিছিল হয়েছে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি পি এস শ্রীধরন পিল্লাই বিধানসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, সিপিএম প্রাচীন মন্দিরের প্রথা ভঙ্গের চেষ্টা করছে। সিপিএম পলিটবুরোর সদস্য এস রামচন্দ্রনের মতে, যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁরা সমাজের সমর্থন পাচ্ছেন না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy