সাঙ্কেতিক নাম ‘ব্ল্যাক টাইগার’, পাক সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন এই ভারতীয় এজেন্ট
পরবর্তীতে রবীন্দ্র ওরফে আহমেদ করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পূর্ণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত হন কমিশনড অফিসার হিসেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ১৫:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
অভিনয় করতে ভালবাসতেন। সেটাই হয়ে দাঁড়াল বেঁচে থাকার মূল শর্ত। যন্ত্রণাবিদ্ধ মৃত্যুতে শেষ হয়েছিল তাঁর বেঁচে থাকা। আজীবন দেশের জন্য কাজ করেও অধরা থেকে গিয়েছে ‘বীর’ বা ‘শহিদ’-এর পরিচয়। কারণ, রবীন্দ্র কৌশিক ছিলেন ‘গুপ্তচর’।
(ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক)
০২১৭
চরবৃত্তির ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত যে কয়েক জনের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতে, তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্র কৌশিক অন্যতম। অনেকের মতে, বিপক্ষের ঘাঁটিতে গিয়ে তাঁর মতো কাজ আর কোনও ভারতীয় আন্ডারকভার এজেন্ট করতে পারেননি।
(ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক)
০৩১৭
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে রবীন্দ্রর জন্ম ১৯৫২-র ১১ এপ্রিল। এই শহর থেকেই তিনি স্নাতক হন। লখনউয়ে জাতীয় স্তরের নাটক প্রতিযোগিতায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁকে চোখে পড়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা ‘র’-এর আধিকারিকদের।
০৪১৭
শোনা যায়, রবীন্দ্রকে প্রস্তাব দেওয়া হয় পাকিস্তানে গিয়ে ‘র’-এর আন্ডারকভার এজেন্ট হয়ে কাজ করার। এর পর দু’বছর ধরে দিল্লিতে কঠোর অনুশীলন পর্ব চলে তাঁর। কিন্তু অধিকাংশ আন্ডারকভার এজেন্টদের মতো তাঁকেও সরকারি ভাবে মেনে নেওয়া হয়নি।
০৫১৭
উর্দুর পাশাপাশি রবীন্দ্রকে শেখানো হয় ইসলামিক সংস্কৃতির খুঁটিনাটি। রাজস্থান-পঞ্জাব সীমান্ত শহর গঙ্গানগরের ছেলে হওয়ায় এমনিতেই তিনি পঞ্জাবিতে চোস্ত ছিলেন। তাঁকে এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে পাকিস্তানের জনজীবনে মিশে যেতে কোনও সমস্যা না হয়।
০৬১৭
১৯৭৫ সালে ২৩ বছরের তরুণ রবীন্দ্র দুবাই, আবুধাবি হয়ে পৌঁছন পাকিস্তানে।। তাঁর নতুন পরিচয় হয় নবি আহমেদ শাকির। নষ্ট করে ফেলা হয় তাঁর ভারতীয় পরিচয়ের যাবতীয় নথি।
০৭১৭
পরবর্তীতে রবীন্দ্র ওরফে আহমেদ করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পূর্ণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত হন কমিশনড অফিসার হিসেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দরজির মেয়ে আমানতকে বিয়ে করেছিলেন রবীন্দ্র। তাঁদের একটি সন্তানও হয়েছিল।
০৮১৭
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ অবধি রবীন্দ্র কৌশিক বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর পাঠানো তথ্য দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক)
০৯১৭
বলা হয়, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্ল্যাক টাইগার’। এটাই ছিল তাঁর সাঙ্কেতিক নাম। কিন্তু আর এক ‘র’ এজেন্টের নির্বুদ্ধিতার মাশুল দিয়েছিলেন রবীন্দ্র।
১০১৭
আশির দশকের গোড়ায় ইনায়ৎ মসিহা নামে আর এক আন্ডারকভার এজেন্টকে পাঠিয়েছিল ‘র’। পরিকল্পনা ছিল, তিনি রবীন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে কাজে সাহায্য করবেন।
১১১৭
কিন্তু অভিযোগ, ইনায়তের নির্বুদ্ধিতায় সব গোপনীয়তার আবরণ খসে যায়। প্রথমে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়েন ইনায়ত। তার পর তিনি নাকি প্রকাশ করে দেন রবীন্দ্র কৌশিকের আসল পরিচয়।
১২১৭
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, শিয়ালকোটের এক ঘাঁটিতে দু’বছর জেরার নামে রবীন্দ্র কৌশিকের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। ১৯৮৫ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে পাকিস্তান হাইকোর্টে তাঁর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হয়।
১৩১৭
এর পর ১৬ বছর ধরে শিয়ালকোট, কোট লখপত, মিয়ানওয়ালি-সহ পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরের কারাগারে ছিলেন বন্দি রবীন্দ্র। তাঁর পরিবারের দাবি, কারাবন্দি অবস্থাতেও গোপনে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেখানে লেখা ছিল, কী অকথ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হচ্ছে।
১৪১৭
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে নির্মম অত্যাচার সহ্য করার পরে ২০০১ সালে রবীন্দ্র কৌশিক মারা যান মুলতানের কেন্দ্রীয় কারাগারে। যক্ষ্মা-সহ একাধিক অসুখে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এর দু’ বছর পরে ভারতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর বাবা। রবীন্দ্রর মা অমলাদেবী বেঁচে ছিলেন ২০০৬ অবধি। তত দিন পর্যন্ত ভারত সরকারের তরফে প্রতি মাসে সামান্য মাসোহারা পাঠানো হত। জানিয়েছেন তাঁর পরিজনরা। (প্রতীকী ছবি)
১৫১৭
তাঁর পরিবারের দাবি, ভারত সরকারের তরফে কোনওরকম সাহায্য বা স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের ছবি ‘এক থা টাইগার’ আসলে রবীন্দ্রর জীবনেরই কাহিনি, দাবি তাঁর পরিবারের। কিন্তু তার জন্যেও কোনও স্বীকৃতি মেলেনি বলে, আক্ষেপ পরিজনদের।
১৬১৭
সংবাদমাধ্যমে তাঁর ভাই আর এন কৌশিক বলেন, তাঁদের পরিবার অর্থ চায় না। তাঁদের দাবি, ভারত সরকার অন্তত ন্যূনতম স্বীকৃতিটুকু দিক। কারণ, এই গোপন এজেন্টরাই দেশের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। (ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক)
১৭১৭
ভারত সরকার যদি উর্দিধারী সেনানীদের সম্মান ও কুর্নিশ জানাতে পারে, তা হলে এজেন্টদের স্বীকৃতি দিতে এত দ্বিধা কেন? প্রশ্ন প্রয়াত রবীন্দ্র কৌশিকের স্বজনদের।