রাতুল পুরী। —ফাইল চিত্র
অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডে কাণ্ডে ঘুষ, ব্যাঙ্কের ঋণের টাকা নয়ছয়, আয়কর ফাঁকির মতো অভিযোগে তদন্ত চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। আইনি মারপ্যাঁচে বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত গ্রেফতারি এড়াতে পারলেন না কমল নাথের ভাইপো রাতুল পুরী। অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড চপার ডিল মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে ডেকে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ঋণ দুর্নীতি মামলায় তাকে গ্রেফতার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই ব্যাঙ্ক থেকে সাড়ে তিনশো কোটিরও বেশি টাকার ঋণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে রাতুলের বিরুদ্ধে। রাতুলের অফিস থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই গ্রেফতারি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে কমল নাথ বলেছেন, রাতুল পুরীর ব্যবসার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাঁর।
গ্রেফতারির উপর নিষেধাজ্ঞার আর্জি জানিয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন রাতুল পুরী। আজ মঙ্গলবার সেই মামলায় রায় দেওয়ার কথা আদালতের। তার আগেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় ইডি। তার পরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তদন্তকারী এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। যদিও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ব্যাঙ্ক দুর্নীতির মামলায়। এই মামলায় তাঁর গ্রেফতারিতে আদালতের কোনও রক্ষাকবচ ছিল না।
কংগ্রেস নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের ভাইপো রাতুল পুরীর পারিবারিক সংস্থা ‘মোসার বিয়ার’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত বছর। কম্পিউটারের সহযোগী নানা সামগ্রী তৈরি করত এই সংস্থা। কিন্তু ঋণভারে জর্জরিত হয়ে শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় সংস্থা। দেউলিয়া ঘোষণা করা হবে কি-না, বর্তমানে ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনালে সেই নিয়ে শুনানি চলছে। এই সংস্থায় সিনিয়র এগজিকিউটিভ ছিলেন রাতুল। এ ছাড়াও তাঁর বাবা দীপক পুরী ছিলেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মা নীতা পুরী ছিলেন ফুল টাইম ডিরেক্টর। অন্যান্য ডিরেক্টরদের মধ্যে ছিলেন সঞ্জয় জৈন এবং বিনীত শর্মা।
আরও পড়ুন: মোদীর পরেই কথা ইমরানের সঙ্গে, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সংযত হতে পরামর্শ ট্রাম্পের
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক থেকে ৩৫৪.৫১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন মোসার বিয়ার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার দীর্ঘদিন পরও সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় ব্যাঙ্কের তরফে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্তে উঠে আসে, অনেক নথিপত্রে গলদ রয়েছে। তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, ঋণের টাকা সংস্থার কাজে না লাগিয়ে নানা ভাবে নয়ছয় হয়েছে। তার পরই সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) দ্বারস্থ হনব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সংস্থার শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও অজানা সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়।
সিবিআই সূত্রে খবর, গত ১৬ অগস্ট সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের কাছ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। এফআইআর-এ প্রতারণা, জালিয়াতি এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে সংস্থার শীর্ষকর্তা এবং আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। তবে মোসার বিয়ারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সমস্ত কিছু আইন মেনেই কাজ করেছে মোসার বিয়ার। সংস্থার বিষয়টি যখন ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনালে বিচারাধীন, তখন এই গ্রেফতারি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’
আরও পড়ুন: ২৯ দিনের পথ পেরিয়ে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ল চন্দ্রযান-২
ঘটনায় নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়েছেন কমল নাথ। তবে ব্যবসা বা দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই, দাবি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা যে ব্যবসা করে, তার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি শেয়ার হোল্ডার নই, সংস্থার ডিরেক্টরও নই।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, ‘‘আমার মতে এটা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই করা হয়েছে। আদালতের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে এবং আশা করি আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তবে শুধু ব্যাঙ্কের ঋণ দুর্নীতিই নয়, রাতুল পুরীর নাম জড়িয়েছে অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড ভিভিআইপি চপার ডিল দুর্নীতিতেও। ২০০৭ সালে ইউপিএ জমানায় এই চপার কেনার চুক্তিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রাতুলের বিরুদ্ধে। তা নিয়েও তদন্ত চলছে। এই মামলাতেও দিল্লি আদালত রাতুলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। তবে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিলের দাবিতে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন রাতুল। তাঁর গ্রেফতারিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে কি না, মঙ্গলবারই সেই রায় দেওয়ার কথা আদালতের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy