প্রতীকী ছবি।
বৈবাহিক সম্পর্কে যৌন বলপ্রয়োগের বিষয়টি ধর্ষণের আওতায় পড়া উচিত কি না, তা নিয়ে বিতর্কের মীমাংসা হয়নি। বর্তমানে দিল্লি হাই কোর্টে এ বিষয়ে মামলাও চলছে। তারই মধ্যে বুধবার কর্নাটক হাই কোর্ট এক যুগান্তকারী নির্দেশনামায় ঘোষণা করল, ‘‘ধর্ষণ ধর্ষণই। স্বামীর দ্বারা হলেও তা ধর্ষণই হয়।’’
স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও বলপূর্বক অপ্রাকৃতিক যৌন আচরণের অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক মহিলা। বিশেষ আদালত তাঁর মামলাটি গ্রহণ করে। তখন স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যায় না বলে দাবি করে হাই কোর্টে গিয়েছিলেন স্বামী। হাই কোর্ট আজ তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি এম নাগপ্রসন্ন তাঁর নির্দেশে বলেছেন, ‘‘বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি পুরুষকে বন্য জন্তুর মতো আচরণ করার কোনও বিশেষ ছাড়পত্র দেয়নি, দিতে পারে না, আমার মতে দেওয়া উচিতও নয়। পুরুষের ক্ষেত্রে যদি কোনও আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়ে থাকে, তা হলে সেই পুরুষ স্বামী হলেও তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।’’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় হাই কোর্ট বলেছে, ‘‘পুরুষ পুরুষই। ক্রিয়া ক্রিয়াই। ধর্ষণ ধর্ষণই। পুরুষ ‘স্বামী’ আর নারী ‘স্ত্রী’ হলেও।’’
একই সঙ্গে হাই কোর্ট অবশ্য এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ বলে গণ্য হওয়া উচিত কি না, সে ব্যাপারে এখানে কিছু বলা হচ্ছে না। সেটা স্থির করার কাজ আইনসভার। এক জন স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন, আদালত তার চার্জ গঠনের ব্যাপারেই মতামত জানাচ্ছে। যদিও এর পাশাপাশি আদালত তার নিজ দৃষ্টিভঙ্গি খুব গোপনও রাখেনি। বিচারপতি বলেছেন, ‘‘স্বামীর দ্বারা যৌন নিগ্রহের ঘটনা এক জন স্ত্রীর মানসে গুরুতর ছাপ ফেলে। তাঁর শরীর ও মনে এর প্রভাব পড়ে। তাঁর হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়।’’ তাই তাঁর মতে, আইনপ্রণেতাদের উচিত ‘স্তব্ধতার স্বরকে’ শোনা। বিচারপতি নাগপ্রসন্ন সরাসরিই বলেছেন, দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় স্বামীকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টিকে তিনি ‘পশ্চাদ্মুখী’ বলে মনে করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে নারী ও পুরুষের সমানাধিকার স্বীকৃত আছে। স্ত্রী বলে তাঁর শরীর ও মনের মালিক নন স্বামী। সুতরাং যে কাজ অন্য পুরুষ করলে অপরাধ, তা স্বামী করলে আইনসম্মত হওয়া উচিত নয়।
এই মামলায় ৩৭৫ ধারাকে সামনে এনেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্বামী। অন্য দিকে স্ত্রী অভিযোগ এনেছিলেন ৩৭৬ (ধর্ষণ) এবং ৩৭৭ (অপ্রাকৃতিক যৌন আচরণ) ধারায়। দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা নির্ধারিত আছে। ৩৭৬ ধারায় রয়েছে ধর্ষণের শাস্তিবিধান। ৩৭৫ ধারায় ব্যতিক্রম-তালিকা ২-এ ধর্ষণের আওতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে স্বামীকে। এই
মামলায় স্বামীর আইনজীবী হাসমত পাশা সেই যুক্তিই দিয়েছিলেন হাই কোর্টে। কিন্তু বিচারপতি বলেছেন, ‘‘কোনও ছাড়ই নিরঙ্কুশ হতে পারে না। এই মামলার ক্ষেত্রে ধর্ষণের ধারা সরিয়ে নেওয়া হলে অভিযোগকারিণীর প্রতি অত্যন্ত অবিচার করা হবে এবং জান্তব লালসাকে উৎসাহ দেওয়া হবে।’’
এখানে স্ত্রীর অভিযোগ ছিল, বিয়ের পর থেকেই স্বামী তাঁকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এমনকি, কন্যার চোখের সামনেও তিনি স্ত্রীকে অপ্রাকৃতিক যৌন আচরণে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছেন। বিশেষ আদালত তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামীর বিরুদ্ধে ৩৭৬, ৪৯৮ক, ৫০৬-সহ একাধিক ধারায় চার্জ গঠন করেছিল। স্বামীর বিরুদ্ধে ৩৭৬ ধারায় চার্জ গঠন আইনসম্মত নয় বলে দাবি করেই উচ্চ আদালতে এসেছিলেন স্বামীর আইনজীবী। আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy