মুঘল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে এই প্রাসাদের অঙ্গসজ্জায় মিলেমিশে গিয়েছে অন্যান্য ঘরানার নির্মাণশৈলিও। ফরাসি-ইতালীয় রীতিতে জানালা, গথিক আর্চ, ইতালীয় ফোয়ারার পাশাপাশি আছে ভিক্টোরীয় রীতির বারান্দা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
ভারতের যে যে প্রাচীন রাজবংশ তাদের গরিমা ও শৌর্য ধরে রাখতে পেরেছে আজও, তাদের মধ্যে অন্যতম রাজকোটের রাজপরিবার। দেশের অধিকাংশ রাজ পরিবার নিজেদের বাসভবনকে হোটেলে রূপান্তরিত করেছে। কিন্তু রাজকোটের রাজবংশ এখনও তাদের ১০০ ঘরের প্রাসাদকে রেখেছে শুধু নিজেদের বাসভবন হিসেবেই।
০২১৭
সপ্তদশ খ্রিস্টাব্দে রাজকোট শহরের পত্তন হয়েছিল ঠাকুর সাহেব বিভোজি আজোজি জাডেজার হাতে। তাঁর পর থেকে রাজকোটের শাসকরা সকলে নিজেদের নামের আগে ‘ঠাকুর সাহেব’ এবং ‘হিজ হাইনেস’ উপাধি ব্যবহার করেন।
০৩১৭
খাতায়কলমে রাজতন্ত্র না থাকলেও গত বছর জানুয়ারি মাসে অভিষেক হয়েছে মান্ধাতা সিংহের। তাঁর বাবা ঠাকুরসাহেব মনোহর সিংহের মৃত্যুর পরে তিনিই হন পরিবারের সর্বময় কর্তা।
০৪১৭
বংশের রীতিনীতি অনুসরণ করে এক মাস ধরে চলে এই অভিষেক পর্ব। বিস্তৃত অনুষ্ঠানের অংশ ছিল রাজসূয় যজ্ঞ। ৩০০ জন ব্রহ্মণের পৌরহিত্যে চলে এই যজ্ঞপর্ব। প্রজ্বলন করা হয় হাজারের বেশি মৃৎপ্রদীপ।
০৫১৭
অভিষেক উপলক্ষে কূলদেবীর মন্দিরে পুজো দেন মান্ধাতা সিংহ। তাঁর সম্মানে ২৫০০ জন শিল্পী পরিবেশন করেন ঐতিহ্যবাহী ‘তলোয়ার রাস’। গুজরাতের লোকশিল্পের অন্যতম এই নাচের অংশ হল তলোয়ার।
০৬১৭
সদ্য অভিষিক্ত রাজা রাজকোট পরিভ্রমণ করেন ভিন্টেজ গাড়ি, হাতি, ঘোড়া এবং শিল্পীদের সুদৃশ্য শোভাযাত্রায়।
০৭১৭
মান্ধাতা সিংহ ২০০৯ সালে যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। যদিও তাঁর বাবা মনোহর সিংহ ছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক। গুজরাতের অর্থমন্ত্রীর পদেও ছিলেন তিনি।
০৮১৭
বিলাসবহুল হোটেলব্যবসার পরিবর্তে জাডেজা পরিবার কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে। পাশাপাশি, জৈব জ্বালানি উৎপাদন প্রকল্পেও বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা।
০৯১৭
জাডেজা পরিবারের বাসভবন ‘রঞ্জিত বিলাস’ প্রাসাদ রাজকোট শহরের অন্যতম আকর্ষণ। ওয়াঙ্কানের শহরে ২২৫ একর জমির উপর বিস্তৃত ১০০ কক্ষের এই প্রাসাদ।
১০১৭
মুঘল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে এই প্রাসাদের অঙ্গসজ্জায় মিলেমিশে গিয়েছে অন্যান্য ঘরানার নির্মাণশৈলিও। ফরাসি-ইতালীয় রীতিতে জানালা, গথিক আর্চ, ইতালীয় ফোয়ারার পাশাপাশি আছে ভিক্টোরীয় রীতির বারান্দা।
১১১৭
এই প্রাসাদই জাডেজা বংশের বাসভবন। প্রাসাদের এক অংশ রূপান্তর করা হয়েছে সংগ্রহশালায়। সেখানে রাজপরিবারে ব্যবহৃত ছবি, শিল্পসামগ্রী, অস্ত্রশস্ত্র এবং গাড়ি রাখা আছে প্রদর্শনীর জন্য। দর্শকরা সেখানে নিতে পারেন রাজ ঐতিহ্যের স্বাদ।
১২১৭
সংগ্রহশালা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দুর্বারগড় প্রাসাদেও। এই প্রাসাদই ছিল রাজকোটের রাজপরিবারের পুরনো বাসভবন। এখন এই ভবনের অবস্থা মলিন।
১৩১৭
এই প্রাসাদকে নতুন করে সাজানো হবে রাজবংশের উদ্যোগে। অমূল্য ছবির পাশাপাশি থাকবে ভিন্টেজ গাড়ি, অস্ত্রশস্ত্র-সহ রাজপরিবারের ব্যবহার করা অন্যান্য জিনিস।
১৪১৭
প্রাসাদের রানিদের মহলকে বলা হত ‘রানিভা’। নতুন করে সাজানো হচ্ছে সেই অংশও। সেখানে দেখানো হবে গত কয়েক শতকে কেমন ছিল রাজপরিবারের মহিলাদের জীবনযাত্রা।
১৫১৭
রাজকোটের সোনি বাজারের কাছে হটকেশ্বর মন্দিরের কাছেই রয়েছে এই দুর্বারগড় প্রাসাদ। ১৮৮০-র দশক পর্যন্ত এই প্রাসাদই ছিল রাজবংশের বাসভবন। পরে তাঁরা থাকতে শুরু করেন রঞ্জিত বিলাস প্রাসাদে। এই নতুন প্রাসাদ নির্মাণের পিছনে আছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে গুজরাতে তীব্র খরার ফলে অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন।
১৬১৭
এর পরই তৎকালীন শাসক বভজিরাজ নতুন প্রাসাদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। রঞ্জিত বিলাস প্রাসাদ নির্মাণ হয়ে গেলে রাজপরিবারের বাসভবন পরিবর্তিত হয় ঠিকই। তবে, প্রশাসনিক কাজকর্ম চলতে থাকে দুর্বারগড় প্রাসাদ থেকেই।
১৭১৭
পরিবারের কিছু সদস্য ১৯৭০ সাল অবধি থাকতেন দুর্বারগড়েই। সেইসঙ্গে ছিল গুজরাত সরকারের কিছু দফতরও। ২০০১ সালের ভূমিকম্পের পরে এখান থেকে দফতর সরিয়ে নেয় গুজরাত সরকার। এর পর প্রাসাদটি হয়ে যায় কার্যত জনহীন। আশা করা হচ্ছে, আড়াই বছরের মধ্যে রাজ পরিবারের প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পূর্ণ রূপায়িত হয়ে নতুন রূপ পাবে এই পরিত্যক্ত প্রাসাদ।