ছবি সংগৃহীত
বিজেপির মতো কংগ্রেসে প্রবীণ নেতাদের জোর করে অবসর নেওয়ানো হয় না। কিন্তু তরুণ নেতাদের এগিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব প্রবীণ নেতাদেরই। দলে সংঘাতের আবহে আজ এই বার্তা দিয়েছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
‘টিম রাহুল’-এর তরুণ তুর্কিদের সঙ্গে ইউপিএ-সরকারের মন্ত্রীদের সংঘাত প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পরে আজ এআইসিসি-র মঞ্চ থেকে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বার্তা দিয়েছে, প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। যাঁর যা বলার, দলের মধ্যেই বলতে হবে। একই সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রবীণ নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, তাঁদেরই দায়িত্ব হল, তরুণ নেতাদের ‘মার্গদর্শন’ করা। তাঁদের এগিয়ে নিয়ে আসা। তার জন্য রাস্তা তৈরি করা।
আজ এআইসিসি-র মঞ্চ থেকে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার এই মন্তব্য আসলে রাহুল গাঁধীর বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ, রাহুলের আস্থাভাজন বলেই পরিচিত সুরজেওয়ালা। তিনিই দলের প্রধান মুখপাত্র। সুরজেওয়ালা কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘‘যাঁরা টুইটার টুইটার খেলছেন, টুইটারে টিপ্পনি করছেন, সেই বন্ধুদের বলছি, সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে সংগঠনের মঞ্চে যা বলার বলুন। কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র রয়েছে। এখানে কাউকে জোর করে অবসর নেওয়ানো হয় না।’’
সুরজেওয়ালার এই মন্তব্যের নিশানাতে ইউপিএ সরকারের মন্ত্রীরা রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দলের রাজ্যসভা সাংসদদের বৈঠকে ‘টিম রাহুল’-এর নেতা রাজীব সতাভ বলেছিলেন, কংগ্রেসের ভরাডুবির কারণ ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতা কি না, তার পর্যালোচনা করা দরকার। দলের অন্দরে সতাভের ওই মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতেই মণীশ তিওয়ারি, আনন্দ শর্মার মতো ইউপিএ সরকারের মন্ত্রীরা টুইটারে পাল্টা আক্রমণে যান। রাহুলের আস্থাভাজন সতাভ মন্তব্য করেছিলেন, তাঁর বক্তব্য তিনি দলের অভ্যন্তরে বলেছেন। তা নিয়ে কারও কিছু বলার থাকলে দলের মধ্যেই বলা উচিত। আজ কংগ্রেস সরকারি ভাবেও সে কথাই বলল।
রবিবারেও অবশ্য কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফুলকি বাইরে আসে। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ মত দিয়েছিলেন, সংসদে রাহুল গাঁধীর আরও সক্রিয় হওয়া উচিত। তাঁকে আরও বেশি মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকতে হবে। রাহুলকে দেশ জুড়ে সফরে বেরনোর পরামর্শ দিয়েছিলেন শরদ পওয়ার। তা-ও মনে করিয়েছেন দিগ্বিজয়। তাঁকে এক হাত নিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের হুইপ, ‘টিম রাহুল’-এর আর এক সদস্য মাণিকম ঠাকুর। মাণিকমের মন্তব্য, ‘‘দলের উচ্চপদে থাকা নেতারা সত্যিই রাহুলের পাশে দাঁড়ালে এবং পিছনে সমালোচনা না করলে, কংগ্রেসকে বেশি দিন বিরোধী আসনে বসতে হত না। দলের ভিতরের কথা বাইরে ফাঁস করার অভ্যাস পাল্টালে আমরাই জিতব।’’
কিন্তু, তরুণ নেতাদের তুলে আনতে গিয়ে রাহুল কংগ্রেসের নিচুতলার সংগঠনে কাজই করেননি, এমন নেতার প্রাধান্য দিয়ে ফেলছেন কি না, তা নিয়ে মণীশ তিওয়ারি ফের প্রশ্ন তুলেছেন। সাম্প্রতিক অতীতে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পাইলট, অজয় কুমার, প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী, প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেব বর্মণের মতো রাহুলের ঘনিষ্ঠ নেতারাও কংগ্রেস ছেড়েছেন বা অন্য দলে পা বাড়িয়েছেন। মণীশ বলেন, ‘‘সিন্ধিয়া, পাইলট দলের রাজপুত্র ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর লোকসভা আসন পেয়ে গিয়েছিলেন। কখনও যুব কংগ্রেস বা ছাত্র সংগঠনের জাঁতাকলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। জনসভায় শতরঞ্চি পাততে হয়নি, দেওয়াল লিখতে হয়নি, পুলিশের লাঠি বা ছাত্র রাজনীতিতে ছুরি খেতে হয়নি। কারও কোনও মতাদর্শগত বিশ্বাস বা আবেগ ছিল না। সরকারি পদে আসার বাহন দরকার ছিল। পুরনো গাড়ির দরকার ফুরোতে নতুন বাসে উঠে পড়েছেন।’’
এই সংঘাত মেটাতে কংগ্রেসের তরফে সুরজেওয়ালা আজ বলেন, ‘‘প্রবীণ নেতাদের দায়িত্ব বেশি। তাঁরা সরকারে, সংগঠনে কাজ করেছেন। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁদের সনিয়া ও রাহুল গাঁধী এবং মনমোহন সিংহর সঙ্গে কাজ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy