Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

জ্যোতিরাদিত্যর ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন রাণা কপূর! সুযোগ পেয়েই আক্রমণে বিরোধীরা

ইডি-সিবিআই-এর হাত থেকে বাঁচতেই জ্যোতিরাদিত্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, অভিযোগ বিরোধীদের।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ১৯:০৯
Share: Save:

দেশে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দু’জন। প্রথম জন কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। অন্য জন রাণা কপূর। ইয়েস ব্যাঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে যিনি ইডির হেফাজতে। আপাত দৃষ্টিতে একটি রাজনৈতিক এবং একটি অর্থনীতি জগতের চর্চার বিষয় হলেও দু’জনের যোগসূত্র রয়েছে। গ্বালিয়রের রাজপুত্রের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত স্বার্থে দলবদলের অভিযোগে কংগ্রেস সরব ছিলই, এ বার ইয়েস ব্যাঙ্ক কর্ণধার এবং সিন্ধিয়ার যোগদানকে এক সূত্রে বেঁধে আক্রমণ শুরু করেছেন বিরোধীরা।

রাণা কপূর-জ্যোতিরাদিত্য যোগসূত্র কোথায়? মুম্বইয়ের ওরলির যে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স থাকতেন রানা কপুর, সেই ‘সমুদ্র মহল’-এর মালিক আদপে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ওই ফ্ল্যাটটি জ্যোতিরাদিত্যর কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন রাণা কপূর। ভারতে থাকলে এই সমুদ্র মহল আবাসনের এই ডুপ্লেক্সেই থাকতেন রাণা। জানা গিয়েছে, এই সমুদ্র মহলের এ উইং-এ টেরেস-সহ একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে গ্বালিয়র রাজ পরিবারের হাতে। ইডি সূত্রে খবর, গত শনিবার রাণা কপূর তথা জ্যোতিরাদিত্যর এই ফ্ল্যাটেই তল্লাশি চালিয়েছিল তারা।

ইয়েস ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাণা কপূরকে দু’কোটি টাকায় চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের আঁকা রাজীব গাঁধীর একটি ছবি বিক্রি করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। রাণা গ্রেফতার হতেই এ নিয়ে আসরে নামে বিজেপি। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘যেখানেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, সেখানেই কংগ্রেসের নাম জড়ায়। দুর্নীতি শিল্প হলে কংগ্রেস শিল্পী।’’ কংগ্রেসের তরফে অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ছবিটি প্রিয়ঙ্কা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন, এবং ছবি বিক্রির টাকা আয়কর রিটার্নেও দেখিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: হঠাৎ নবান্নে বৈশাখী, শোভনের মান ভাঙাতে এ বার কি সক্রিয় মমতা?

কিন্তু সেটা ছিল অভিযোগের জবাব। এ বার জ্যোতিরাদিত্য-রাণা কপূর যোগসূত্র মিলতেই পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় নামল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাদের ইঙ্গিত, ইয়েস ব্যাঙ্ক দুর্নীতিতে জড়িত জ্যোতিরাদিত্যও। ইডি-সিবিআই-এর হাত থেকে বাঁচতেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ী আবার টুইটারে সরাসরিই আক্রমণ শানিয়েছেন, ‘‘ইয়েস ব্যাঙ্কের কর্ণধার রাণা কপূর মুম্বাইয়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ফ্ল্যাটে থাকেন। গত শনিবার সেখানেই হানা দেয় ইডি। তারপরেই কি বাঁচার তাগিদে বিজেপিতে গিয়ে দেশসেবার ইচ্ছেপ্রকাশ?’’

গত বছরই কংগ্রেস ছেড়েছেন ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎ মানিক্য। জ্যোতিরাদিত্যর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি একটি টুইট করেছেন। কংগ্রেস নবীনদের গুরুত্ব দিচ্ছে না, প্রবীণরা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন— এই রকম একাধিক অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। শমিক লাহিড়ীর ওই টুইটের জবাবে বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘কী সব অনুমান শমীক? এটা সত্যি যে রাণা কপূর জ্যোতিরাদিত্যর মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে থাকতেন। কিন্তু চকচক করলেই সব সময় সেগুলো সুবর্ণ সুযোগ নাও হতে পারে। কংগ্রেস আপনার জোট শরিক এবং আমি নিশ্চিত যে উনি (জ্যোতিরাদিত্য) আমাদের সঙ্গে যোগ না দিলে কলকাতায় প্রচারের জন্য ওঁকে আনতে পারলে আপনি খুশিই হতেন। রাণা কপূরের ঘটনা ঘটনাই। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেসে থাকলে আপনারা কোনও প্রশ্ন তুলতেন না।’’

আরও পড়ুন: বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনা, মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে মৃত তমলুকের দম্পতি

২৭ তলার দু’টি বহুতল মিলিয়ে এই ‘সমুদ্র মহল’ আবাসনে তিন কামরা, ডুপ্লেক্স, ট্রিপ্লেক্স এবং বাংলো রয়েছে। বর্তমানে এই আবাসনে ফ্ল্যাটের দাম এক লাখ ১০ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা প্রতি স্কোয়ারফুট। দেশের মধ্যে অন্যতম দামি ও অভিজাত আবাসন হিসেবে চিহ্নিত এই সমুদ্র মহল। এখানকার আবাসিকরাও শিল্প-বাণিজ্য জগতের পরিচিত মুখ। বিদেশে ফেরার লিকার ব্যারন বিজয় মাল্য, হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী— দু’জনই ছিলেন এই সমুদ্র মহলের আবাসিক। তা ছাড়াও ইনফোসিসের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকানি ও এন আর নারায়ণমূর্তি, বেদান্ত গ্রুপের কর্ণধার প্রতীক আগরওয়াল, মোতিলাল অসওয়াল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস কর্ণধার রামদেও আগরওয়াল ছাড়াও টাটা মোটর্স, টাটা স্টিল, আইটিসি, এলএন্ডটি-র মতো সংস্থার বহু শীর্ষ পদাধিকারী এই আবাসনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE