প্রচলিত হিন্দু রীতি মেনে পঞ্চভূতে বিলীন হওয়ার জন্য অগ্নিদেবের কাছে সমর্পণ নয়। নয় সাধু-সন্তদের মতো ভূমিতে সমাধি। অযোধ্যার রামমন্দিরের প্রয়াত প্রধান পুরোহিত মহন্ত সত্যেন্দ্র দাসের সৎকার হল জলসমাধির মাধ্যমে। আর তা ঘিরেই দানা বাঁধল বিতর্ক।
সাকেত নগরীর সরযূ নদীতে প্রয়াত সত্যেন্দ্রের দেহ নৌকায় নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়ার ওই ভিডিয়ো ফুটেজ (আনন্দবাজার অনলাইন যার সত্যতা যাচাই করেনি) ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রবীণ পূজারির দেহ যে ভাবে ভারী বস্তুতে বেঁধে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে তা ‘অবমাননা’ কি না, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সমাজমাধ্যমে এসেছে পরিবেশবিধির কথাও!
আরও পড়ুন:
তবে অযোধ্যার সাধু-সন্তদের অনেকে বলছেন এই প্রথা বহু প্রাচীন। যদিও তা বর্তমানে খুবই বিরল। এই প্রথায় জলে দেহ সমাধিস্থ করার রীতি নাকি বহু সাধক সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও প্রচলিত রয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস, জলসমাধির মাধ্যমে আত্মা নিশ্চিত মোক্ষ লাভ করে। কারণ, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পঞ্চভূতে মিশে যায় নশ্বর দেহ। তবে সাধু, সন্ত বা পুরোহিতদের মতো যাঁরা জাগতিক আসক্তি থেকে দূরে থাকেন, শুধু তাঁদেরই এই পদ্ধতিতে সৎকার করা হয়। অযোধ্যা নৃপতি রামচন্দ্রও নাকি সরযূতেই বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন। প্রাচীন এই পদ্ধতিতে মৃতের দেহ নৌকায় করে মাঝনদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর প্রয়োজনীয় ধর্মীয় উপাচার পালন করে, বৈদিক স্তোত্রপাঠ করতে করতে বালি বা পাথর বোঝাই বস্তার সঙ্গে দেহটি বেঁধে জলে নিক্ষেপ করা হয়।
প্রসঙ্গত বুধবার সকালে লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এসপিজিআই)-এ প্রয়াত হন সত্যেন্দ্র। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫। ১৯৯২ সালে বাবরি ধ্বংসের পর ১৯৯৩ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত পদে ছিলেন তিনি। এক সময় রামলালা যখন মন্দিরের বাইরে অস্থায়ী তাঁবুতে ছিলেন, তখন থেকেই মহন্ত সত্যেন্দ্রই ছিলেন নিত্যপুজোর দায়িত্বে। নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠিত অযোধ্যা রামমন্দির ট্রাস্ট্রের অন্যতম সদস্যও ছিলেন তিনি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ২০২৩ সালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করার আগে সত্যেন্দ্র তাঁকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। রাহুলের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আপনার উদ্দেশ্য মহৎ। আপনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন। তাই আপনি ভগবান রামের আশীর্বাদ পাবেন।’’ সত্যেন্দ্রের উত্তরসূরি নির্বাচন করতে চলতি মাসেই অযোধ্যার রামমন্দির ট্রাস্টের বৈঠক হবে বলে সূত্রের খবর। ট্রাস্টের সচিব চম্পত রাই জানিয়েছেন, সর্বসম্মত ভাবেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।