‘এক দেশ, এক ভোট’-এর ভাবনা মোটেই ‘সংবিধান বিরোধী নয়’ এবং এটি ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোরও পরিপন্থী নয়’ বলে দাবি করলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও এই সংক্রান্ত কমিটির প্রধান রাম নাথ কোবিন্দ। তাঁর যুক্তি, সংবিধান প্রণেতারা এক সময়ে এই কথাই ভেবেছিলেন। ফলে বিষয়টি সংবিধান বিরোধী হতে পারে না। কোবিন্দ আরও জানিয়েছেন, ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর প্রস্তাব বাস্তবায়িত করতে যে ধরনের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে, তা খতিয়ে দেখবে ‘বাস্তবায়ন কমিটি’। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংসদকেই নিতে হবে।
নয়াদিল্লিতে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মেমোরিয়াল বক্তৃতা দিতে গিয়ে কোবিন্দ আজ ‘এক দেশ এক ভোট’-এর প্রস্তাব নিয়ে তাঁর বক্তব্য হাজির করেন। তাঁর যুক্তি, ভারতে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভার ভোটগুলি একসঙ্গেই হয়েছিল। ফলে এখন সেই পথে ফিরে গেলে তা সংবিধানের বিরোধিতা করা হবে না। কোবিন্দের মতে, দেশের কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, এক সঙ্গে ভোট করার বিষয়টি সংবিধান বিরোধী। এটা ঠিক নয়। কারণ, সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যেই এই ভাবনা ছিল। অতীতে নির্বাচন কমিশনও ‘এক দেশ এক ভোট’-এর ভাবনার সঙ্গে সহমত ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি। একই সঙ্গে কোবিন্দের যুক্তি, সরকারের তিন স্তরে একসঙ্গে ভোট হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে। কারণ, সরকারের সবক’টি স্তর পাঁচ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।
কোবিন্দের মতে, ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর বিষয়টি ভারতে একটি জনপ্রিয় ভাবনা। তবে কেউ কেউ এর ভুল ব্যাখ্যা হাজির করছেন। যেখানে বোঝানো হচ্ছে, ভোট এক বারই হবে, তার পরে আর হবে না। কোবিন্দ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, লোকসভা, রাজ্যগুলির বিধানসভা এবং পুরসভা, পঞ্চায়েতের ভোট একসঙ্গে হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পাঁচ বছর ধরে একজোট হয়ে কাজ করতে পারবেন। কোবিন্দ জানিয়েছেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে যে ৪৭টি রাজনৈতিক দল ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে মতামত দিয়েছে, তার মধ্যে ৩২টি দলই এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। বাকি যে পনেরটি দল বিরোধিতা করছে, তারাও অতীতে বিভিন্ন সময়ে একসঙ্গে ভোট করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতে ১৯৬৭ পর্যন্ত প্রথম চারটি নির্বাচন একসঙ্গেই হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কয়েকটি রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে ও সেখানকার বিধানসভাগুলি নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে দেওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। কোবিন্দের মতে, বার বার ভোট হলে উন্নয়নের কাজে বাধা আসে এবং ভোটের প্রচারে কালো টাকার লেনদেন বাড়তে থাকে যা নির্বাচনী পবিত্রতাকে নষ্ট করে দেয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)