Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Rajpath

রাজধানীর রাজপথের নাম বদলে দিলেন মোদী, স্বাধীনতার ৭৫ পূর্তিতে নতুন নাম ‘কর্তব্যপথ’

৮ সেপ্টেম্বর নতুন করে ঢেলে সাজানো রাজপথ ও তার দু’পাশের এলাকা, সেন্ট্রাল ভিস্টার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগেই নাম বদল হয়ে যাবে।

নতুন করে সাজানো রাজপথ এ বার নাম বদলে কর্তব্য পথ। উদ্বোধন হবে ৮ সেপ্টেম্বর। নিজস্ব চিত্র

নতুন করে সাজানো রাজপথ এ বার নাম বদলে কর্তব্য পথ। উদ্বোধন হবে ৮ সেপ্টেম্বর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৮
Share: Save:

ছিল রাজপথ। হয়ে যাবে কর্তব্য পথ।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, কর্তব্য পথই জীবনের পথ হওয়া উচিত। এ বার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, দিল্লির রাইসিনা হিলসের উপরে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত যে রাস্তার নাম এখন রাজপথ, তার নাম বদলে ‘কর্তব্য পথ’ করা হবে। প্রজাতন্ত্র দিবসে এই রাস্তায় কুচকাওয়াজ হয়। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নতুন করে ঢেলে সাজানো রাজপথ ও তার দু’পাশের এলাকা, সেন্ট্রাল ভিস্টার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগেই নাম বদল হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বরাবরই সাংবিধানিক অধিকারের থেকে সংবিধানের নাগরিক কর্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। নাগরিক কর্তব্যের বিষয়টি অবশ্য জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানে ঢোকানো হয়েছিল। রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, মোদী কি সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে লঘু করে সংবিধানের নাগরিক কর্তব্যকেই শিরোধার্য করতে চাইছেন? না কি দিল্লির সব থেকে পরিচিত রাস্তার নিজের পছন্দমতো নামকরণ করে নিজের চিহ্ন রেখে যেতে চাইছেন?

স্বাধীনতার ৭৫তম বছর থেকে শতবর্ষ পর্যন্ত আগামী ২৫ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লা থেকে ‘পঞ্চ পণ’-এরও ঘোষণা করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল, মন থেকে ব্রিটিশদের দাসত্বের অবশেষ মুছে ফেলতে হবে। ভারতীয় হিসেবে নিজেদের কর্তব্য পালন করতে হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ মহলের ব্যাখ্যা, রাজপথের নাম বদলে কর্তব্য পথ করার সিদ্ধান্ত এই জোড়া পণেরই প্রতিফলন। কারণ, ব্রিটিশদের তৈরি দিল্লিতে রাজা পঞ্চম জর্জের সম্মানে তদানীন্তন ভাইসরয় হাউস (এখনকার রাষ্ট্রপতি ভবন) থেকে ওয়ার মেমোরিয়াল (এখনকার ইন্ডিয়া গেট) পর্যন্ত রাস্তার নাম ‘কিংসওয়ে’ রাখা হয়েছিল। কারণ, রাজা পঞ্চম জর্জ ১৯১১-য় দিল্লি দরবার থেকে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছিলেন। রাজা পঞ্চম জর্জের বাবা, রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের সম্মানে লন্ডনে একই ভাবে একটি রাস্তার নাম কিংসওয়ে রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে দিল্লির কিংসওয়ে-র নাম রাজপথ রাখা হয়। কিন্তু সেটা ছিল নিছক ইংরেজি থেকে হিন্দি অনুবাদ। ওই মহলের মতে, রাজপথ নামের মধ্যে তাই ব্রিটিশদের গোলামির ছোঁয়া লেগে রয়েছে। এ বার ব্রিটিশদের সেই ছোঁয়া মুছে ফেলা যাবে। সাধারণ মানুষকে বার্তা দেওয়া হবে, এখন আর কেউ রাজা, কেউ প্রজা নন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর নাগরিকদের কর্তব্যের উপরে জোর দেন। কর্তব্য পথ তা-ও স্মরণ করাবে।

কোভিডের মধ্যেই রাজপথ ও তার দু’পাশের এলাকা—সেন্ট্রাল ভিস্টা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়ার পরেই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, মোদী দিল্লিতে নিজের ছাপ রেখে যেতে চাইছেন। ব্রিটিশদের তৈরি দিল্লির ভোল পাল্টে তাকে মোদীর দিল্লি করতে চাইছেন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নতুন করে ঢেলে সাজানো সেন্ট্রাল ভিস্টার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি সূত্রের খবর, তার আগে ৭ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি পুরনিগমের বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকেই রাজপথের নাম বদলে কর্তব্য পথ করার সিদ্ধান্ত হবে। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পেরিয়ে তার পিছনে বিরাট ছত্রি পর্যন্ত রাস্তার নাম কর্তব্য পথ হবে।

ইন্ডিয়া গেটের পিছনে ছত্রিতে ব্রিটিশ জমানায় রাজা পঞ্চম জর্জের মূর্তি বসানো ছিল। পরে তা সরিয়ে করোনেশন পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ছত্রিতে সুভাষচন্দ্র বসুর গ্র্যানাইটের মূর্তি বসানো হবে। আপাতত সেখানে লেজার রশ্মির ত্রিমাত্রিক ছবি রাখা হয়েছিল। মূর্তি উদ্বোধনের পরে রাইসিনা হিলস থেকে ইন্ডিয়া গেটের মাঝখান দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর ৩০ ফুট উঁচু মূর্তি চোখে পড়বে।

ব্রিটিশ জমানার চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা অবশ্য মোদী জমানায় এই প্রথম নয়। কিছু দিন আগেই নৌসেনার পতাকার নকশা থেকে সেন্ট জর্জ’স ক্রস সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের রাস্তার নাম রেস কোর্স থেকে বদলে লোক কল্যাণ মার্গ করা হয়েছে। ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ভারতীয় সৈনিকদের স্মৃতিতে তৈরি ইন্ডিয়া গেটের পাশে ভারতের হয়ে যুদ্ধে নিহত জওয়ানদের স্মৃতিতে ওয়ার মেমোরিয়াল তৈরি হয়েছে। প্রজাতন্দ্র দিবসের পরে ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ অনুষ্ঠানে ‘অ্যাবাইড উইথ মি’ গানের সুর বাদ দিয়ে ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’-র সুর বাজানো হয়েছে।

কংগ্রেস বা বিরোধী দলগুলি এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই কংগ্রেসের মিলিন্দ দেওরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তাঁর বক্তব্য, যে রাস্তা গণতন্ত্রের মন্দির, সংসদে যাচ্ছে, তার নাম কর্তব্য পথ হওয়া সঠিক। এতে জনসেবাই যে আসল কর্তব্য, তা মনে করিয়ে দেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rajpath Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE