রাজস্থানে রাজনৈতিক টানাপড়েন অব্যাহত।
রাজস্থান সঙ্কট এ বার পৌঁছে গেল রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত। রাজ্যপাল যখন বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে চাইছেন না, তখন রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ করা উচিত, দাবি করল কংগ্রেস। রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র আবার ২১ দিনের নোটিসের গোঁ ধরে রয়েছেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব আবার বলছেন, তিন সপ্তাহের সময় চাওয়া আসলে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়া। তার মধ্যেই অশোক গহলৌতকে উচিত শিক্ষা দেবেন বলে নতুন হুমকি দিয়েছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। দ্বারস্থ হচ্ছেন আদালতের। নিশ্চুপ সচিন পাইলট শিবির। সব মিলিয়ে জয়পুরে জমজমাট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক টানাপড়েন।
অধিবেশনই চাই গহলৌতের
মূল টানাপড়েন বিধানসভার অধিবেশন ডাকা নিয়ে। ২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের মতো পর্যাপ্ত বিধায়ক সংখ্যা নিশ্চিত হতেই আস্থা ভোটের জন্য দাবি করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। তার জন্য বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে রাজ্যপালের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। রাজভবন থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছেন গহলৌত শিবিরের কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবারও রাজভবন ও অন্যত্র অবস্থান-বিক্ষোভ হয়েছে। পাশাপাশি আজ ফের মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন গহলৌত।
২১ দিনে অনড় রাজ্যপাল
গহলৌতের দাবি মানতে পারেন, কিন্তু শর্ত রয়েছে রাজ্যপালের। মুখ্যমন্ত্রী জরুরি ভিত্তিতে অধিবেশন ডাকার আর্জি জানিয়ে রাজভবনে চিঠি পাঠানোর পর রাজ্যপাল আবার পাল্টা এক গুচ্ছ প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন গহলৌত। তাঁর বক্তব্য, অধিবেশন ডাকতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু জানতে চেয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী কি আস্থা ভোট চান? তা হলে অধিবেশন ডাকতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি সেটা না হয়, তা হলে ২১ দিনের সময় দিতে হবে। কারণ এই মহামারির পরিস্থিতিতে এত অল্প সময়ের নোটিসে অধিবেশন ডাকা প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বিধি কী ভাবে মেনে চলা হবে, সে বিষয়েও জানতে চান রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র।
আরও পড়ুন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪৭৭০৩ জন, মোট সুস্থ সাড়ে ন’লাখ
সরব অধীর
রাজ্যপাল যে ২১ দিনের সময় চেয়েছেন, সেটা আসলে বিজেপির সুবিধা করে দিতে, খোঁচা কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজস্থানেও ‘অপারেশন পদ্ম’ শুরু হয়েছে বলে এই টানাপড়েনের গোড়া থেকেই অভিযোগ তুলে আসছিল হাত শিবির। সেই দিকে ইঙ্গিত করে অধীরের তোপ, “রাজ্যপাল অধিবেশন ডাকার জন্য ২১ দিনের সময় চাইছেন। তাতে বিজেপি ঘর গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে।’’
Rajasthan governor stalls the house for another 21 days which certainly offers BJP party to consolidate his position and to help add the number of horses in the stable of Haryana, Cong & allies are steadfast to thwart any conspiracy. Kalraj Ji ke kala kaabil-e-tareef zarur hai.
— Adhir Chowdhury (@adhirrcinc) July 28, 2020
রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চায় কংগ্রেস
কংগ্রেসের ঘরে ভাঙন ধরলেও ম্যাজিক ফিগার কার্যত নিশ্চিত। তাই অধিবেশনের দাবি রাইসিনা হিলস পর্যন্ত পৌঁছে দিল কংগ্রেস। রাজ্যপাল অধিবেশন ডাকতে না চাইলে রাষ্ট্রপতি হস্তক্ষেপ করুন, এই দাবি জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। তাঁর বক্তব্য, রাষ্ট্রপতি হস্তক্ষেপ করে রাজস্থানের রাজ্যপালকে বিধানসভার অধিবেশন ডাকার নির্দেশ দিন। এ বিষয়ে তাঁর ‘সম্পূর্ণ ক্ষমতা’ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আচমকাই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভেঙে পড়ল সেতু, বিচ্ছিন্ন ডুয়ার্স
নয়া হুমকি মায়াবতীর
রাজস্থানে ক্ষমতার অংশীদার বহুজন সমাজ পার্টি। মায়াবতীর দলের ৬ বিধায়ক রয়েছেন বিধানসভায়। দলের বিধায়কদের আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, কংগ্রেসকে ভোট দিতে সেই বিধায়ককে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। জয়পুরের টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে মায়াবতী হুমকি দিয়েছেন, “আগেও আদালতে যেতে পারত বিএসপি। কিন্তু কংগ্রেস এবং অশোক গহলৌতকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সময়ের অপেক্ষা করছিলাম আমরা। কিন্তু এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আদালতেই যাব।’’
BSP could have gone to the court earlier too but we were looking for a time to teach Congress party and CM Ashok Gehlot a lesson. Now we have decided to go to the Court. We will not let this matter alone. We will go even to the Supreme Court: BSP Chief Mayawati pic.twitter.com/vxTI5up3BQ
— ANI UP (@ANINewsUP) July 28, 2020
গোড়ার কথা
টানাপড়েনের সুত্রপাত সচিন পাইলটরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিল্লিতে চলে যাওয়ার পর থেকে। তার পর থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। পাইলটকে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি এবং উপমুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর পর সেই তৎপরতা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত বিধায়কদের হোটেলবন্দি করে পর্যাপ্ত সংখ্যা নিশ্চিত হতেই অধিবেশন ডেকে আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে গহলৌত শিবির। কিন্তু রাজ্যপাল ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছেন। আর এই নিয়েই রাজভবন গহলৌত সঙ্ঘাত চরমে উঠেছে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও পাইলট শিবির এখনও চুপচাপ। সংবাদ মাধ্যমে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন উপস্থিতি না থাকলেও পরিস্থিতির উপর যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নজর রয়েছে, সেটা বলছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy