তামিলনাড়ুতে বিতর্কের পর এবার পড়ুয়াদের উপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল মহারাষ্ট্রের বিজেপির বিরুদ্ধে। জাতীয় শিক্ষানীতির ভিত্তিতে মহারাষ্ট্রের স্কুলগুলির প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছে দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার। ত্রি-ভাষা শিক্ষার নীতি মেনে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে
প্রথম ভাষা মরাঠী, দ্বিতীয় ভাষা ইংরাজি ও তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকেই রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
হিন্দি পড়ানো নিয়ে ফডণবীস সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে সরব হয়েছেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে। তিনি এ ভাবে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়াকে ‘মরাঠী অস্মিতার উপর আঘাত’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। রাজের কথায়, ‘‘আমরা হিন্দু হতে পারি, কিন্তু হিন্দিভাষী নই।’’ তামিলনাড়ুর ধাঁচেই রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জানিয়েছে, মরাঠা ভূমিতে হিন্দির আগ্রাসন কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরিকল্পিত ভাবে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বলে সরব হয়েছে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্যের কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াডেট্টিওয়রের কথায়, ‘‘হিন্দি ভাষা ঐচ্ছিক হলে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু বাধ্যতামূলক করে তা পড়ুয়াদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবিলম্বে ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হোক।’’ অনেকেই মনে করছেন, ভাষার লড়াইকে সামনে রেখে আসলে বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি) নির্বাচনের আগে নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে চাইছে রাজনৈতিক দলগুলি।
মহারাষ্ট্র সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে রাজ ঠাকরের দল। রাজ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও ভাবেই ওই নির্দেশ মেনে নেওয়া হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘ত্রি-ভাষার পড়ানোর যে যুক্তিই দেওয়া হোক না কেন, ওই নীতি শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না। কারণ, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মহারাষ্ট্রবাসী মেনে নেবে না। ’’ তাঁর মতে, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে মরাঠী ও অ-মরাঠীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হবে।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকেই মনে করছেন, পরিকল্পিত ভাবে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে রাজ ঠাকরের দল। প্রথমত, মরাঠী অস্মিতার প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, সামনেই বিএমসি নির্বাচন। ওই নির্বাচনে একা লড়ার কথা ভাবছে বিজেপি। বিজেপির ওই সিদ্ধান্ত অস্বস্তিতে পড়েছেন এনডিএ-র শরিক শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে ও রাজ ঠাকরে। সম্প্রতি রাজের সঙ্গে দেখা করেন শিন্ডে। রাজকে পাশে নিয়ে বিজেপির সঙ্গে দরকষাকষির প্রশ্নে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে চাইছেন শিন্ডে। ঘটনাচক্রে তারপরেই ত্রি-ভাষা শিক্ষানীতি চালু হওয়ায় বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর সিদ্ধান্ত নেন রাজ। তাঁর উদ্দেশ্য, মরাঠা ভোট কোনও ভাবেই যেন তাঁদের থেকে সরে না যায়। যা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপিকে।
রাজ্যের হিন্দিভাষী ভোটের কথা মাথায় রেখে হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার যে সিদ্ধান্ত ফডণবীস নিয়েছেন, তা থেকে সরে এলে বিহারের ভোটেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ত্রি-ভাষা নীতি থেকে সরে আসা হবে না— সে কথা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফডণবীস। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের সংযোগকারী ভাষা হিসেবে হিন্দি শেখা
প্রয়োজন। তাই শিক্ষানীতিতে হিন্দিকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোনও পড়ুয়া অন্য ভাষা শিখতে চাইলে শিখতেই পারে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)