চন্দ্রভাগা সেতু পরীক্ষায় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রবিবার। ছবি: পিটিআই।
সেতু শুধু সেতু নয়, অর্থনীতির দিক-বদলের হাতিয়ারও হয়ে উঠবে বলে রবিবার বার্তা দিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। লোকসভা নির্বাচনের আগে চন্দ্রভাগা নদীর উপরে নির্মিত ‘চেনাব ব্রিজ়’ বা ‘বিস্ময়সেতু’ গোটা জম্মু-কাশ্মীরেরই অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে, ঘোষণা করেছেন তিনি।
এ দিন জম্মুর বাক্কালে চন্দ্রভাগার গিরিখাত থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচুতে তৈরি ওই সেতুর উপরে রেলমন্ত্রীকে নিয়ে ছুটল প্রথম ট্রলি। তিনি বলেন, ‘‘উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেললিঙ্ক (ইউএসবিআরএল) প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ কাল ধরে চললেও ২০১৪ সালে মোদী সরকার আসার পরে তার গতি বেড়েছে। জম্মু-কাশ্মীর এই প্রথম সরাসরি রেলপথে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত হবে।’’
জম্মু-কাশ্মীরের আপেল, শুকনো ফল, জাফরান ছাড়াও নির্মাণ শিল্পের সামগ্রী, অন্যান্য জরুরি পণ্য কাশ্মীরে পৌঁছে দিতে নতুন রেললাইন কী ভাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে, তা-ও ব্যাখ্যা করেন রেলমন্ত্রী। কাশ্মীরে পণ্য ওঠানামার জন্য নতুন চারটি গতিশক্তি টার্মিনাল নির্মাণ ছাড়াও বদগামে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস রক্ষণাবেক্ষণের ডিপো তৈরির কথা জানান তিনি। বলেন আঞ্চলিক অর্থনীতিকে উৎসাহ দিতে সদ্য-নির্মিত চন্দ্রভাগা সেতুকে কেন্দ্র করে তিনটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র তৈরির ভাবনার কথাও। রেলকর্তাদের দাবি, ওই সেতুর সূত্রে সংলগ্ন এলাকার ৭৩টি পাহাড়ি গ্রামের ১.৫ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এ-পর্যন্ত তৈরি হয়েছে পাঁচ কোটি কর্মদিবস। রাস্তা তৈরি হয়েছে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার।
ভৌগোলিক ভাবে অত্যন্ত প্রতিকূল পিরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণির মধ্যে ইউএসবিআরএল প্রকল্পের আওতায় জম্মুর রিয়াসি জেলার কৌরি ও বাক্কালের মধ্যে তৈরি হয়েছে চন্দ্রভাগা সেতু। দু’পাশের গিরিখাতের মধ্যে ওই সেতু নির্মাণের আগে সেখানে পৌঁছতেই লেগেছে প্রায় ছ’বছর। খাড়া পাহাড় কেটে ২৬ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি ছাড়াও শুধু সড়কপথে যাতায়াতের জন্য ৪০০ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খনন করতে হয়েছে। পুরো সেতু নির্মাণে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার টন ইস্পাত লেগেছে বলে রেলের খবর। সিসমিক জ়োন-৬-এর আওতায় থাকা ওই সেতু রিখটার স্কেলের হিসেবে আট মাত্রার ভূমিকম্প সইতে পারবে বলে জানান রেলমন্ত্রী। প্রায় ৫৫০ মিটার দীর্ঘ একটি ইস্পাতের আর্চের উপরে তৈরি হয়েছে চন্দ্রভাগা সেতু।
রেলকর্তারা জানান, গিরিখাতে থাকা সেতুর উপর দিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রবল গতিতে ঝড় বয়ে যায়। ওই অংশে দেড়শো কিলোমিটার গতিতে ঝড় বয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। তাপমাত্রা প্রায়ই হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে যায়। সেতু থেকে গ্রীষ্মেও বরফ দেখা যায় পাহাড়চূড়ায়। তাপমাত্রার ওঠা-পড়া সহ্য করার পাশাপাশি সেতুটি প্রায় ২৬৬ কিলোমিটার গতিবেগের বায়ুপ্রবাহের ধাক্কা সইতে পারবে বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা। যদিও সেতুর উপরে হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারে পৌঁছলে আর ট্রেন চালানো যাবে না। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় তা বন্ধ হয়ে যাবে। ভূমিকম্পের অভিঘাত সহ্য করতে ৮০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫০ মিটার প্রশস্ত ছোটখাটো একটি ফুটবল মাঠের আকারে সেতুর ভিত তৈরি করা হয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী।
সেতুতে স্বাভাবিক অবস্থায় সর্বাধিক ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ছুটতে পারবে। সেতুর উপরে রেললাইনের নীচে ইস্পাতের তৈরি স্লিপারের জোগান দিয়েছে বঙ্গের হাওড়ার একটি সংস্থা, জানিয়েছেন কোঙ্কন রেলের আধিকারিকেরা। প্রায় আড়াই হাজার ইংরেজি ‘এইচ’ বর্ণের আকারবিশিষ্ট বিশেষ স্লিপার ব্যবহার করা হয়েছে রেললাইন পাতার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy