গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কয়েক ঘণ্টা আগেই ঝাড়খণ্ডে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বণিকসভা সিআইআইয়ের ‘বিকশিত ভারতের দিকে যাত্রা’ কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন তাঁর সরকারের এক দশকে রেল বাজেট আট গুণ বেড়েছে। গত ইউপিএ জমানার তুলনায় হাইওয়ে খাতে আট গুণ এবং কৃষি খাতে চার গুণ বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিও করেন তিনি। যদিও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে কোনও শোকবার্তা জানাননি প্রধানমন্ত্রী।
এক দশক আগেও, আলাদা বাজেট বরাদ্দ ছিল রেলের জন্য। মোদী সরকারের আমলেই তা হারিয়েছে রেল মন্ত্রক। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, এ বার নির্মলা সীতারামনের বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রক হিসাবে বরাদ্দে এক বার নামও উঠে আসেনি রেলের! এই পরিস্থিতিতে রেলের বাজেট নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গোপনীয়তার অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের তরফে। পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠেছে একের পর এক রেল দুর্ঘটনা নিয়ে। তাঁর তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রিত্বে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় সদ্য মারা গিয়েছেন বহু যাত্রী। দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় বড় রেল দুর্ঘটনার দিন মোদীর এমন মন্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বারের রেল বাজেটে পরিকাঠামো খাতে খরচ ধরা হয়েছে ২.৬২ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হবে রেলের সুরক্ষা খাতে। সাধারণত বাজেট পেশের পরে বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেশের আর্থিক পরিস্থিতির আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনার দায়িত্ব পালন করেন দেশের অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এ বার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সিআইআইয়ের ‘বিকশিত ভারতের দিকে যাত্রা’র লক্ষ্যে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সিআইআই-কে তা বোঝানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সরকারের কর্মসংস্থানের ঘোষণাগুলি রূপায়ণের জন্য শিল্পের সাহায্য প্রয়োজন। তাই মোদী নিজেই বণিকসভার প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়েছেন।
মোদী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের আমলেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে ভারত।’’ প্রধানমন্ত্রীর পদে তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহের সরকারের শেষ বাজেটের যে কলেবর ছিল, এ বার তাঁর তৃতীয় বারের প্রধানমন্ত্রিত্বের সূচনায় তা তিন গুণ বেড়েছে বলে জানান মোদী। তিনি বলেন, ‘‘২০১৩-১৪ সালে মনমোহন সিংহ সরকারের শেষ বাজেট ছিল ১৬ লক্ষ কোটি টাকার। আজ আমাদের বাজেট তিন গুণ বেড়ে ৪৮ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে।’’ তাঁর সরকারের আমলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গতি নতুন মাত্রায় পৌঁছনো এবং মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আসার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই ব্যাঙ্কিং বিনিয়োগ সংস্থা জেফ্রিসের অর্থনীতি মূল্যায়নের রিপোর্টে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, ২০২৭ সালের মধ্যে জাপান এবং জার্মানিকে টপকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে ভারত। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘‘এক দশক আগে ভারতের অর্থনীতি ছিল বিশ্বের নবম বৃহত্তম। বর্তমানে তা তিন লক্ষ ৪০ হাজার কোটি ডলার ছুঁয়েছে। পৌঁছে গিয়েছে পঞ্চম স্থানে। আগামী চার বছরের মধ্যে পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে ভারত। হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।’’
ওই রিপোর্ট প্রকাশের আগে গত বছর লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘২০২৭-এর মধ্যেই জাপান এবং জার্মানিকে ছাড়িয়ে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তিতে পরিণত হবে ভারত। আমাদের লক্ষ্য, ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষে পদর্পণের আগে ৩৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠা।’’ এই পরিস্থিতিতে ২০৪৭-এ উন্নত অর্থনীতির লক্ষ্যে এই বাজেটে আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাতে শিল্পমহলের ভূমিকা মঙ্গলবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। বিভিন্ন খাতে রাজ্যগুলির মূলধনী খরচে (ক্যাপেক্স) গতি আনার লক্ষ্যে দু’বছর আগে বাজেটে বিশেষ অনুদান প্রকল্প ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০০৪ সালে মূলধনী খরচ ছিল ৯০ হাজার কোটি টাকা। এখন তা ১১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy