রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।
গালওয়ান উপত্যকা থেকে সেনার পিছু হটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বটে। কিন্তু মে মাসের আগের স্থিতাবস্থা ফিরে পেতে পূর্ব লাদাখ সংলগ্ন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) এলাকার দীর্ঘ সময় লাগবে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত কাল খোলামেলা এবং দীর্ঘ আলোচনা করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। কিন্তু এই আলোচনার পরে দু’দেশের বিবৃতির সুরে বৈষম্য রয়েছে। সেনার পিছু হটা (ডিসএনগেজমেন্ট) ও সেই সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সমাবেশ কমানো (ডিএসকালেশন)—দুইয়ের উপরেই জোর দিয়েছে ভারত তার বিবৃতিতে। কিন্তু চিনের বিবৃতিতে ডিসএনগেজমেন্ট-এর কথা বলা থাকলেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় মজুত তাদের বিপুল সেনা এবং অস্ত্র কমানোর অর্থাৎ ডিএসকালেশন-এর উল্লেখই নেই। অর্থাৎ চিনের ইঙ্গিত, এখনই এলএসি থেকে তাদের বিপুল সেনা ও সরঞ্জাম সরাতে চায় না তারা।
আক্রমণাত্মক স্বরে চিনা বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘ভারত-চিন সীমান্তের পশ্চিম সেক্টরে গালওয়ান উপত্যকায় সম্প্রতি ঠিক ও ভুল যা হয়েছে, তা খুবই স্পষ্ট। দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব দৃঢ় ভাবে বজায় রাখবে চিন। পাশাপাশি বজায় রাখা হবে সীমান্ত এলাকায় শান্তি এবং স্থিতি’। কূটনীতিকদের মতে, কৃতকর্মকে কার্যত বুক ফুলিয়ে ঠিক বলেই দাবি করেছে বেজিং এই বিবৃতিতে।
আরও পড়ুন: সেনা পিছোনোর সিদ্ধান্তে লাভ কী, প্রশ্ন তুললেন বিশেষজ্ঞেরা
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ সরব হয়েছেন, ভারত এবং চিনের এই বিবৃতির পরে। তাঁর প্রশ্ন, ভারতীয় ভূখণ্ডে ২০ জন সেনার মৃত্যুকে দিব্যি যুক্তিসম্মত বলে চালিয়ে নিল চিন। কেন তার প্রতিবাদ করা হল না? গালওয়ান উপত্যকার ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়টিকে কেন উল্লেখ করা হল না বিবৃতিতে? প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ে কেন চাপ দেওয়া হল না চিনকে?
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ১৯৯৩ সালে ভারত-চিন যে দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত চুক্তি হয়, সেখানে বলা ছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ন্যূনতম সেনা থাকবে দু’তরফেরই। কিন্তু গত কাল ডোভাল এবং ওয়াং ই-র আলোচনার পরেও চিনা বিবৃতিতে এলএসসি থেকে সেনা সরানোর কথা না-থাকায় কিছুটা হতাশ নয়াদিল্লি। কিন্তু এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে সুর চড়াতে চায় না তারা। ভারতীয় সূত্রের মতে, ধাপে ধাপে পরিস্থিতিকে আয়ত্তের মধ্যে আনার চেষ্টাই এখন অগ্রাধিকার। সাউথ ব্লকের আশা, পরিস্থিতি ক্রমশ শান্ত হয়ে এলে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা কমিয়ে ফেলবে চিন। তার কারণ দু’টি। প্রথমত, গত কাল তাদের বিবৃতিতে সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে এনে ভারত-চিন বৃহৎ চিত্রটি দেখার জন্য অনুরোধ করেছে বেজিং। উদ্দেশ্য স্পষ্ট। বাণিজ্যক দিক থেকে ভারতের বিশাল বাজার যাতে পুরোপুরি হাতছাড়া না-হয়, সেই চেষ্টা শুরু করবে তারা। আজ সে দেশের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে বাণিজ্য ক্ষেত্রে চিনকে নিষিদ্ধ করার মতো বোকামি যেন ভারত না-করে। তা হলে পরিস্থিতি খারাপ থেকে অতীব খারাপ হবে।
দ্বিতীয়ত, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিশাল মাপের সেনাবাহিনী এবং অস্ত্রশস্ত্র সাজসরঞ্জাম বহুদিন ধরে মোতায়েন করা অত্যন্ত ব্যয়বহুলও বটে। নিছক চাপ ধরে রাখার জন্য তারা মাসের পর মাস বিপুল সেনা সমাবেশ করে রাখবে, মনে করছে না দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy