রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
সাংসদ পদ ফিরে পেলেন রাহুল গান্ধী। শুক্রবারই সুপ্রিম কোর্টের তরফে তাঁর শাস্তি স্থগিত করা হয়েছিল। তার ৪৮ ঘণ্টা পরেই রাহুলকে তাঁর সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। স্পিকারের সচিবালয় থেকে সোমবার সকালে ওই বিষয়ে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এর ফলে মঙ্গলবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা শুরু হবে সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন রাহুল। যোগ দিতে পারবেন ওই সংক্রান্ত বিতর্কেও। তবে তার আগে সোমবার দুপুরই ১২টার কিছু আগে লোকসভায় আসেন কেরলের ওয়েনাড়ের সাংসদ রাহুল।
মোদী পদবি অবমাননা মামলায় রাহুলকে গত মার্চ মাসে দোষী সাব্যস্ত করেছিল সুরাতের আদালত। তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ডও দিয়েছিলেন সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক। ওই শাস্তির ফলেই রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। কারণ, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ চলে যায়। এমনকি, আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। কিন্তু শুক্রবার রাহুলের সেই শাস্তির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের ওই সিদ্ধান্তের পরই রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার রাস্তা সুগম হয়।
শুক্রবারের সুপ্রিম স্থগিতাদেশের পরই রাহুলকে তাঁর সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লোকসভায় আর্জি পেশ করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘আমরা আশা করব স্পিকার যেমন দ্রুততার সঙ্গে রাহুলজির পদ খারিজ করেছিলেন, তেমনই সক্রিয়তা দেখা যাবে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও।” লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীও বলেন, ‘‘রাহুলজিকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিতেই হবে।’’ শুক্রবারের পর সোমবারই বসে লোকসভার অধিবেশন। সোমবার সকালেই রাহুলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে লোকসভার স্পিকারের সচিবালয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে মঙ্গলবার বিরোধীরা যখন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন, তখন সংসদে উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল। সে ক্ষেত্রে মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতেও দেখা যেতে পারে তাঁকে।
গত মার্চে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হয়েছিল লোকসভা থেকে। চার মাস পর সেই পদ ফিরে পেলেন ওয়েনাড় থেকে নির্বাচিত সাংসদ রাহুল। সোমবার লোকসভার স্পিকারের সচিবালয় থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘যে হেতু রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত, তাই আপাতত তাঁর সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হল।’’ ওই বিবৃতির পরেই সংসদে বিরোধীদের আলোচনা কক্ষে উদ্যাপনের মেজাজ দেখা যায়। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে দেখা যায় কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে মিষ্টিমুখ করাতে। খাড়্গে তাঁর পাশে বসা তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিষ্টিমুখ করান। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ অন্যান্য বিরোধী জোটের শরিক দলের সদস্যরাও। প্রত্যেককেই মিষ্টিমুখ করানো হয়। অন্য দিকে, দিল্লির ১০ জনপথে সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনের সামনেও ঢোল-নাকাড়া নিয়ে নেমে পড়ে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্যের জন্য গত ২৩ মার্চ রাহুলকে দু’বছরের করাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৪ মার্চ রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ সাংসদ বা বিধায়ক পদ চলে যায়। রাহুলকে ওই মেয়াদের সাজা দেওয়ার ফলে শুধু সাংসদ পদ হারানো নয়, ছ’বছরের জন্য রাহুলের ভোটে লড়াও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে সুরাত আদালতের রায় বহাল রেখেছিল সুরাত দায়রা আদালত এবং গুজরাত হাই কোর্টও। কিন্তু শুক্রবারের সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ফলে ২০২৪ সালে রাহুলের ভোটে লড়ার পথেও বাধা দূর হয়। কারণ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দু’বছরের চেয়ে এক দিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে না। বলবৎ হবে না, ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে লড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy