রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
কার্বোহাইড্রেট নয়। ‘লিন’ প্রোটিন। ভাত-রুটি কম খেয়ে মুরগির মাংস বেশি করে খাচ্ছেন।
ভারত জোড়ো যাত্রায় ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে কংগ্রেস নেতারা পৌনে ছ’টা থেকে পদযাত্রা শুরু করছেন। রাহুল গান্ধী চাইছেন, আরও আগে হাঁটা শুরু হোক। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকেই বেরিয়ে পড়া হোক।
প্রতি দিন ভারত জোড়ো যাত্রা গড়ে ২০ থেকে ২১ কিলোমিটার করে চলছে। রাহুল চাইছেন, আরও বেশি। রোজ ২৫ কিলোমিটার হাঁটা হোক।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, এ সবের থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল, গত দেড় মাসে ভারত জোড়ো যাত্রা রাহুল গান্ধীকে আমূল বদলে দিচ্ছে। আরও সাড়ে তিন মাস পরে, ফেব্রুয়ারির শেষে ভারত জোড়ো যাত্রা শেষ হবে। কংগ্রেস নেতাদের আশা, কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে ফেলার পরে অন্য এক রাহুল গান্ধীর দেখা মিলবে।
কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার দাবি, ‘‘রাহুলের মাঠে-ময়দানে রাজনীতির অভিজ্ঞতা ছিল না। ভারত জোড়ো যাত্রা সেই অভাব পূরণ করে দিচ্ছে। বিজেপির পক্ষে এই রাহুলের গায়ে আবার পাপ্পু-র তকমা সেঁটে দেওয়া কঠিন। এ বার এক নতুন রাহুল গান্ধীর উত্থান হচ্ছে।’’
বুধবার সকালে কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নেবেন। তাঁর হাতে সভাপতি পদে নির্বাচনে জয়ের শংসাপত্র তুলে দেওয়া হবে। কংগ্রেস সভানেত্রী পদে সনিয়া গান্ধীর কাজের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েও প্রস্তাব পাঠ হবে। দিল্লির ২৪, আকবর রোডে এআইসিসি-র সদর দফতরের মঞ্চ সাজানো শেষ। মঞ্চের পিছনে পর্দায় মহাত্মা গান্ধী, সনিয়া ও খড়্গের ছবি। রাহুলের ছবি থাকছে না। রাহুল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি চলে এসেছেন। তবে অনুষ্ঠানে তিনি কিছু বলবেন না। খড়্গে সভাপতি হয়েও যে গান্ধী পরিবারের ‘রাবার-স্ট্যাম্প’ নন, সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা হবে।
কংগ্রেসের মুখ অবশ্য রাহুল গান্ধীই থাকবেন। বুধবারের অনুষ্ঠানের পরেই তেলঙ্গানা ফিরে যাবেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভারত জোড়ো যাত্রার ৫০তম দিন। ফের মেহবুবনগর থেকে যাত্রা শুরু হবে। কংগ্রেসের জনসংযোগ দফতরের নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক ও অন্ধ্র— এই চার রাজ্যে ১,২৭০ কিলোমিটার রাস্তায় এখনও
পর্যন্ত ৫০টি সংগঠন রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছে। আরও গোটা পঞ্চাশেক সংগঠন রাহুলের সঙ্গে এমনিই পথ হেঁটেছে। তাদের সঙ্গে রাহুলের কথাবার্তা হয়েছে। বেকারত্ব, রুটিরুজি, চাষিদের সমস্যা, ছোট-মাঝারি শিল্পের দুর্গতির মতো বিষয় উঠে এসেছে।’’ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, এর ফলে সাধারণ মানুষ কোথায় কী সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, তা হাতেকলমে টের পাচ্ছেন রাহুল।
কিছু দিন আগেই রাহুলের সঙ্গে যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন এআইসিসি-র সচিব রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। রণজিতের মতে, ‘‘টানা পাঁচ মাস ধরে রোজ ২০ থেকে ২১ কিলোমিটার রাস্তায় হাঁটা চাট্টিখানি কথা নয়। তার মধ্যেও রাহুল গান্ধী হাঁটতে হাঁটতে যাঁকে যখন চোখে পড়ছে, তাঁকে পাশে ডেকে নিচ্ছেন। কথা বলছেন। রাহুলকে এখনও আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আরও পোড়খাওয়া মনে হচ্ছে। বিজেপি তাঁর নামে কী বলল, তাতে আর কিছুই প্রভাব পড়বে না।’’
কংগ্রেসের অন্দরমহলে প্রশ্ন, শুধু পদযাত্রা করলেই কি নির্বাচনে সাফল্য আসবে? আগামী গুজরাত-হিমাচল বা আগামী বছরে কর্নাটক-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কি এর প্রভাব পড়বে?
দলের নেতাদের দাবি, রাহুল রাস্তায় নেমে প্রাথমিক কাজটা করে ফেলেছেন। মানুষের মধ্যে কংগ্রেস সম্পর্কে ফের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কর্নাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো যে রাজ্যে কংগ্রেস ধুয়ে-মুছে প্রায় সাফ হয়ে গিয়েছে, সেখানেও ভারত জোড়ো যাত্রায় বিপুল সাড়া মিলেছে। এরপরের নির্বাচনে লড়াইয়ের কাজটা কংগ্রেস সংগঠনকে করতে হবে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের মতে, সনিয়া গান্ধীর আমলে কংগ্রেসের সংগঠন অধিকাংশ রাজ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বুধবার নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মল্লিকার্জুনের কাজ হবে, সেই সংগঠনকে ঢেলে সাজানো। দলের তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা মল্লিকার্জুনের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
রাহুল যে টানা ৭ সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নেবেন, তা কংগ্রেসেরও কেউ আশা করেননি। রাহুল শুধু রোজ হাঁটছেন, তা নয়। দিনের শেষে বাকিদের সঙ্গে লোহার কন্টেনারেই রাত কাটাচ্ছেন। এত দিন রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হঠাৎ হঠাৎ বিদেশ চলে যান। কংগ্রেস নেতাদের মনে একটাই আশঙ্কা, বড়দিন-বর্ষশেষের ছুটিতে রাহুল অন্যান্য বারের মতো বিদেশ চলে যাবেন না তো!
এক রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতার উত্তর, ‘‘কোনও প্রশ্নই নেই। এ বার কন্টেনারেই বর্ষবরণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy