শুরু হল ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। রবিবার শুরুর আগে মণিপুরের খংজোম ওয়ার মেমোরিয়াল চত্বরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন রাহুল গান্ধীর। ছবি: পিটিআই।
‘আগামীতে ভারতের দর্শন’।
মণিপুরের আকাশে তখন রবিবাসরীয় সূর্য অস্তাচলে যেতে শুরু করেছে। ‘মহব্বত কি দুকান’ লেখা বাস তৈরি। সামনে, পিছনে কংগ্রেসের নেতাদের গাড়ির কনভয়।
মণিপুর থেকে মুম্বইয়ের পথে ৬৬ দিনের জন্য বাসে উঠে পড়বেন রাহুল গান্ধী। তার আগে মণিপুরের জনতার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনাদের সঙ্গে আগামীতে ভারতের যে দর্শন হবে, সেই দর্শন রাখতে যাচ্ছি। এই দর্শন হিংসার নয়। বিদ্বেষের নয়। একজন শিল্পপতির একচ্ছত্র আধিপত্যের নয়। বরং সম্প্রীতি, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের দর্শন। আপনাদের সঙ্গে মিলে, আপনাদের কথা শুনে, আমরা ভারতের সামনে তা রাখতে চলেছি।”
থৌবালের ‘ন্যায় ময়দান’ থেকে বেরিয়ে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র বাস যখন প্রথম জনতার সামনে পড়ল, রাহুল গান্ধী জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে বলছিলেন, “আপনারা কেমন আছেন? সব কেমন চলছে?” বাসে ওঠার আগে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, “এই যাত্রায় আমি বেশি কথা বলতে চাই না। আপনাদের যন্ত্রণা বুঝতে চাই।” নিজের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ফারাক বোঝাতে বলেছিলেন, “আমি আপনাদের নিজের ‘মন কি বাত’ বলতে চাই না, আমি আপনাদের ‘মন কি বাত’ শুনতে চাই।”
থৌবালে খংজোম ওয়ার মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাত্রা শুরু করে রবিবার সন্ধ্যায় রাহুল গান্ধী সেকমাইয়ে পৌঁছলেন। রাস্তায় বাস থেকে নেমে মানুষের সঙ্গে কথা বললেন। সোমবার ‘ন্যায় যাত্রা’ ঢুকে পড়বে নাগাল্যান্ডের কোহিমায়। তিন দিন নাগাল্যান্ডে কাটিয়ে তার পর অসম, অরুণাচল। ২৬ জানুয়ারি যাত্রা ঢুকবে পশ্চিমবঙ্গে।
৬,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু হয়ে গেল। মণিপুরের সূর্যাস্তকে সাক্ষী রেখে প্রশ্নটাও উঠে গেল, এই ‘আগামীতে ভারতের দর্শন’, এই ‘মন কি বাত’ না বলে মানুষের মনের কথা শোনা-র নীতি নিয়ে কি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সূর্যোদয় হবে?
আর এক সপ্তাহ পরেই অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা। রামমন্দির ঘিরে নরেন্দ্র মোদীর আবেগ তৈরির পরিকল্পনা যে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে চিন্তায় রাখছে, তা স্পষ্ট। আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে রাহুলের যাত্রা শুরুর আগে থৌবালের বিশাল জনসভায় এ নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছেন। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশানোর অভিযোগ তুলে খড়্গে বলেছেন, “ভগবানের কথা সবাই স্মরণ করেন, ভগবানে সবাই আস্থা রাখেন। ভোটের জন্য এ সব করবেন না। ভোট চাওয়ার জন্য ভোট পেতে এই ভান করবেন না। সব ছেড়ে এরা আজ নিজের রাজনীতিতে ধর্ম মিশিয়ে মানুষকে উস্কানি দেওয়ার কাজ করছেন।” রাম-নাম জপ করে মোদী নিজের পাপ ধোওয়ার চেষ্টা করছেন অভিযোগ এনে খড়্গে বলেছেন, “উনি সমুদ্রের তটে বেড়াতে যান। অনেক জায়গায় রাম-রাম-রাম-রাম জপ করতে বসেন। ‘মুখে রাম, বগলে ছুরি’ জনতার সঙ্গে এ সব করবেন না।”
রাহুল গান্ধীর কথাতেও আজ স্পষ্ট হয়েছে, শিয়রে লোকসভা নির্বাচন তাঁকে চিন্তায় রাখছে। হাতে সময় বেশি নেই। সেই কারণেই তিনি কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র মতো মণিপুর থেকে মুম্বই—এই গোটা রাস্তা পদযাত্রা করতে পারছেন না। কারণ তাতে সময় বেশি লাগবে। কিন্তু নির্বাচনের সময় বলে অধিকাংশটাই বাসযাত্রা, কিছুটা পদযাত্রা করা হচ্ছে।
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত যাত্রা চলেছিল প্রায় পাঁচ মাস ধরে। মণিপুর থেকে মুম্বই দু’মাসের যাত্রায় রাজনীতির হাওয়া আদৌ ঘোরানো যাবে কি? রাহুল যেন এর জবাবেই বললেন, ন্যায় যাত্রা কেন? ভারত সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের মধ্যে দিয়ে চলছে। সেই অন্যায়েরই নানা নিদর্শন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় তুলে ধরা হবে। তবে আসলে মানুষের কথা শোনা হবে বেশি। বলা হবে কম।নরেন্দ্র মোদীর মতো বাগ্মী নেতার মোকাবিলায় কম কথা বলে বাজিমাত করা যাবে কি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy