(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র। ছবি: পিটিআই।
লোকসভায় অধিবেশন কক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে কথা আর সংসদের নিম্ন কক্ষ থেকে বেরিয়ে ফোন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে— এই জোড়া পদক্ষেপে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র স্পিকার পদপ্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের অসন্তোষ অনেকটাই কাটিয়ে ফেললেন রাহুল গান্ধী।
লোকসভায় আগামিকাল স্পিকার নির্বাচন। ‘ইন্ডিয়া’র স্পিকার পদপ্রার্থী কংগ্রেসের কে সুরেশ। তৃণমূল অভিযোগ তোলে, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সুরেশের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়েই প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানান অভিষেক। তৃণমূলের নেতৃত্বের ক্ষোভের কথা জানার পরেই লোকসভায় ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে পাশে বসিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলতে দেখা যায় রাহুলকে। সূত্রের খবর, স্পিকার পদের প্রার্থীর নাম নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা না করার জন্য অভিষেকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন সনিয়া-পুত্র। সাংসদ হিসেবে শপথ গ্রহণ শেষে লোকসভা থেকে বেরিয়ে মমতাকে ফোন করেন তিনি। রাহুল তৃণমূল নেত্রীকে বোঝান, কোন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি কেন সুরেশের নাম ঘোষণা করতে হয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে রাহুলের তরফে মমতাকে ফোন কিছুটা অভূতপূর্ব বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রী অভিযোগ করেছিলেন তিনি লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেও রাহুল উত্তর দেননি। রাজনীতির অনেকের মতে, ‘ইন্ডিয়া’র বৃহত্তর স্বার্থে মমতা, অভিষেকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দূরত্ব অনেকাংশেই কমাতে সক্ষম হলেন রাহুল।
যদিও আজ বহু ক্ষণই স্পিকার পদপ্রার্থী নিয়ে দু’মেরুতে ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। দলীয় দফতরে বৈঠকের পরে বেলা ৪টে নাগাদ নতুন সংসদ ভবনের মকর দ্বারের সামনে চিত্রগ্রাহকদের অনুরোধে দলীয় সাংসদদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিষেক। সে সময়েই সেখানে উপস্থিত হন রাহুল। তৃণমূল সাংসদদের দেখে হাতজোড় করে তিনি বলেন ‘‘নমস্কার!’’ তারপর হেসে পাশ কাটিয়ে লোকসভার দিকে এগিয়ে যান রাহুল।
স্পিকার পদপ্রার্থী ঘোষণা নিয়ে তৃণমূলের ক্ষোভ সম্পর্কে রাহুল তত ক্ষণে অবগত হয়ে গিয়েছেন। এর পরেই লোকসভায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চলাকালীন রাহুল-অভিষেক কথা। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনার পরেই জট কাটার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তার পর রাহুল ফোন করে কথা বলেন মমতার সঙ্গে। ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে আরও এক পদক্ষেপ। পরে রাতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে হওয়া বৈঠকে তৃণমূলের তরফে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। সূত্রের খবর, আগামিকাল স্পিকার নির্বাচনে সুরেশের পক্ষে তৃণমূল যে ভোট দেবে তা অনেকাংশেই নিশ্চিত করা হয়েছে কংগ্রসকে। তবে বঙ্গের শাসকদল সূত্রের খবর, আজ রাতে আবার মমতার সঙ্গে কথা বলে আগামিকাল সকাল সাড়ে ৯টায় কংগ্রসকে চূড়ান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে তৃণমূলের অবস্থান।
রাহুলের হস্তক্ষেপে এ বারে মনোমালিন্য মিটেছে ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেস যে ভাবে ‘ইন্ডিয়া’র প্রার্থী হিসেবে সুরেশের নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল, তাতে প্রবল ক্ষুব্ধ হয় তৃণমূল শিবির। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল প্রার্থী ঘোষণার পিছনে যুক্তি দেন, সময়ের অভাবে প্রার্থীর নাম দ্রুত ঘোষণা করতে হয়েছিল। কিন্তু সকালে কংগ্রেসের ওই মনোভাব দেখে সুরেশের পক্ষে সই না করার সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘কংগ্রেসকে বুঝতে হবে তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’য় থাকলেও, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হয়নি। তাই আমাদের উপর কংগ্রেস চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল নিলে ভুল করবে।’’
আজ রাতে খড়্গের বাড়িতে বৈঠকেও তৃণমূল এবং অন্য অনেক দল কংগ্রসকে বলেছে জোটের শরিকদের মধ্যে আরও ভাল সমন্বয় দরকার। আজ যা হয়েছে তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। আলোচনা হয়েছে ধ্বনি ভোট হবে না কি ডিভিশন হবে তা নিয়েও। সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র নেতা রামগোপাল যাদব বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া-র সাংসদ সংখ্যা যা রয়েছে তার থেকে কম না হয়। একই মত শিবসেনা তৃণমূলেরও। আজ তৃণমূলের অধিকাংশ সাংসদ শপথ নিলেও, পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন দেব। আগামিকাল যাতে তিনি স্পিকার নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য কাল সকাল ১১টার মধ্যে তাঁকে শপথ নিতে নির্দেশ দিয়েছে দল।
তৃণমূলের বক্তব্য, কংগ্রেস ‘ইন্ডিয়া’য় বড় দাদার ভূমিকা নিতে পারে এমন আশঙ্কা ছিলই। সে কারণে শিবসেনা (ইউটিবি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, এনসিপি (এসপি) নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করে অভিষেক পাল্টা অক্ষ গঠনে তৎপর হয়েছিলেন। স্পিকার-প্রার্থী নিয়ে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুপুরে সাউথ অ্যাভিনিউ-তে অভিষেকের বাড়িতে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। সূত্রের মতে, সেই বৈঠকে স্থির হয়, বিষয়টিকে হাল্কা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। কংগ্রেসের ওই চাপিয়ে দেওয়ার রাজনীতির বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই সরব হবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই লোকসভায় দলীয় সাংসদদের নিয়ে শপথ গ্রহণে যাওয়ার আগে কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনা করে অভিষেক বলেন, ‘‘(স্পিকার পদে প্রার্থীর নাম নিয়ে) কংগ্রেসের তরফে আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। আলোচনাও হয়নি। দুর্ভাগ্যপূর্ণ ভাবে এটি একটি একতরফা সিদ্ধান্ত।’’ ওই বক্তব্যের পরেই অভিষেকের সঙ্গে আলোচনা এবং জট কাটাতে তৎপরতা শুরু করেন রাহুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy