রাহুল গান্ধী এবং গুলাম নবি আজাদ। ফাইল চিত্র।
গত এক সপ্তাহ ধরে গুলাম নবি আজাদ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, হিমন্তবিশ্ব শর্মার মতো কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়া নেতারা লাগাতার রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন। গত দু’দিনে বিজেপি কংগ্রেসের দুই নেতা, অনিল কে অ্যান্টনি, কিরণ রেড্ডিকে দলে টেনেছে।
পাল্টা জবাবে আজ রাহুল গান্ধী নিজে অভিযোগ তুললেন, আদানি কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতে, সত্যি লুকোতে রোজ এই প্রক্রিয়া চলছে। তাঁর বক্তব্য, আসল প্রশ্ন হল আদানির সংস্থায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেনামি অর্থ কার? সেই সঙ্গে রাহুল আদানির ইংরেজি বানানের প্রতিটি অক্ষরের সঙ্গে গুলাম নবি, সিন্ধিয়া, হিমন্ত, কিরণ রেড্ডি, অনিল অ্যান্টনিদের নামের বানান জুড়ে টুইট করেছেন। রাহুল সার্বিক ভাবে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে পা বাড়ানো নেতাদের সমালোচনা করলেও এ ভাবে নাম করে দলের প্রাক্তন নেতাদের এই প্রথম আক্রমণ করলেন। কংগ্রেসের যুক্তি, আদানি কাণ্ড থেকে নজর সরাতেই বিজেপি পুরনো কংগ্রেস নেতাদের মাঠে নামিয়েছে। তাঁরা রোজ রাহুলকে নিশানা করছেন। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পরে যখন সমস্ত বিরোধী দল তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে, তখন কংগ্রেসের কিছু পিছনের সারির নেতাদের টেনে এনে বিজেপি রাহুলের প্রতি কংগ্রেস নেতাদের অনাস্থা তুলে ধরতে চাইছেন। সবটাই সুপরিকল্পিত কৌশল। যার একমাত্র লক্ষ্য আদানি কাণ্ড থেকে নজর সরানো। রাহুল সেটারই মুখোশ খুলে দিয়েছেন।
সম্প্রতি কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা গুলাম নবি আজাদের আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই উপলক্ষে তিনি একের পর এক সাক্ষাৎকারে রাহুলের সমালোচনা করেছেন। অভিযোগ তুলেছেন, অন্য অনেকের মতো তিনিও রাহুলের জন্যই দল ছেড়েছেন। যখনই দলের কোনও নেতা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন, তখনই রাহুল ‘উনি বেরিয়ে যান, আরএসএস-এ গিয়ে যোগ দিন’ বলে মন্তব্য করেছেন। রাহুল নিজে কংগ্রেসের পক্ষে না বিপক্ষে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। রাহুল গত নয় বছর ধরে একই বিষয়ে আটকে রয়েছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন। এর পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিন্ধিয়া অভিযোগ তোলেন, কংগ্রেসের মধ্যে দেশ-বিরোধী ‘বিশ্বাসঘাতকের মতাদর্শ’ ছাড়া আর কোনও আদর্শ অবশিষ্ট নেই। সিন্ধিয়ার মতোই কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত নিয়মিত রাহুলকে নিশানা করছেন। এর পরে কেরলের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এ কে অ্যান্টনির পুত্র অনিল বিজেপিতে যোগ দিয়ে অভিযোগ তোলেন, গোটা কংগ্রেস একটি পরিবারের জন্য কাজ করছে। আজ রাহুল পাল্টা আক্রমণে যাওয়ায় হিমন্ত তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাহুলকে নিশানা করে হিমন্ত বলেছেন, ‘‘ভদ্রতার বশে কোনওদিন জিজ্ঞাসা করি, বোফর্স ও ন্যাশনাল হেরাল্ডের চুরির টাকা কোথায় গেল। আদালতে দেখা হবে।’’ অনিল অ্যান্টনি কটাক্ষ করেছেন, রাহুল জাতীয় স্তরের নেতার বদলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ট্রোল’-এর মতো আচরণ করছেন। কেরলের অনিল, অন্ধ্রের কিরণ রেড্ডির পরে বিজেপি আজ তামিলনাড়ুর প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা সি আর কেশবনকে দলে টেনেছে। তিনি দেশের প্রথম গভর্নর জেনারেল সি রাজাগোপালাচারির প্রপৌত্র।
বিজেপি নেতারা মানছেন, এই তিন জনের কারও রাজনৈতিক প্রভাব নেই। কিন্তু কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। একই সঙ্গে বিজেপি আজ শরদ পওয়ারের আদানি সংক্রান্ত অবস্থান নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করেছে। শুক্রবার পওয়ার আদানি-কাণ্ডে জেপিসি তদন্তের দাবি মানেননি। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টও তাঁর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। শনিবারও পওয়ার বলেছেন, ‘‘অম্বানী-আদানি নিয়ে সরকারকে সমালোচনা করা হয়। দেশের জন্য তাঁদের অবদান ভাবতে হবে। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, চাষিদের সমস্যা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’
বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালব্যের প্রশ্ন, কংগ্রেস কি এ বার পওয়ারকেও নিশানা করবে? এ সব নিয়ে রাহুল গান্ধী কি নমনীয় অবস্থান নেবেন? নিজের সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে সরব হলেও রাহুল দিল্লিতে ইটালির সংস্কৃতি কেন্দ্রে সময় কাটাচ্ছেন বলেও মালব্য কটাক্ষ করেছেন। এর পর রাহুলের বক্তব্য, ‘‘মূল্যবৃদ্ধি কী ভাবে কমবে? মানুষের যন্ত্রণা কী ভাবে চোখে পড়বে? সরকারের পুরো নজর তো আদানির আয় বাড়ানো ও তাঁকে তদন্ত থেকে বাঁচানোর দিকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy