বোনের গাল টিপে কি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার তোপের মুখে পড়তে হল রাহুল গান্ধীকে! আজ আচমকাই লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুলের ‘আচরণ’-এর দিকে আঙুল তুললেন স্পিকার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বেশ কিছু এমন ঘটনা আমার নজরে পড়েছে, যেখানে সাংসদদের আচরণ সংসদের ঐতিহ্যের অনুরূপ নয়। বিশেষত বিরোধী দলনেতার থেকে প্রত্যাশা যে উনি নিজের আচরণ ঠিক করুন।’’
কেন, কী কারণে এই অভিযোগ, রাহুলের কোন ‘আচরণ’ নিয়ে আপত্তি, তা অবশ্য স্পিকার স্পষ্ট করেননি। তবে লোকসভার সচিবালয় সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা ওয়েনাড় থেকে জিতে লোকসভায় আসার পরে রাহুলকে সম্প্রতি একাধিকবার লোকসভায় বোনের আসনের পাশ দিয়ে আসার সময় আলতো করে তাঁর গাল টিপে দিতে দেখা গিয়েছে। তাতেই ‘সমস্যা’। স্পষ্ট ভাবে না বললেও সে দিকে ইঙ্গিত করে আজ স্পিকার বলেছেন, ‘‘এই সংসদে এর আগে একসঙ্গে পিতা-কন্যা, মা-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী একইসঙ্গে সদস্য হয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে আমার বিরোধী দলনেতার থেকে আশা, তিনি লোকসভার কাজের প্রক্রিয়ায় নিয়ম অনুযায়ী সংসদের মধ্যে আচরণ করবেন। যা সংসদের মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠার অনুরূপ হয়।’’ স্পিকারের এই অভিযোগের পরে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাহুল লোকসভায় প্রিয়ঙ্কার আসনের পাশে গিয়ে তাঁর গাল আলতো করে টিপে তাঁকে ডাকছেন। মালবীয়র কটাক্ষ, ‘রাহুল গান্ধীকে সংসদীয় আচরণের কথা স্পিকারকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এটা খুবই লজ্জাজনক’। একই ভিডিয়ো এক্সে পোস্ট করেছে বিজেপিও।
মঙ্গলবার বেলা ১টার কিছুক্ষণ আগে লোকসভার স্পিকার আচমকাই এই অভিযোগ তোলেন। তার পরেই বেলা ২টো পর্যন্ত লোকসভা মুলতুবি করে দেন। রাহুল কিছু বলার চেষ্টা করলেও তার আগেই স্পিকার লোকসভা থেকে বেরিয়ে যান। এই ঘটনার পরে সংসদের বাইরে রাহুল অভিযোগ করেন, ‘‘স্পিকার আমাকে বলতে না দিয়ে, নিজের কথা বলেই বেরিয়ে গেলেন। সংসদ মুলতুবি করে দিলেন। তার প্রয়োজন ছিল না। আমার বিরুদ্ধে কিছু ভিত্তিহীন কথা বললেন। বললাম, জবাব দিতে দিন। কিন্তু উনি বেরিয়ে গেলেন।’’
স্পিকারের এই অভিযোগের কিছুক্ষণের আগেই রাহুল লোকসভায় ঢুকেছিলেন। সে সময় বিভিন্ন সাংসদ নিজের বিষয় তুলছিলেন। রাহুল লোকসভায় ঢুকে গৌরব গগৈ, মণিকম টেগোরের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাঁরও একটি বিষয়ে বলার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই স্পিকার সভা মুলতুবি করে দেন। রাহুল বলেন, ‘‘পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংসদ চালানো হচ্ছে। প্রথা হল, বিরোধী দলনেতাকে বলতে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাকে বলতে দেওয়া হয় না। গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী, দু’পক্ষের জায়গা থাকে। কিন্তু এই সংসদে বিরোধীদের কোনও জায়গা নেই।’’ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুম্ভমেলা নিয়ে সংসদে বক্তৃতার পরে তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রাহুল।
এর পরে কে সি বেণুগোপাল, মণিকম টেগোরের নেতৃত্বে কংগ্রেসের ৭০ জন সাংসদ স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের অভিযোগ, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হলেও রাহুলকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। স্পিকার সেখানেও রাহুল ও অন্যান্য সাংসদের কিছু আচরণ সঠিক নয় বলে অভিযোগ তোলেন।
কংগ্রেস সাংসদদের মতে, আসলে স্পিকারের নিজের আচরণ নিয়েই আজ প্রশ্ন উঠেছে লোকসভায়। কারণ আজ লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হাজির ছিলেন। তিনি ঢোকা বা বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিজেপি সাংসদরা দাঁড়িয়ে পড়েন। ‘জয় শ্রী রাম’ বা ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে স্লোগান দেন। তাতে স্পিকারেরই অসম্মান হয়। কারণ সংসদে স্পিকার ঢোকার সময়ই সকলের উঠে দাঁড়ানোর প্রথা। আজও বিজেপি সাংসদরা মোদী বেরিয়ে যাওয়ার সময় উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। তাতে কংগ্রেস সাংসদরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, স্পিকার কেন নিজের পদের অসম্মান হতে দিচ্ছেন। উল্টো দিকে, রাহুল বলে দিয়েছেন, তিনি ঢোকার সময় যেন কংগ্রেস সাংসদরা উঠে না দাঁড়ান। এ সব প্রশ্ন উঠতেই স্পিকার ক্ষুব্ধ হয়ে রাহুলের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সাকেত গোখলের মন্তব্য, ‘‘লোকসভায় দাঁডি়য়ে এক জন মুসলিম সাংসদকে যখন সন্ত্রাসবাদী বলা হয়, তখন কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু ভাই-বোনের স্বাভাবিক সম্পর্ককে অসংসদীয় বলা হচ্ছে। এতেই বিজেপির মানসিকতা বোঝা যায়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)