পিকে নিজের দর বাড়াতে চাইছিলেন বলে দাবি কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের। ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে প্রশান্ত কিশোর তৃণমূল, টিআরএসের মতো অন্যান্য আঞ্চলিক দলের কাছে নিজের দর বাড়াতে চাইছিলেন বলে কংগ্রেসের একাধিক নেতার মত। মঙ্গলবার প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরে কংগ্রেস শিবিরের দাবি, রাহুল গান্ধী প্রথম থেকেই আন্দাজ করছিলেন, কিশোর শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে যোগ দেবেন না। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, কারণ কিশোর এক দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করতে চাইছিলেন। তিনি কংগ্রেস সভাপতির সচিব বা সহ-সভাপতি হতে চাইছিলেন। উল্টো দিকে তাঁর সংস্থা আইপ্যাক তৃণমূল, টিআরএসকে পরামর্শ দেওয়ার কাজও করছিল। কংগ্রেসে যোগ দিলে কিশোরের পক্ষে একই সঙ্গে গাছের খাওয়া ও তলার কুড়োনো সম্ভব ছিল না।
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘প্রশান্ত কিশোর টিআরএস, তৃণমূল কংগ্রেস, জগন রেড্ডিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। উনি সম্ভবত এই সব দলের পরামর্শদাতা হিসেবে নিজের ভূমিকা বজায় রাখতে চাইছিলেন। সোমবারই তাঁকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। দলে যোগ দিতে হলে ওঁকে আইপ্যাকের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ফয়সালা নিতে হত।’’ সনিয়া গান্ধী চিদম্বরমের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে কিশোরের পরামর্শ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। চিদম্বরমের কথা থেকেই স্পষ্ট, আইপ্যাকের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলে কিশোরের দাবি কংগ্রেস নেতৃত্বের বিশ্বাস হয়নি। তবে চিদম্বরম জানিয়েছেন, কিশোর তাঁদের সামনে যে পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ পেশ করেছিলেন, তা খুবই চিত্তাকর্ষক। তাঁর কিছু প্রস্তাব মেনে পদক্ষেপও করা হতে পারে।
উল্টো দিকে প্রশান্ত কিশোরের ঘনিষ্ঠ শিবির আজ দাবি করেছে, কংগ্রেস নেতৃত্ব দলের পুনরুত্থানে কতখানি ইচ্ছুক, তা নিয়েই ভোটকুশলীর মনে সংশয় ছিল। বিশেষত কিশোরের সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যেই রাহুল গান্ধী বিদেশ চলে যাওয়ায় তাঁর উদাসীন মনোভাব নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। অথচ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা কিশোরের কংগ্রেসে যোগ নিয়ে উৎসাহী ছিলেন।
কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন দাবি করছে, তাঁরা কিশোরের ফাঁদে পা দেননি। কিন্তু কংগ্রেসের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে, কিশোর না হয় কংগ্রেসে যোগ দিলেন না। তাতে কংগ্রেসের সমস্যা কী ভাবে মিটবে? কংগ্রেস নেতৃত্বে নিষ্ক্রিয়তার সমাধান হবে কী ভাবে? কিশোরের আগে থেকেই জি-২৩-র বিক্ষুব্ধ নেতারা তা নিয়ে সরব। কিন্তু এখনও সমাধান অধরা।
চিদম্বরম আজ মেনে নিয়েছেন, নেতৃত্বের সমস্যা রয়েছে। তাঁর দাবি, অগস্টে সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু তত দিন পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকলে যে গুজরাত, হিমাচলের নির্বাচনের জন্য অনেক দেরি হয়ে যাবে, তা-ও মানছেন চিদম্বরম। দিগ্বিজয় সিংহও বলেছেন, উপদেষ্টা থাকুন বা না থাকুন, কংগ্রেসকেই নড়ে বসে নিজের সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাঁর আশা, আগামী মাসে চিন্তন শিবিরের পরে নতুন কংগ্রেসের উদয় হবে।
কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা অবশ্য এতখানি আশাবাদী নন। তাঁদের অভিযোগ, রাহুল-ঘনিষ্ঠ শিবিরের নেতারাই কিশোরের কংগ্রেসে যোগ আটকেছেন। না হলে তাঁদের গান্ধী পরিবারের তোষামোদ করে দরবারি হয়ে থাকায় ইতি পড়ত। দিল্লির বিক্ষুব্ধ নেতা সন্দীপ দীক্ষিতের বক্তব্য, হাইকমান্ড কিশোরের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রমাণ করে দিয়েছে, নিজেদের নির্বাচনে লড়াইয়ের ক্ষমতা নেই। উল্টো দিকে গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন এ কে অ্যান্টনির মতে, কংগ্রেসকে ছাড়া কেন্দ্রে পালাবদল সম্ভব নয়। গান্ধী পরিবারকে ছাড়া কংগ্রেস সম্ভব নয়।
আপাতত কংগ্রেস-কিশোর সম্পর্কে ইতি পড়লেও বিক্ষুব্ধ নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের মত, উপদেষ্টা হিসেবে ভবিষ্যতে কিশোর কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতেই পারেন। এমনকি বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয়ের কাজেও তাঁকে দেখা যেতে পারে। পৃথ্বীরাজের বক্তব্য, আহমেদ পটেলের মৃত্যুর পরে অন্যান্য দলের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করার মতো কংগ্রেসে কেউ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy