রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী জাতীয়তাবাদী ভাবনার মানুষ নন, দেশের প্রতি তাঁর কোনও ভালবাসা নেই— নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ওয়েনাডে দাঁড়িয়ে আজ এই ভাষাতেই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। জানিয়ে দিলেন, ৫০ কিংবা ১০০ বার তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হলেও ওয়েনাডের মানুষের সঙ্গে বন্ধন ঘোচানো যাবে না। বিজেপি তাঁকে যতই বিচ্ছিন্ন করতে চাইবে, ততবারই দেশের মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠবে।
সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পর আজই প্রথমবার ওয়েনাডে এলেন রাহুল। সকালেই তিনি পৌঁছন তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরে। তামিলনাড়ু ও কেরলে রাহুলের দু’দিনের সফরের শুরুতেই সামনে এসেছে একটি ভিডিয়ো। যেখানে দেখা গিয়েছে, উটির কাছে একটি গ্রামে টোডা জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষের সঙ্গে নাচছেন রাহুল। তিনি পরেছেন টোডাদেরই পোশাক। ভারত জোড়ো যাত্রার প্রথম পর্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে পথ চলতে দেখা গিয়েছে রাহুলকে। দ্বিতীয় পর্বের ভারত জোড়ো যাত্রার প্রস্তুতি চলছে যখন, তার আগেই রাহুলকে আজ দেখা গেল জনজাতি মানুষদের কাছাকাছি পৌঁছে তাঁদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে। তামিলনাড়ু থেকে বিকেলেই কেরলের ওয়েনাডে পৌঁছন রাহুল।
সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রথম জনসভাতেই মোদী তথা বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন রাহুল। ভোটারদের উদ্দেশে রাহুলকে বলতে শোনা যায়— ওয়েনাড আমার পরিবার। বিজেপি আর এরএসএস পরিবারের মর্ম বোঝে না, তাই ওরা আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু যতই দূরে সরাতে চাইবে, আমরা ততই কাছাকাছি আসব।’’ কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নিলেও ওয়েনাডের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচিয়ে দেওয়া যাবে না। আপনারা আমাকে ৫০ কিংবা ১০০ বারও সাংসদ পদ থেকে সরালে এখানকার মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।’’
ওয়েনাডে দাঁড়িয়ে মণিপুরের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মোদী তথা বিজেপিকে আজ কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন রাহুল। অভিযোগ করেন, বিজেপি মণিপুরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই রাজ্যে হাজারো মহিলার ধর্ষিতা হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বিজেপির প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণেই। এরপর মোদীকে নিশানা করে রাহুল বলেন, ‘‘আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, আর আপনিই হাসছেন? ভারত মাতার হত্যা নিয়ে দু’মিনিট মাত্র কথা বললেন। কোন সাহসে এটা করলেন? ভারতের ভাবনাকে কী ভাবে অসম্মান করতে পারলেন? গত ৪ মাস ধরে আপনি কি করছিলেন? মণিপুরে যাননি কেন? কেন সেখানে হিংসা আটকানোর চেষ্টা করলেন না?’’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে নিজেই এর জবাব দিয়েছেন রাহুল। মোদীর উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এসবের কারণ হল, আপনি জাতীয়তাবাদী নন। ভারতের ভাবনার বিরোধিতা করেন যিনি, তিনি জাতীয়তাবাদী হতে পারেন না। তিনি ভারতকে ভালবাসেন না।’’
রাহুলের অভিযোগ, পরিবার কী ভাবে চলে, তা বোঝার ক্ষমতা নেই বিজেপি-আরএসএসের। তারা শুধু পরিবার ভাঙতে জানে। মণিপুরে এটাই করেছে তারা। এরপরেই মণিপুরকে ফের গড়ে তোলার কথা শোনা যায় রাহুলের গলায়। বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যদি দু’মাস ধরে আগুন জ্বালিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা পাঁচ বছর ধরে মণিপুরকে আবার গড়ে তুলব।’’
মণিপুর নিয়ে গতকাল রাহুল যে সব অভিযোগ করেছিলেন, আজ তার জবাব দিয়েছে বিজেপি। দলের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ভারত মাতাকে হত্যা করা হয়েছে। আসলে, মণিপুরে দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে রাহুলের মন্তব্য উস্কানিমূলক। উনি বলেছেন, ভারতীয় সেনা দু’দিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত। মনে হয়, উনি চাইছেন, ভারতের সেনা ভারতীয়দেরই গুলি করুক। রাহুল গান্ধীর ভাবনা অগণতান্ত্রিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy