সাংগঠনিক দুর্বলতার জেরে একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে হারের পরে আজ রাহুল গান্ধী দলের সাধারণ সম্পাদক, রাজ্যের পর্যবেক্ষকদের তিন মাস অন্তর কাজের খতিয়ান দিতে বললেন। আজ এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের নির্বাচনে খারাপ ফল হলে ও সেখানে দলের সংগঠনের দুর্বলতা থাকলে তার দায় সাধারণ সম্পাদক, পর্যবেক্ষকদের উপরেই বর্তাবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল বলেছেন, প্রতিবার হারের পরে শুধু তার কারণ নিয়ে চর্চা না করে সংগঠন গড়ে তোলার জন্য ‘আউট অব বক্স’ চিন্তাভাবনা করতে হবে। জনসংযোগ আরও বাড়াতে হবে। রাহুলের যুক্তি, চলতি বছরে বিহার ছাড়া আর কোনও বিধানসভা নির্বাচন নেই। এই সময়টা গোটা দল সংগঠনকে মজবুত করার দিকে নজর দিক। প্রতি তিন মাস অন্তর দলীয় নেতৃত্বকে নিজেদের কাজের রিপোর্ট দিতে হবে।
মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, সর্বশেষে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে হার থেকে শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব এখন সাংগঠনিক দুর্বলতার কুফল টের পাচ্ছে। আগেই কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০২৫ সালকে ‘সাংগঠনিক সৃজন’-এর বছর হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে টানা সাত ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। বিজেপির সঙ্গে এঁটে উঠতে কী ভাবে জেলা কংগ্রেস কমিটিগুলিকে চাঙ্গা করা যায়, তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। গোটা দেশে কংগ্রেসের প্রায় আটশো জেলা কংগ্রেস কমিটি রয়েছে।
খড়্গে বৈঠকের গোড়াতেই বলেন, রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস দফতর থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠন গড়ে তুলে সাধারণ সম্পাদক, পর্যবেক্ষকদের বুথ স্তরে গিয়ে কংগ্রেসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-সহ অন্যান্য গণ সংগঠনকে সংগঠন গড়ে তোলার কাজে যুক্ত করতে হবে। খড়্গের যুক্তি, ‘‘কংগ্রেসের মতাদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ ব্যক্তিদেরই এগিয়ে আনতে হবে। যাতে বিরূপ পরিস্থিতিতেও তাঁরা দলের সঙ্গে থাকেন। অনেক সময় দ্রুত ফায়দার কথা ভেবে কিছু লোককে দলে টানা হয়। কিন্তু মতাদর্শগত ভাবে দুর্বলতা থাকলে বিপদের সময় পালিয়ে যান।’’
সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা বলেন, জনসংযোগ বাড়াতে কংগ্রেস নেতাদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে প্রিয়ঙ্কা বলেন, তিনি ছোটবেলায় ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে রামলীলার মতো অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখতেন, ঠাকুমা কী ভাবে সেখানে সহজে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করতেন। বৈঠকের পরে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘সংবিধান রক্ষায় বি আর অম্বেডকরের জন্মস্থান মহূতে জয় বাপু, জয় ভীম, জয় সংবিধান জনসভা হয়েছে। এ বার প্রতিটি রাজ্য, জেলা ও ব্লকে সংবিধান বাঁচাও রাষ্ট্রীয় যাত্রা হবে। তার পরে এপ্রিলে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতে এআইসিসি-র অধিবেশন বসবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)