মোদী সরকারের চিন নীতি নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে এর আগে বার বার সরব হয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। আজ লোকসভায় ফের চিন প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এক দিকে সেনারা মৃত্যুবরণ করছেন, অন্য দিকে ভারতীয় কর্তা চিনা আমলার সঙ্গে কেক কাটছেন। একই সঙ্গে কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীও আজ তাঁর বক্তৃতায় চিন প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেছেন, মোদী সরকার মিথ্যাচার করছে।
অন্য দিকে, লোকসভায় রাহুলের বক্তব্যের ‘পাল্টা’ দিয়েছেন বিজেপি-র প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ভারত যখন চিনের হাতে ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়, তখন কে সরকারে ছিল? তারা বলেছে, ‘হিন্দি চিনি ভাই ভাই’। কিন্তু পিছন থেকে ছুরি মেরেছে চিন।” এর পর রাহুলকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘ডোকলাম কাণ্ডের সময় কোন নেতারা চিনা কর্তাদের সঙ্গে চিনা স্যুপ খেতে ব্যস্ত ছিলেন? সেই নেতারা আমাদের সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়াননি। রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন কেন চিনা কর্তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তার জবাব দেওয়া হোক।’’
রাহুল গান্ধী আজ বলেন, “ইন্দিরা গান্ধীজিকে এক জন প্রশ্ন করেছিল, বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে আপনি বামে না ডান দিকে ঝুঁকে? জবাবে তিনি বলেন, ডান বা বাম নয়। আমি ভারতীয়, আমি সোজা দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু বিজেপি এবং আরএসএস-এর দর্শন আলাদা। তাদের যখন এই প্রশ্ন করা হয়, তারা বলে, যে বিদেশিই ভারতে আসে, আমরা তার সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে থাকি।” এখানেই না থেমে পূর্ব লাদাখ সংক্রান্ত ভারত-চিন সীমান্ত সংঘাতের প্রসঙ্গ তুলে রাহুল বলেন, “২০২০ সালের সংঘাতে ২০ জন সেনা প্রাণ হারালেন। আর আমি বিস্মিত হয়ে দেখছি, আমাদের বিদেশসচিব চিনা দূতের সঙ্গে কেক কাটছেন। চিন আমাদের ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড নিয়ে রেখে দিয়েছে। এটা সবাই জানে। আমরা ওই জমি ফেরত চাই।”
সনিয়া তাঁর সকালের বক্তৃতায় বলেন, ‘‘বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিয়ে আমরা সবিস্তার আলোচনা চেয়েছিলাম সংসদে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তা করতে দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে চিন যে ভাবে আমাদের কোণঠাসা করে রেখেছে, তা নিয়ে সংসদের দু’টি কক্ষেই আলোচনার দাবি করি। ২০২০ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রী চিনকে ক্লিনচিট দেন, যা ভয়ংকর। তাঁর বক্তব্যের ফলে আমাদের দরকষাকষির জায়গাটা লঘু হয়ে যায়। এর মধ্যে চিন থেকে আমদানি বেড়েই চলেছে। ফলে দেশের ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলি ধ্বংস হচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থান কমছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)