ইঙ্গিত ছিল গত কিছু দিন ধরেই। অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পরে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি উপদ্রব শেষ হয়ে গিয়েছে বলে নরেন্দ্র মোদী সরকার বিভিন্ন মঞ্চে দাবি করলেও, গত এক বছর ধরে ছোট মাপের জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে চলেছিল উপত্যকাতেই। সূত্রের মতে, সেই ছোট ইঙ্গিতগুলিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ায় আজ পহেলগামে এত বড় মাপের হামলা হয়েছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হামলার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দ্রুত শ্রীনগর পৌঁছে গেলেও, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন এমন হামলা হতে পারে সেই গোয়েন্দা তথ্য কেন ছিল না রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের হাতে। বিরোধীদের মতে, কাশ্মীর শান্ত হয়ে পড়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছিল তা যে ঠিক নয়, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ধারাবাহিক ভাবে চলছে। কেবল পর্যটক যাওয়া মানেই সেই এলাকা যে শান্ত হয়ে পড়েছে এমন ভাবা উচিত নয় সরকারের। অবিলম্বে কেন্দ্রকে কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার দাবি তুলেছেন বিরোধীরা, অন্য দিকে ঘরোয়া ভাবে শাসক শিবিরের বক্তব্য, ওমর সরকার আসার পরেই ওই ঘটনা ঘটেছে। জঙ্গিদের প্রতি ওমর সরকারের নরম মনোভাবের কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের একাংশের।
জঙ্গি হামলার নিন্দা করে গোটা দেশকে এক থাকার বার্তা দিয়েও কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর কথায়, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরে সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে, এই ধাঁচের ফাঁকা দাবি না করে সরকারের উচিত ওই ঘটনার দায় নিয়ে পদক্ষেপ করা যাতে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে।’’ সিপিএম নেতৃত্ব সমাজমাধ্যম এক্সে মন্তব্য করেছেন, ‘কাশ্মীরে শান্তি ফিরে এসেছে বলে মোদী-শাহের দাবি যে কতটা অসাড় তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরে যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শান্তি ফিরে আসে তা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে ভারত সরকারকে।’
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কথায়, ‘‘যারা ওই ঘটনার পিছনে রয়েছেন তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।’’ সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব থেকে ফিরলে পরবর্তী কৌশল ঠিক করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠক ডাকা হবে।
ঘটনাচক্রে, আজ যখন ওই হামলার ঘটনা ঘটে, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরবে পা দিয়েছেন। অন্য দিকে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স তখন জয়পুরে। সন্ত্রাস দমনে ভারত ও আমেরিকা সহযোগিতা করে চলে। পহেলগাঁওয়ের ঘটনাকে জঘন্য আক্রমণ বলে সমাজমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন ভ্যান্স।
অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী সৌদিতে পৌঁছেই এই ঘটনা জেনে অমিত শাহকে অবিলম্বে শ্রীনগর পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দেন। জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনে ওমর আবদুল্লার দল ন্যাশনাল কনফারেন্স জিতে আসায় স্থানীয় পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাঁদের উপরে এসে পড়েছে। ফলে ওই হামলা প্রসঙ্গে মেপে পা ফেলার কৌশল নেন ওমর। তাঁর কথায়, ‘‘দায় কার তা নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন। আমাদের রাজ্যে আসা পর্যটকদের উপর এ ধরনের হামলা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা ওই হামলা চালিয়েছে তাঁরা পশু, অমানুষ ও ঘৃণ্য।’’
সামনেই অমরনাথ যাত্রা। এত দিন স্থানীয়দের আয়ের কথা মাথায় রেখে পর্যটকদের উপর হামলা চালাতে দেখা যেত না জঙ্গিদের। স্বরাষ্ট্র সূত্রের মতে, আজকের হামলা থেকে স্পষ্ট জঙ্গিরা মরিয়া। তাই ‘সহজই নিশানা’ পর্যটকদের বেছে নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় আগামী দিনে উপত্যকায় পর্যটকদের আগমনে প্রভাব পড়তে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার নিন্দা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গি হামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এই সরকারই দাবি করেছিল, নোটবন্দির ফলে কালো টাকা ও সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। ৩৭০ ধারা অবলুপ্ত হলে উপত্যকায় শান্তি ফিরবে। এই হামলা সরকারের প্রতিশ্রুতি, নীতি ও প্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিল।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এই ঘটনা নিন্দার অতীত।’’ আরএসএসের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘এটা দেশের সংহতির উপরে হামলা। সব রাজনৈতিক দলের উচিত মতভেদ ভুলে এর নিন্দা করা।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)