সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
তফসিলি জাতি ও জনজাতি সমাজের মধ্যে যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল তাঁদের চিহ্নিত করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা বাতিল করা হোক বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ কোর্টের সেই সিদ্ধান্ত যাতে কার্যকর করা না হয়, সেই দাবি জানিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির তফসিলি জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায়ের সাংসদেরা। প্রতিনিধি দলের দাবি, শীর্ষ আদালতের রায় বাস্তবায়িত হবে না বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও আলোচনা হয়। এ নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, “সংবিধানে তফসিলি জাতি ও জনজাতির জন্য যে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, তা বজায় থাকবে। এতে কোনও পরিবর্তন হবে না।”
সম্প্রতি শীর্ষ আদালত একটি মামলার রায়ে জানায়, তফসিলি জাতি ও জনজাতি সমাজের মধ্যে যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল তাঁদের সংরক্ষণ বাতিল করে দেওয়া হোক। পরিবর্তে তফসিলি জাতি ও জনজাতি সমাজে আর্থিক সিঁড়িতে যাঁরা একেবারে নীচে রয়েছেন, সেই অতি পিছিয়ে পড়া অংশকে চিহ্নিত করে তাঁদের বাড়তি সুবিধে দেওয়ার পক্ষে রায় দেয় শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়-সহ সাত সদস্যের বেঞ্চের মধ্যে ছ’জন ‘কোটার মধ্যে কোটা’-র পক্ষে রায় দেন। যদিও আজকের আলোচনায় কোটার মধ্যে কোটার বিষয়টি উল্লেখ হয়নি বলে দাবি করেছেন বৈঠকে উপস্থিত রাজ্যের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু।
বৈঠকে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের চিহ্নিত করে তাঁদের সংরক্ষণের সুবিধা বাতিল করার যে রায় সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, তা যাতে কার্যকর করা না হয়, সে জন্য দাবি জানিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদেরা। সূত্রের মতে, বিজেপি সাংসদেরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, কাউকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হলে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে দেশ জুড়ে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, লোকসভায় বিজেপি তৃতীয় বার জিতে এসে সংবিধান পরিবর্তন করে সংরক্ষণের সুবিধা কেড়ে নিতে পারে বলে ভোটে প্রচার চালিয়ে বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। এখন তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের একাংশের সংরক্ষণের সুবিধা কেড়ে নিলে বিরোধীদের প্রচার যে সত্য ছিল, তা প্রতিষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে এ বছর মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবি আটকানো কঠিন হয়ে পড়বে। তা ছাড়া তফসিলি জাতি ও জনজাতির মধ্যে কারা পিছিয়ে রয়েছে, তা স্থির করতে হলে আগে গোটা দেশ জুড়ে আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা করতে হবে। যাতে নীতিগত ভাবে রাজি নয় বিজেপি। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের শেষে বিজেপি সাংসদ ফগন সিংহ কুলস্থ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের সংরক্ষণের সুবিধা বাতিল করার রায় যাতে কোনও ভাবেই রূপায়ণ করা না হয়, সে জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে না।” পরে বিষয়টি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “অম্বেডকর সংবিধানে যে সংরক্ষণের কথা বলেছেন, সেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু থাকবে। সেখান থেকে সরে আসা হবে না বলেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
তবে বিজেপি ওই দাবি করলেও, এ বিষয়ে ভিন্ন পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন এনডিএ শরিক হাম পার্টির সাংসদ জিতনরাম মাঝি। ঘনিষ্ঠ শিবিরে তিনি জানিয়েছেন, সংরক্ষণের যাঁরা সুবিধে পান তাঁদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য যে রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিহারে মাঝি, পাসোয়ান সমাজ এখনও দারিদ্রসীমার অনেক নীচে পড়ে রয়েছে। তাঁদের উন্নয়নের জন্য বাড়তি নজর প্রয়োজন। সূত্রের মতে, জেডিইউ নেতৃত্ব কোটার মধ্যে কোটা দেওয়ার পক্ষপাতী। সেই কারণেই নীতীশ কুমার নিজের রাজ্যে জাতিগত সমীক্ষা চালিয়েছিলেন।
প্রশ্ন হল, বড় শরিক বিজেপির যেখানে আপত্তি রয়েছে সেখানে ওই নীতি কার্যকরের প্রশ্নে কতটা কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন নীতীশ বা জিতনরাম মাঝিরা। আগামী দিনে এই ‘কোটার মধ্যে কোটা’ তথা জাতিগত সমীক্ষার প্রশ্নে এনডিএ শিবিরে আড়াআড়ি ভাবে ফাটল ধরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনীতির অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy