প্রায় দু’বছর ধরে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে মণিপুর উত্তপ্ত। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনে যেতে পারলেও মণিপুরে কেন যেতে পারেন না, লোকসভায় সেই প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।
রাষ্ট্রপতি শাসন চলায় মণিপুরের অতিরিক্ত বাজেট-বরাদ্দ এখন সংসদে পাশ করাতে হবে। আজ এ নিয়ে লোকসভায় প্রথম বক্তা ছিলেন কংগ্রেসের গৌরব গগৈ। মোদী এখন মরিশাসে। গৌরব কটাক্ষ করেন, ‘‘দেশে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপিত হলেই গায়েব হয়ে যান প্রধানমন্ত্রী।’’ ইনার মণিপুরের কংগ্রেস সাংসদ এ বিমল আকোইজাম বলেন, মোদী ইউক্রেনে গিয়ে শান্তির কথা বলতে পারেন। কিন্তু মণিপুরে গিয়ে বলতে পারেন না। মণিপুরে পরবর্তী পদক্ষেপ করার আগে রাজ্যবাসীর কাছে তাঁকে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে।’’
গৌরবের বক্তব্যের মধ্যেই হস্তক্ষেপ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ে বিরোধী শিবিরের ওয়েলে নামার জন্য কি গৌরব ক্ষমা চাইবেন?’’ মোদীর মণিপুর না-যাওয়া প্রসঙ্গে নির্মলা বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গিয়ে তিন দিন সেখানে ছিলেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই দীর্ঘদিন মণিপুরে ছিলেন।... ১৯৯৩ সালে মণিপুরে হিংসা চলাকালীন কংগ্রেসের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কি সেখানে গিয়েছিলেন? ১৯৯৭ সালের হিংসার সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরাল কি সেখানে গিয়েছিলেন? ২০১১ সালে কেন্দ্রে ও রাজ্যে যখন কংগ্রেসের সরকার, তখন মণিপুরে ১২০ দিন ধরে অর্থনৈতিক অবরোধ হয়েছিল। কংগ্রেসের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ নিজেই এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ২০১০— এই ১৫ বছরে অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে ২৮২৮ কোটি টাকার লোকসান হয়েছিল।’’
নির্মলার দাবি, কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে মণিপুরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা প্রান্তিক এলাকায় ঘটেছে। কিন্তু ৮ মার্চের হিংসার ঘটনা বাদ দিলে মৃত্যু, হানাহানি কমে আসছে। প্রসঙ্গত, ওই অশান্তির জেরে কুকিদের বন্ধের ফলে আজও কুকি-জ়ো অঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। কুকি যৌথ মঞ্চ ‘কোটু’ গত কাল এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক করলেও সমাধান বেরোয়নি। আজও ফের বৈঠক হয়েছে। নির্মলা জানান, মণিপুরে ২৮৬ কোম্পানি আধাসেনা সক্রিয় রয়েছে। ১৩৭ কলাম সেনা ও আসাম রাইফেলের বাহিনী রয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলছে। জাতীয় সড়কে পণ্য পরিবহণ, এমনকি চপার পরিষেবাও শুরু হয়েছে। আজ সেনাপতি জেলায় বিএসএফের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ৩ জওয়ান মারা যান।
লোকসভায় আউটার মণিপুরের সাংসদ আলফ্রেড কে এস আর্থার বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বাজেটের টাকা মণিপুরের পাহাড়ি এলাকা আর ইম্ফল উপত্যকার মধ্যে কী ভাবে ভাগাভাগি হবে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা বাজেটে নেই। ফাঁস হওয়া অডিয়ো টেপে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের বিরুদ্ধে হিংসা শুরুর অভিযোগ উঠলেও তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, প্রশ্ন তোলেন তিনি। নির্মলা যদিও জানান, ওই বাঁটোয়ারার কথা বাজেটে বলা রয়েছে। ঘরছাড়াদের ত্রাণ শিবিরের জন্য ৪০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বাজেটে।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত আগে সংসদে পাশ না করিয়ে কেন বাজেট নিয়ে আলোচনা হল, সেই প্রশ্ন তোলেন আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রন-সহ অনেকেই। সরকার জানিয়েছে, আগামিকাল ওই বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)