ধর্না: সোনভদ্রে যাওয়ার পথে আটকানো হয় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে। প্রতিবাদে রাস্তাতেই বসে পড়েন তিনি। শুক্রবার। পিটিআই
জরুরি অবস্থার পরে ভোটে হেরে যান ইন্দিরা গাঁধী। সেই হারের পাঁচ মাসের মধ্যে এক দিন মধ্যরাতে তিনি পৌঁছে যান বিহারের বেলচী গ্রামে। তা-ও হাতির পিঠে চেপে! সেখানে উচ্চবর্ণের হাতে খুন হন ১১ জন দলিত। অনেকেই বলেন, তিন বছরের মাথায় ইন্দিরার ক্ষমতায় ফেরার পিছনে সেই মধ্যরাতের যাত্রা অনেকটাই কাজে লেগেছিল।
বিয়াল্লিশ বছর পরে সে পথই নিলেন ইন্দিরার নাতনি, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। যাঁর মধ্যে অনেকেই ইন্দিরার ছায়া দেখেন। লোকসভায় হারের পরে রাহুল গাঁধীর ইস্তফায় ছন্নছাড়া অবস্থা কংগ্রেসের। এমন এক পরিস্থিতিতে বড় ঝাঁকুনি দিলেন প্রিয়ঙ্কা।
দু’দিন আগে উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রের এক গ্রামে জমি বিবাদে দশ জন আদিবাসীকে গুলি করে খুন করা হয়। বারাণসীর হাসপাতালে এখনও অনেক আহতের চিকিৎসা হচ্ছে। গত কাল কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সোনভদ্রে পাঠিয়ে প্রিয়ঙ্কা সিদ্ধান্ত নেন, আজ নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। সকালে বারাণসী বিমানবন্দরে নেমে প্রথমে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে সড়ক পথে রওনা দেন সোনভদ্রের উদ্দেশে। মির্জাপুর পৌঁছতেই যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ তাঁকে আটকায়।
প্রথম সংঘাত সেখানেই। গাড়ি থেকে নেমে প্রিয়ঙ্কা পুলিশকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আইনের কোন ধারায় আটকানো হচ্ছে?’’ পুলিশ জানায়, সোনভদ্রে ১৪৪ ধারা জারি। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘বেশ, তা হলে তিন জনকে নিয়েই যাব। কোনও আইন ভাঙবে না।’’ পুলিশ তাতেও অনুমতি দিল না। প্রিয়ঙ্কার প্রশ্ন, ‘‘আমাকে আটকাচ্ছেন, কোনও লিখিত নির্দেশ আছে?’’ পুলিশ বলে, ‘‘উপর থেকে ফোন এসেছে।’’ কার ফোন? জবাব নেই!
রাস্তাতেই ধর্নায় বসে পড়লেন প্রিয়ঙ্কা।
বেলা গড়াল। নাছোড় প্রিয়ঙ্কাকে শেষ পর্যন্ত গাড়িতে তুলে পুলিশ নিয়ে গেল ‘অজ্ঞাতবাসে’। গাড়িতে বসে প্রিয়ঙ্কা বললেন, ‘‘আমি জানি না, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!’’ জানা গেল, প্রিয়ঙ্কাকে ‘আটক’ করে চুনার দুর্গের অতিথিশালায় রাখা হয়েছে। কংগ্রেস বলল, আটক নয়, গ্রেফতার করা হয়েছে। টুইটারে রাহুল বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কাকে অনৈতিক গ্রেফতার উদ্বেগের। ১০ জন আদিবাসী কৃষককে নির্মম ভাবে গুলি করে মারা হয়েছে। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া ক্ষমতার স্বেচ্ছাচারিতা।’’
ঝাঁকুনি খাওয়া কংগ্রেস নেতারা দিল্লিতে বৈঠক বসলেন। সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা কে সি বেণুগোপাল সব রাজ্য কংগ্রেসকে অবিলম্বে পথে নামার নির্দেশ দিলেন।
নড়ে বসে বিজেপি নেতৃত্ব বার্তা পাঠালেন যোগীর কাছে: ‘‘সামলান।’’ যোগী পাল্টা কংগ্রেসকে দুষে বললেন, এই জমির বিবাদ শুরু ১৯৫৫ সালে। একটি কমিটি এ নিয়ে তদন্ত করবে। তিনি নিজেও নজর রাখছেন। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
সন্ধ্যায় প্রিয়ঙ্কাকে ৫০ হাজার টাকা মুচলেকার বিনিময়ে মুক্তির প্রস্তাব দেয় যোগী সরকার। গেস্ট হাউসের আলো, জল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু অনড় প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘এখানেই দশ দিন থাকতে হলে থাকব। কিন্তু নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করে একচুলও নড়ব না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আজ হাসপাতালে একটি ১৭ বছরের বাচ্চাকে দেখলাম। পেটে গুলি লেগেছে। আমার সন্তানের বয়সি। তার মা-ও পাশের বেডে শুয়ে। রাজ্যের আইন কোথায়?’’
আগামিকাল তফসিলি জনজাতি জাতীয় কমিশনের চেয়ারম্যান নন্দ কুমার সাঁই ছুটছেন সোনভদ্রে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ‘‘এটাই তো দরকার ছিল গত দেড় মাস ধরে। রাহুল যেটি করলেন না, তাঁর বোন করে দেখাচ্ছেন। গোটা দলকে জাগিয়ে দিয়েছেন। রাহুল যখন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, প্রিয়ঙ্কাকেই দলের সভাপতি করা হোক।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy